আক্রান্তরা দেখতে পাচ্ছেন মৃত ব্যক্তিদের
করোনার মধ্যেই কানাডায় দেখা দিল রহস্যময় রোগ
প্রভাবিত হচ্ছে মূলত মস্তিষ্কই
ইতিমধ্য়েই আক্রান্ত ৪৮ জন, মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের
করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় তরঙ্গ চলছে। এর মধ্যেই কানাডা থেকে এক রহস্যজনক মস্তিষ্কের রোগের কথা জানা গেল। সেই দেশের আটলান্টিক উপকূলে অবস্থিত নিউ ব্রান্সউইকের বাসিন্দাদের এই রোগ রীতিমতো ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। এই রোগে আক্রান্তরা মাঝে মাঝেই নাকি মৃত ব্যক্তিদের দেখতে পাচ্ছেন, এমনটাই জানা গিয়েছে। এই রোগের কারণ, কীভাবে তার চিকিৎসা করা যায় - সবই এখনও অজানা। তবে, কানাডার বহু চিকিত্সা বিশেষজ্ঞ এবং শীর্ষ স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের হতবাক করে দিয়েছে এই অজানা স্নায়বিক ব্যাধী।
সরকারি প্রতিবেদন অনুসারে, গত কয়েক দিনে নিউ ব্রান্সউইক এলাকার বেশ কয়েকজন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনাভাইরাস নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে, প্রথমদিকে এই রহস্যজনক রোগ নিয়ে বিশেষ হইচই হয়নি। তবে ইতিমধ্য়ে অন্তত ৪৮ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৬ জনের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। এখন আর বিষয়টি সহজভাবে দেখছে না সরকার, বরং কর্তৃপক্ষ এই রোগ নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।
একডিয়ান উপদ্বীপের গ্রাম বার্ট্র্যান্ডের মেয়র ইভন গোডিন জানিয়েছেন, তাঁর এলাকার মানুষ এই নয়া রোগ নিয়ে আতঙ্কিত। কিসের থেকে এই রোগ হচ্ছে, তা জানতে ব্যগ্র তারা। এই রোগ কি পরিবেশগত, নাকি জিনগত? মাছ থেকে আসছে নাকি হরিণের মাংস থেকে নাকি অন্য কোনও খাবারের মধ্যে থাকা কোনও ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থেকে? নিউ ব্রান্সউইকের প্রত্যেকেই এই প্রশ্নগুলির উত্তর চান। কিন্তু, না চিকিত্সকরা না গবেষক বা চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা - কেউই এখনও এই রহস্যের সমাধান করতে পারেননি।
ঠিক কী ঘটে এই রোগ হলে? জানা গিয়েছে, এই রোগ মূলতঃ মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে, তবে সামগ্রিকভাবে স্নায়ুতন্ত্রের উপরই প্রভাব পড়ে। এই রোগের বেশ কয়েকটি গুরুতর উপসর্গও রয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিবর্গ অনিদ্রায় ভোগেন। স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে, অনেক কিছুই মনে রাখতে পারেন না। এর সঙ্গে সঙ্গে 'ভিজ্যুয়াল হ্যালুসিনেশন' বা দৃষ্টিভ্রমের সমস্যায় ভোগেন। প্রায়শই তাঁরা মৃত আত্মীয় বা নিকটজনদের দেখতে পান।
বিজ্ঞানীরা এখনও এই রোগের কারণ বা উত্স কোনওটাই নির্ধারণ করতে পারেননি। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন তত্ত্ব ঘোরাফেরা করছে। একদল দাবি করছে, সেলফোনের টাওয়ার থেকে যে বিকিরণ হয়, তার থেকেই এই রোগ ছড়াচ্ছে। এমনকী, কেউ কেউ এই রোগের জন্য দায়ী করছেন কোভিড-১৯ টিকাকে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে আর কোনওভাবেই লঘু করে দেখা হচ্ছে না। কানাডার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডরোথি শেফার্ড বলেছেন, 'এই নতুন এবং অজানা সিনড্রোম অত্যন্ত ভীতিজনক। আমি জানি যে নিউ ব্রান্সউইকের বাসিন্দারা এই সম্ভাব্য নিউরোলজিকাল সিনড্রোম নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং বিভ্রান্ত।' এই নিউরোলজিকাল সিনড্রোমটি খতিয়ে দেখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এই মস্তিষ্কের রোগে আক্রান্ত প্রতিটি রোগীর একটি সম্পূর্ণ ক্লিনিকাল পর্যালোচনা করবে। তারপর তাদের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই পরের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।