বিশ্ব জুড়ে ফের রেকর্ড গতিতে ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাস মহামারি (Coronavirus Pandemic)। তবে ওমিক্রন (Omicron) ভেরিয়েন্ট নিয়ে বিভিন্ন দিকের গবেষণা থেকে আসা তথ্য একটাই সংকেত দিচ্ছে।
বিশ্ব জুড়ে রেকর্ড গতিতে বাড়ছে ওমিক্রন (Omicron) ভেরিয়েন্টের সংক্রমণের সংখ্যা। সোমবার আমেরিকায় করোনার বিশ্বরেকর্ড হয়েছে। দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের সংখ্যা ১০ লক্ষ পার করেছে, ব্রিটেন ২ লক্ষ। তবে, এখনও গুরুতর সংক্রমণ এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা সেই তুলনায় খুব বেশি নয়। ডেল্টা সংক্রমণের সময়, গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্য পরিষেবার যা হাল হয়েছিল, তাতে এই বিশাল সংক্রমণের সংখ্যা দেখে অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। তবে, বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিভিন্ন দিকের গবেষণা থেকেই যে তথ্য আসছে, তাতে করে করোনাভাইরাস মহামারির (Coronavirus Pandemic) একটি নতুন এবং অপেক্ষাকৃত কম উদ্বেগজনক অধ্যায়ের সংকেত পাওয়া যাচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত ওমিক্রন সম্পর্কে যেটা জানা গিয়েছে, তা হল, এই করোনা রূপান্তরের ক্ষেত্রে, বিপুল সংখ্যক মিউটেশন (Mutations) বা অভিযোজন রয়েছে। যার বেশিরভাগই স্পাইক প্রোটিন (Spike Protein), অর্থাৎ ভাইরাসের যে অংশ হোস্ট কোষকে আক্রমণ করতে সাহায্য করে, তাতে ঘটেছে। যার ফলে ভাইরাসটি শুধু, যারা টিকা পায়নি তাদেরকেই সহজে সংক্রমিত করতে পারে তাই নয়, পূর্ববর্তী সংক্রমণ এবং ভ্যাকসিন থেকে তৈরি অ্যান্টিবডির প্রতিক্রিয়াকেও (Antibody Response) এড়িয়ে যেতে পারে।
অ্যান্টিবডির প্রতিক্রিয়া প্রতিরক্ষার প্রথম লাইন। তা অতিক্রম করার পরে ওমিক্রন কীকরম আচরণ করে? গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, কোভিড-১৯ (COVID-19) ভাইরাসের আগের ভেরিয়েন্টগুলি যেমন ফুসফুসকে ব্যাপক সংক্রামিত করত, ওমিক্রনের ক্ষেত্রে তা দেখা যাচ্ছে না। গত সপ্তাহে অন্তত পাঁচটি পৃথক গবেষণায় একই ফল এসেছে। আর সেই কারণেই এই ভাইরাস থেকে, তুলনায় কম গুরুতর অসুস্থতা তৈরি হচ্ছে। হ্যামস্টার, সিরিয়ান হ্যামস্টার ও ইঁদুরের ফুসফুসে পরীক্ষা করে এবং আক্রান্তদের ফুসফুসের কলা বা টিস্যু অধ্যয়ন করে একই ফল মিলেছে।
বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ভাইরাসের শারীরবৃত্তির পরিবর্তনের কারণেই এমনটা দেখা যাচ্ছে। তারা বলছেন, এর আগে পর্যন্ত করোনার মূল ভাইরাস ও তার অন্যান্য ভেরিয়েন্টগুলি, মানব কোষে প্রবেশের জন্য দুটি ভিন্ন পথ ব্যবহার করত - শ্বাসনালী এবং ফুসফুস। এখন স্পাইক প্রোটিনটি যেহেতু আগের থেকে অনেক বেশি ভেদ শক্তি সম্পন্ন, তাই ভাইরাসটি কোষে প্রবেশের জন্য ফুসফুস অবধি আর যাচ্ছে না, তার আগে শ্বাসনালীকেই সংক্রামিত করতে বেশি পছন্দ করছে। এর ফলে ফুসফুসের ক্ষতি হচ্ছে কম, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে না। তবে ভাইরাসটি শ্বাসযন্ত্রের উপরের দিকেই থাকায়, এটি আরও সহজে এক ব্যক্তির থেকে অপর ব্যক্তিতে ছড়িয়ে পড়ছে।
যারা টিকা পেয়েছেন এবং যারা আগে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন,তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়ার পর, ভাইরাল সংক্রমণ ঠেকাতে প্রতিরক্ষা একটি দ্বিতীয় সারিও থাকে। তা হল টি-সেল বা টি-কোষ (T-Cell)। অ্যান্টিবডির প্রতিরোধ এড়িয়ে ভাইরাসটি কোষে ঢুকলেই এই টি-কোষগুলি ভাইরাসটিকে আক্রমণ করে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায়, কোভিড রোগীদের শ্বেত রক্তকণিকা (White Blood Cells) ব্যবহার করে দেখা গিয়েছে, করোনাভাইরাসের আগের স্ট্রেনগুলির তুলনায় ওমিক্রন আক্রান্তদের ক্ষেত্রে শ্বেত রক্তকণিকায় প্রায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ টি-সেল থেকে যাচ্ছে। অর্থাৎ, টিকাপ্রাপ্ত এবং গত ৬ মাসের মধ্যে কোভিড সংক্রামিতদের দেহে তৈরি হওয়া টি-কোষগুলি ওমিক্রনকে সঠিকভাবে সনাক্ত করতে পারে এবং তুলনামূলকভাবে দ্রুত এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। তবে এর কারণ এখনও ব্যাখ্য়া করতে পরেননি বিজ্ঞানীরা।
তবে এরপরও ভয় থেকে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, সংক্রমণের সংখ্যা যখন আকাশচুম্বী হবে (আমেরিকায় যেমনটা হতে চলেছে), হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং মৃত্যুর সংখ্যা ধীরে ধীরে হলেও বাড়বে, যা স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উপর চাপ ফেলতে পারে। তবে, তাঁরা বলছেন বিভিন্ন ধরণের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য একই দিকে নির্দেশ করছে। শেষের পথে মহামারি। তারা বলছেন, আমরা এখন মহামারির সম্পূর্ণ ভিন্ন পর্যায়ে আছি। হয়তো ভাইরাসটি চিরকাল মানব সভ্যতার সঙ্গে থেকে যাবে, তবে বিজ্ঞানীদের আশা, ওমিক্রন ভেরিয়েন্ট এতটাই শক্তিশালী অনাক্রম্যতা (Immunity) তৈরি করবে, যার সঙ্গে পেরে উঠবে না করোনার পরবর্তী রূপান্তরগুলিও। অবসান ঘটবে করোনা মহামারির।