তাপস দাসঃ কামারহাটি বিধানসভা কেন্দ্রটি দমদম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত। রাজ্য রাজনীতির ছবির সঙ্গে এ বিধানসভা তাল মিলিয়েই চলেছে। ১৯৭৭ সাল থেকে ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত এখানে কখনও হারেনি সিপিএম, ২০১১ সালে সারা রাজ্যের মতই এখানেও পতন ঘটেছিল বাম দুর্গের। রাধিকারঞ্জন ব্যানার্জি, শান্তি ঘটকের মত দুঁদে নেতারা ছিলেন এই বাম দুর্গের বিধায়ক। ২০০১ ও ২০০৬ সালে এখানে বিধায়ক হন মানস মুখার্জি। ২০১১ সালে তিনি হেরে যান। ২০১৬ সালে ফের স্বমহিমায় প্রত্যাবর্তন ঘটে মানস মুখার্জির। এবার অবশ্য মানস নয়, সংযুক্ত মোর্চার তরফে সিপিএমের প্রার্থী সায়নদীপ মিত্র।
এগারোর নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মদন মিত্র। তিনি মানস মুখার্জিকে হারিয়েছিলেন প্রায় ২৫ হাজার ভোটে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মানস মুখার্জি হারিয়ে দেন মদন মিত্রকে, ব্যবধান ছিল মাত্র ৪ হাজারের সামান্য বেশি ভোট। মনে রাখতে হবে, ততদিনে গায়ে সারদা ছিটে লেগে গিয়েছে মদন মিত্রের। ২০২১ সালের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস মদনে ভরসা রেখেছে। বাকি সব দলই প্রার্থী বদল করেছে। মানস মুখার্জির জায়গায় সায়নদীপকে প্রার্থী করা হয়েছে যেমন বাম-কংগ্রেস জোটের তরফে, তেমনই বিজেপি এবার এখানে দাঁড় করিয়েছে তাদের রাজ্য স্তরের নেতা রাজু ব্যানার্জিকে।
২০১১ সালের নির্বাচনে কামারহাটি বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী শিখা সরকার পেয়েছিলেন ১৬৯৯ ভোট। ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী ছিলেন কৃশানু মিত্র। তাঁর প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৭৯৭। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজেপির শমীক ভট্টাচার্য ৪৫ হাজার ৬৩১ ভোট পান। তৃণমূল কংগ্রেসের সৌগত রায় ৬৩ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিলেন। সিপিএমের নেপালদেব ভট্টাচার্য পেয়েছিলেন ২১ হাজারের বেশি ভোট।
এবারের ভোটে মদন-রাজু প্রতিদ্বন্দ্বিতা চরমে বলে মনে হলেও, এখানে বাম ভোট এখনও ফ্যাক্টর। সায়নদীপের হয়ে প্রচার করেছেন অধীর চৌধুরীর মত পোড় খাওয়া কংগ্রেস নেতা। মদন বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন, বাম সমর্থকরা যদি তাঁকে ভোট দেন, তাহলে তিনি বামেদের মত উন্নয়ন করবেন এই এলাকায়। রাজু ব্যানার্জি আবার দাবি করেছেন, তিনি এই কেন্দ্রে জিতবেন তো বটেই, রাজ্যে ২০০-র বেশি আসন নিয়ে সরকার গড়বে বিজেপি। ১৭ এপ্রিল, পঞ্চম দফায় নিজেদের রায় জানাবেন কামারহাটি কেন্দ্রের বাসিন্দারা। ২ মে জানা যাবে কামারহাটিতে কে হাসল শেষ হাসি।