প্রথম ডোজ কোভিশিল্ড-এর
পরের ডোজ কোভ্যাক্সিনের
এমনটা যদি হয় তাহলে কী হবে
তাই নিয়েই গবেষণা করেছেন অক্সফোর্ডের গবেষকরা
প্রথম ঘটেছিল উত্তরপ্রদেশে। তারপর এই রাজ্যের মালদাতেও। প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছিল কোভিশিল্ড-এর, পরের ডোজটি ভুল করে দেওয়া হয়েছিল কোভ্যাক্সিনের। সেই নিয়ে সেই সময় বেশ হইচই হলেও, করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের ধাক্কায় টলমল দেশে সেই ভুলটাই যদি ঠিক হয়, তবে অনেকটাই সুবিধা হতে পারে। আর এই বিষয় নিয়েই এখন চলছে গবেষণা। তাতে দেখা যাচ্ছে এভাবে মিলিয়ে মিশিয়ে টিকা দিলে খুব বেশি ক্ষতির আশঙ্কা নেই। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকটাই বেশি হবে, তবে তা কয়েকদিনে কমেও যাবে।
বেশিরভাগ করোনা ভ্যাকসিনই দুই ডোজ বিশিষ্ট। প্রথম ডোজে শরীরে কোভিডের অনাক্রম্যতা তৈরি হয়। আর পরেরটি দেওয়া হয় বুস্টার ডোজ হিসাবে। অর্থাৎ, পরের ডোজটি প্রথম ডোজে তৈরি হওয়া করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে। ভারতের মতো যেসব দেশে এই মুহূর্তে করোনার দাপট লাগাম ছাড়া হয়ে গিয়েছে, অথচ হাতে পর্যাপ্ত টিকা নেই, সেইসব দেশে ভ্যাকসিনের ঘাটতি মোকাবিলায় দুটি ভিন্ন ভ্যাকসিনের মিশ্র ডোজ দারুণ কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে। স্বল্প ও মধ্য আয়ের দেশগুলিতেও এই কৌশল দারুণ কাজে আসবে। কারণ সেই ক্ষেত্রে, বিভিন্ন সূত্র থেকে সংগৃহীত ভ্যাকসিন নির্ভয়ে দেওয়া যাবে। প্রথম ডোজ কোভিশিল্ড-এর নেওয়া হয়েছিল না কোভ্যাক্সিনের, সেই প্রশ্ন থাকবে না।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকরা এই নিয়ে গবেষণা করেছেন। সম্প্রতি দ্য ল্যান্সেট মেডিকেল জার্নালে তাঁরা তাঁদের গবেষণার প্রাথমিক ফল প্রকাশ করেছেন। গবেষণায় অংশ নেওয়া কয়েকজনকে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছিল অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিশিল্ড এবং চার সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ হিসাবে দেওয়া হয়েছিল ফাইজারের করোনা ভ্যাকসিন। দেখা গিয়েছে দুটি ভ্যাকসিন-এর ডোজ দেওয়া নিরাপদ। অল্প সময়ের জন্য কয়েকজনের মধ্যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। বস্তুত, এক টিকার দুটি ডোজ নেওয়া ব্যক্তিদের মাত্র ৩ শতাংশের মধ্য়ে এইরকম পার্শপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কিন্তু, মিশ্রিত ডোজ নেওয়া ব্যক্তিদের প্রায় ১০ শতাংশ প্রচণ্ড ক্লান্তি বা মাথাব্যথার অভিযোগ করেছেন। প্রথমে ফাইজার পরে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের ডোজ দিয়েও, ঠিক একই বিষয় উঠে এসেছে।
দুই ভ্যাকসিনের ডোজ মিশিয়ে দিলে কি অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি পায়? আদৌ কি কার্যকর হয় করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে? এখনও সেই তথ্য সামনে আসেনি গবেকদের। তাঁরা জানিয়েছেন, মিশ্র ডোজে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় কিনা, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তা জানা যাবে। আপাতত, জানা গিয়েছে এটা সুরক্ষিত। তবে তাঁদের গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেকেরই বয়স ছিল ৫০ বা তার বেশি। গবেষকরা সতর্ক করেছেন, অপেক্ষাকৃত কম বয়সীদের মধ্যে মিশ্র ডোজের প্রতিক্রিয়া আরও বেশি হতে পারে। এখনও সেই বিষয়ে গবেষণা করেননি তাঁরা।
তবে এই গবেষণার ফল সামনে আসার আগেই মিশ্র ডোজ দেওয়া শুরু করছে ফ্রান্স। সেই দেশেও প্রথম দফায় বৃদ্ধদেরই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল। অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনই পেয়েছিলেন তাঁরা। এরপর ফরাসী সরকার এই ভ্যাকসিন তাদের দেশেনিষিদ্ধ করে। এখন কোভিশিল্ডের প্রথম ডোজ পাওয়া সেই মানুষদের ফাইজার এবং বায়োএনটেক সংস্থার তৈরি টিকা দ্বিতীয় ডোজ হিসাবে দেওয়া হচ্ছে।
তবে অক্সফোর্ডের গবেষকরা এখানেই থামছেন না। তাদের পরের প্রকল্প মডারনা এবং নোভাভ্যাক্স সংস্থার টিকার মিশ্র ডোজ নিয়ে গববেষণা। আরও অন্যান্য ভ্যাকসিনেরও মমিশ্র ডোজ নিয়ে তাঁকা কাজ চালাবেন। তবে প্রত্যেক ভ্যাকসিনের মিশ্রিত ডোজই কার্যকর নাও হতে পারে। তবে গবেষকদেরমতে, যদি দুটি টিকা একই কৌশলে করোনাাভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে থাকে, তাহলে তারা মিশ্র ডোজে কার্যকর হবেই। যেমন কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিন - দুটি টিকাই করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে নষ্ট করে। তাই তাদের মিশ্রনও কার্যকর হওয়ারই সম্ভাবনা বেশি।