মহাভারতের দ্রোণাচার্যকে সকলেই চেনেন। গুরু হিসেবে। এই কলিযুগেও রয়েছেন গুরু দ্রোণাচার্য। যিনি পেশায় শিক্ষক। আর এই সংকটকালে দাঁড়িয়েছেন অসহায় মানুষদের পাশে। বিপদে হয়েছেন তাদের ত্রাতা। পৌরাণিক কালে দ্রোণাচার্য ছিলেন কুরু পান্ডবদের অস্ত্রগুরু। বর্তমানে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর প্রাথমিক শিক্ষক দ্রোণাচার্য করোনা আক্রান্ত অসহায় মানুষদের খাদ্য যোগানোর ভার নিয়েছেন। রীতিমতো রান্না করে পৌঁছে দিচ্ছেন হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বিভিন্ন বিভিন্ন পাড়ায় দরিদ্র করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতিতে তার সমাজসেবা করার কথা পৌঁছে যাচ্ছে বিভিন্ন এলাকায়। নিজের ফোন নম্বর দিয়ে খাবার পৌঁছে দেওয়ার কথা পোস্ট করেছেন তিনি। সকাল থেকেই নিজের হাতে বাজার করে রান্না করে এলাকার গরিব অসহায় দরিদ্র করোনা আক্রান্তদের বাড়ির দোরগোড়ায় খাবার রেখে আসছেন শিক্ষক দ্রোণাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায়। দীর্ঘদিন ধরে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার কিরণবালা বালিকা বিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
ঠাকুরদা ঠাকুরমা দুজনেই ছিলেন গান্ধীবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী। খানিকটা তাদের থেকেও আর্তের সেবা করার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন। জানালেন দ্রোণাচার্য বাবু।
শিক্ষক দ্রোণাচার্য ব্যানার্জি জানান দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক শিক্ষকতা করেন। স্কুল বন্ধ। কিন্তু সমাজ সেবার নিরিখে বিভিন্ন সমযয়ে হরিশ্চন্দ্রপুরে পিছিয়ে নেই দ্রোণাচার্য ব্যানার্জি ওরফে বিট্টু। এলাকায় ছোটবড় সবার কাছেই বিট্টু দা বলে পরিচিত।
করোনা পরিস্থিতি তার মনকে নাড়া দিয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাজেহাল সারা ভারত। প্রভাব পড়েছে হরিশ্চন্দ্রপুরের মাটিতেও। এলাকার অনেক দরিদ্র দিনমজুর পরিবারের মানুষজন করোনা আক্রান্ত। ফলে তাদের দৈনিক আয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে নিত্যদিনের খাবার জোগাড় করতেই তারা হিমশিম খাচ্ছেন। তাই নিজের বেতনের একাংশ থেকে সামগ্রী কিনে রান্না করে প্যাকেটজাত করে সেটাই করোনা আক্রান্ত অসহায় মানুষদের বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন বিনামূল্য। তার বাড়ির উঠোনে গিয়ে দেখা গেল ভাত,ডাল,ভাজা,আলু ফুলকপির তরকারি ডিমের তরকারি, অ্যালুমিনিয়ামের ফয়েলে প্যাক করা হচ্ছে। গ্লাভস মাক্স পড়ে রেডি বিট্টু দা।
গ্রামের বিভিন্ন জায়গা থেকে ফোন এসেছে। দুপুরের খাবার আগেই পৌঁছে দেবেন মধ্যাহ্নভোজ। দ্রোণাচার্য বাবুর স্ত্রী চৈতালি বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন স্বামী দীর্ঘদিন বিভিন্ন সময়ে সমাজসেবার সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এটা নতুন কিছু না। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে গ্রামের বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন স্বামী। তাই সংসার সামলে তাকেও খাবার বানানোর দায়িত্ব নিতে হয়েছে। এলাকার অনেক দরিদ্র মানুষ করোনা আক্রান্ত অনেকেই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন বাধ্য হয়ে। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোটা কর্তব্য।
শিক্ষকের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সকলে। এই মুহূর্তে মহামারীর দাপটে জেরবার সারা দেশ। মানুষের অবস্থাও শোচনীয়। একদিকে করোনার আতঙ্ক, অন্যদিকে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের আর্থিক সংকট। এরকম একটা পরিস্থিতিতে দ্রোণাচার্য বাবুর মত লোকেরাই অসহায় মানুষদের আশা।