করোনা টিকাকরণ নিয়ে ধরা পড়েছে দুর্নীতি
এবার বন্ধ করে দেওয়া হল বারাসাতের তিনটি শিবিরও
ছিল না সরকারি অনুমোদন
এই নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বিজেপি সাংসদ
কলকাতায় ভূয়ো আইএএস অফিসার দেবাঞ্জন দেব ধরা পড়ায় সামনে উঠে এসেছে করোনা টিকাকরণ শিবির নিয়ে চলা দুর্নীতি, অবৈধ কারবারের ঘটনা। বিজেপির পক্ষ থেকে এই ঘটনার বাইরেও আরও বড় টিকা-দুর্নীতি চলছেবলে দাবি করা হয়েছে। এই অবস্থায় শুক্রবার বারাসাত শহরের বুকে, তিনটি ক্লাবে সরকারি অনুমোদন ছাড়া চলা টিকাকরণ শিবির বন্ধ করে দেওয়া হল। বারাসাতেই এক কর্মসূচিতে অংশ নিতে এসে ভ্যাকসিন নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুললেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর।
এতদিন, টিকাকরণ ক্যাম্প নিয়ে বলতে গেলে কোনও হেলদোল ছিল না প্রশাসনের। রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন ক্লাব, আবাসনকমিটির পক্ষ থেকে শিবির গড়ে চলছিল টিকাকরণ। দেবাঞ্জন কাণ্ড সামনে আসতেই নড়ে চড়ে বসেছে প্রশাসন। এতদিন বারাসাতেও এই ধরণের বেশ কয়েকটি শিবির চলছিল। দেবাঞ্জন কাণ্ডের পর অভিযোগ ওঠে, এই শিবিরগুলির মধ্যে অনেকগুলি ক্ষেত্রেই ভ্যাকসিনেসন ক্যাম্প করার জন্য সরকারি অনুমোদন নেই। এদিন এই বিষয়টি পুরসভার নজরে আসতেই অগ্রদূত, চড়কডাঙ্গা যুবগোষ্ঠী,ব্রতী সংঘ - এই তিনটি ক্লাবে এমন টিকাকরণ শিবির আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হল।
বারাসাত পুরসভার মুখ্য প্রশাসক সুনীল মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনটি ক্লাবের কাছেই জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা প্রশাসনের কোনও অনুমোদন ছিল না। শুক্রবার তিনি নিজেই বিষয়টি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে ক্যাম্পগুলি বন্ধ করার নির্দেশ দেন। তিনি জানান, জেলার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিষয়ে মুখ্য জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথাই শেষ কথা। তাই, ক্লাবগুলিকে তাঁর অনুমোদন নিয়ে তবেই ফের এই ধরণের শিবির আয়োজন করতেবলা হয়েছে। সুনীল মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, পুরসভা হিসাবে তাঁদের এই বিষয়ে একটা দায়িত্ব থেকেই যায়। সেই কারণেই পুর প্রশাসন নিজে থেকে উদ্য়োগী হয়েছে এই বিষয়ে। তবে, এতদিন কোনও ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয়নি, সেই বিষয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
অগ্রদূত ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ক্লাবে যে টিকাকরণ শিবির চলছিল, তা তাঁদের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হয়নি। সেই শিবির চালাচ্ছিল অ্যাপোলো ক্লিনিক। আর্থিক লেনদেন যা কিছু, তারাই করেছে। ক্লাব এই বিষয়ে যুক্ত ছিল না, তারা শুধু এলাকার মানুষের টিকাকরণের সুবিধার্থে ক্লাবের পরিকাঠামো ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন। তবে, তাঁদের ক্লাবে যে শিবির চলছিল, সেখানে কোনও নকল টিকা দেওয়া বা কোনও দুর্নীতি চক্র চলছিল না, সেই বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত। কারণ, ক্লাবে আয়োজিত শিবিরে যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁরা প্রত্য়েকেই ফোনে মেসেজের মাধ্যমে টিকার শংসাপত্র পেয়ে গিয়েছেন।
অন্যদিকে, শুক্রবার বারাসাতে এক এক কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসে, টিকা দুর্নীতি নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। তাঁর অভিযোগ বললেন, কেন্দ্রীয় সরকার যাই পাঠায়, তাই নিনিয়েই দুর্নীতি শুরু হয়। এটা বেশিদিন চলতে পারে না। এই নিয়ে রাজ্যের রাজ্যপাল এবং দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও তাঁর আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ভুয়া আইপিএস গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে শুধু দুর্নীতি হচ্ছে না, দোকান-বাজারে তা বিক্রিও হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এমনকী, হাসপাতাল থেকে জোর করে ভ্যাকসিন নিয়ে গিয়ে স্বজনপোষণ চলছে, সেই খবরও পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রশাসন রয়েছে, কাজেই তদন্ত হবেই বলেও জানিয়েছেন তিনি।