করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ যে সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে, সেটা আর কারও অজানা নয়। ইতিমধ্যে বর্তমান সংকটকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি বলে মন্তব্য করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। বিশ্বনেতারা এই অবস্থাকে নব্বইয়ের দশকের মন্দা ও ১৯৩০-এর মহামন্দার থেকে এগিয়ে রেখেছেন। এমনকি ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালের ট্রিপল এফ অর্থাৎ অর্থনীতি, জ্বালানি ও খাদ্য সংকটের চেয়ে আলাদা করে দেখছেন।
বিশ্বব্যাংকের প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক জোসেফ স্টিগলিজ বলেছেন, ‘যাঁরা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছেন, তাঁদের বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে। যে অর্থ হেলিকপ্টার মানি অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ব্যাংক যখন সরাসরি কাউকে টাকা দিয়ে থাকে।’
এই পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ৮০টি দেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ-এর কাছে জরুরি সহায়তা চেয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিভা।
গত মঙ্গলবার ২৪ মার্চ; জি-২০ অর্থমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের সম্মেলনের পরে এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা জানান ।
ক্রিস্টালিনা জর্জিভা জানান, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ বিষয়টি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার পর করোনা মোকাবিলার জন্য জরুরি তহবিল ছাড়াও ঋণ খাতে ১ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আইএমএফ-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী আগের আর্থিক সংকটের চেয়ে এবারের মন্দা আরও খারাপ প্রভাব ফেলবে। কিন্তু আইএমএফ আশা করছে ২০২১ সালে এই অবস্থা ঘুরে দাঁড়াবে। সেটি করার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে। তিনি এও বলেন, অর্থনীতির ক্ষতি বহুমাত্রিক হলেও প্রথম কাজ হলো যত দ্রুত সম্ভব ভাইরাসটিকে দমন করা।
ক্রিস্টালিনা জর্জিভা আরও জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে যে মহামারি সৃষ্টি হয়েছে তাতে ইতিমধ্যে যে ক্ষতি হয়েছে সেটি অপূরণীয়। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বিশ্বনেতৃবৃন্দ সচেষ্ট হয়েছেন। বিশ্বের প্রধান প্রধান কেন্দ্রীয় ব্যাংক এগিয়ে আসায় শুধু সুদের হার কমানোই নয়, আর্থিক জোটের মাধ্যমে আরও অনেক কিছুই করতে হবে। তা না হলে ছোট দেশগুলি এবং কম রোজগারের দেশগুলি নিশ্চিহ্ন হতে পারে।
আইএমএফ-এর খবর অনুযায়ী উন্নত দেশগুলির বিনিয়োগকারীরা করোনা ভাইরাসের কারণে সংকট শুরু হওয়ার পর প্রায় ৮৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ ফিরিয়ে নিয়েছে। কম আয়ের দেশগুলিতে ঋণের সংকট নিয়ে আইএমএফ উদ্বিগ্ন। এটা নিয়ে তারা বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে। বিশ্বের অনেক নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশ এসডিআর সহায়তা চেয়েছে। সদস্য দেশগুলিকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে আইএমএফ।