Murshidabad Corona: মুর্শিদাবাদে সপ্তাহব্যাপী মেলা, গোষ্ঠী সংক্রমণের অশনি সংকেত

লালগোলার বুকে টানা কয়েকদিন ব্যাপী স্থানীয় এম এন একাডেমী হাইস্কুল মাঠ চত্বরে ৮ম বইমেলার সূচনা করা হয়। শহরের বুকে এমন পরিস্থিতিতে এইভাবে টানা সান্ধ্যকালীন বইমেলার সূচনাকে ঘিরে রীতিমতো দ্বিধা-বিভক্ত স্থানীয় মানুষজন।

Parna Sengupta | Published : Jan 4, 2022 11:38 AM IST

দেশ তথা রাজ্যে যখন হু হু করে বাড়ছে করোনা ও ওমিক্রণ আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিমুহূর্তে পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ক্রমশ জোরদার করা হচ্ছে কোভিড বিধি-নিষেধ। এমনকি রাজ্যের প্রথম সারির মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সু প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক ও নার্সেরা পর্যন্ত সংক্রমণের গন্ডির মধ্যে চলে আসায় ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে নবান্নের অন্দরমহলে কর্তাদের। তখন মুর্শিদাবাদের ইন্দো-বাংলা সীমান্তবর্তী লাগোয়া শহর লালগোলার বুকে সোমবার সন্ধ্যা থেকে দেখা গেল এক বিপদজনক ছবি। 

রীতিমতো ঢাকঢোল পিটিয়ে শুরু হলো কয়েক দিন ব্যাপী টানা 'লালগোলা বইমেলা' (Lalgola Book Fair)। এমন ঘটনা চাউর হতেই রীতিমতো জেলার (Murshidabad) বিভিন্ন মহলে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। অথচ পড়শি জেলা মালদহেই একেবারেই বিপরীত ছবি দেখা গিয়েছে। পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠানসূচি অনুযায়ী বইমেলা বাতিল ঘোষণা করেছেন সেখানকার জেলাশাসক রাজশ্রী মিত্র। যিনি নিজে এই মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত। শুধু তাই নয় অতিরিক্ত জেলা শাসক বৈভব চৌধুরীও করোনা আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে রয়েছেন। আর এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি মালদা জেলার বইমেলা স্থগিত করে দেওয়া হয় এবং তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যাবতীয় অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। 

অথচ, পাশের জেলা মুর্শিদাবাদে লালগোলার বুকে দিব্যি এদিন সন্ধ্যার পর থেকে টানা কয়েকদিন ব্যাপী স্থানীয় এম এন একাডেমী হাইস্কুল মাঠ চত্বরে ৮ম বইমেলার সূচনা করা হয়। শহরের বুকে এমন পরিস্থিতিতে এইভাবে টানা সান্ধ্যকালীন বইমেলার সূচনাকে ঘিরে রীতিমতো দ্বিধা-বিভক্ত স্থানীয় মানুষজন। শুধু বইমেলার স্টল নয় এই মেলায় থাকছে একাধিক খাবারের দোকানপাট, নান ধরের স্টল। সব মিলিয়ে স্টল সংখ্যা প্রায় ৬৫। যার মধ্যে অর্ধেকের কম হচ্ছে বইমেলার স্টলের সংখ্যা বলেই বিশেষ সূত্র মারফত জানা যায়। 

শুধু তাই নয় চলতে থাকা এমন ভয়ানক পরিস্থিতির মধ্যেও পুষ্প প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থেকে ফটোগ্রাফি প্রদর্শনীও আয়োজন করা হয়েছে । বই মেলায় আসা দর্শনার্থীদের কথা ভেবে রকমারি ভিন্ন স্বাদের খাবার দোকানও রাখা হয়েছে মেলা চত্বরে। পাশাপাশি স্থানীয় বইমেলা আয়োজক সংস্থার পক্ষ থেকে বই মেলার মঞ্চে বিভিন্ন প্রতিযোগিতা, কবি সম্মেলন এবং  জেলা ও জেলার বাইরে থেকে  বহিরাগত শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নাটক মঞ্চস্থ করার আয়োজন করা হয়েছে। 

এই মেলাতে শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্করাই নয় তাদের সঙ্গে গ্রাম-গঞ্জ থেকে আসা আট থেকে আশি বিভিন্ন বয়সের মানুষ রা সমাবেত হতে শুরু করেছে। যা স্বাভাবিকভাবেই আগামী কয়েকদিন ধরে চলতে থাকবে। ফলে যে কোন মুহূর্তে সামান্যতম ভুলচুক হলেই গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই এই মেলার আয়োজনকে রীতিমতো অশনি সংকেত বলেই মনে করছে। যদিও মেলা আয়োজক সংস্থা স্বভাবসিদ্ধ ভাবে সমস্ত  দায়ভার স্থানীয় প্রশাসনের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে সাফাই দিতে ব্যস্ত। 

সেক্ষেত্রে মেলা কর্তৃপক্ষের সদস্যদের অনেকের দাবি, প্রশাসনের নজরদারিতে এই মেলা পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা সকলকে সজাগ করে রেখেছি যাতে তারা মাস্ক পরে মেলায় প্রবেশ করে। এরপরেও যদি কেউ নিজের দায়িত্ব পালন না করে তা দেখভালের দায়িত্ব সমস্ত কিছু প্রশাসনের"। এদিকে মেলা কর্তৃপক্ষের এমন অবিবেচকের মতো ভাবনাকে রীতিমতো কটাক্ষ করছেন জেলার বহু মানুষ। 

তরুণ প্রজন্মের আক্তার শেখ, জিসান শেখ, বাপ্পা দাসরা বলেন," আসলে মেলা কর্তৃপক্ষ খুব চতুরতার সঙ্গে এই মেলা আয়োজন করে সেখান থেকে আগামী দিনে তৈরি হওয়া সম্ভাব্য কোন ভয়ানক বিপদ বা গোষ্ঠী সংক্রমণ থেকে নিজেদের দায়ভার ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলতে যাবতীয় দায়ভার প্রশাসন ও মেলায় আসা সাধারণ মানুষ থেকে শিশুদের ওপর আরোপ করতে চাইছে। আসলে এই মেলাকে কেন্দ্র করে মেলা আয়োজকদের মধ্যে অনেকের অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত রয়েছে। তার জন্য এই চরম বিপদের দিনেও সাধারণ মানুষকে তারা আগুনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে"।

Share this article
click me!