তপন মল্লিক, আমেরিকায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ করোনা আক্রান্ত। সংক্রমণের কারণে দেশটিতে প্রায় পউনে তিন লক্ষ মানুষ মারা গেছেন। এই অবস্থায় বাইডেন বলেছিলেন, ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনই তিনি আমেরিকাবাসীকে ১০০ অন্তত দিন মাস্ক পরার কথা বলেন। কেবলমাত্র ১০০ দিন। এটা করা গেলে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই কমবে বলে তাঁর বিশ্বাস। আর টিকা দেওয়ার কর্মসূচির পর করোনার সংক্রমণ যথেষ্ট পরিমাণে কমিয়ে আনা যাবে বলে তিনি মনে করেন। যদিও আমেরিকার সংবিধানে নাগরিকদের মাস্ক পরার নির্দেশ দেওয়ার আইনি অধিকার প্রেসিডেন্টের নেই।
প্রসঙ্গত, করোনার টিকা না আসা পর্যন্ত মাস্কই একমাত্র ভরসা। ইতিমধ্যে গত ৫ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়া তাদের স্পুটনিক ভি টিকার মাধ্যমে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে। তারপর ৮ ডিসেম্বর থেকে ফাইজারের করোনা টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে ব্রিটেনে। ফাইজারের করোনা টিকার অনুমোদন দিয়েছে আরব দেশ বাহরাইন। এছাড়া ৯ ডিসেম্বর কানাডা ও সৌদি আরব ফাইজারের টিকার অনুমোদন দিয়েছে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা নভেল করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করছে, তার সঙ্গে যুক্ত আছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া।
প্রশ্ন করোনা টিকা নেওয়ার পরেও কই মাস্ক পড়তে হবে? করোনা টিকার পর কি কভিড-১৯ পূর্ববর্তী জীবনে ফিরে যাওয়া যাবে? আগে যেমন মাস্ক ছাড়া যেখানে সেখানে যাওয়া যেত, তেমন ভাবেই কই চলা ফেরা করা যাবে? বিশেষঙ্গরা বলছেন না, একেবারেই নয়। এ পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরী হিসেবে যেসব প্রতিষেধক বা টিকার খবর মিলেছে, সেগুলি শরীরে করোনা প্রতিরোধ করতে সক্ষম। টিকা নেওয়া ব্যক্তি যে নভেল করোনাভাইরাস থেকে পুরোপুরি মুক্ত, তা কোথাও বলা হয়নি।
করোনা টিকা নেওয়া একজন ব্যক্তি হয়ত অসুস্থ হয়ে পড়বেন না বা তার কোনও লক্ষণও চোখে পড়বে না, কিন্তু তিনি নিঃশব্দে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন আশপাশে। মাস্ক না পরলে এবং শারীরিক দূরত্ব না মানলে তা যে বেশি মাত্রায় হবে, সে কথা বলাই বাহুল্য। সেক্ষেত্রে যারা টিকা নেন নি বা পান নি তার চরম বিপদ হতেই পারে। আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ মিশাল টাল বলছেন, অনেক মানুষ এমন ধারণা করেন যে, একবার টিকা নিলে আর মাস্ক পরার কোনও দরকার নেই। বিশেষঙ্গরা বলেছেন তেমনটা একেবারেই নয়। বিশেষঙ্গরা বরং বলছেন, টিকা নেওয়ার পরেও মাস্ক পরা চালিয়ে যেতে হবে। তাহলে কি এখন থেকে আরও বেশ কিছুকাল পর্যন্ত মাস্ক আমাদের জরুরী সঙ্গী?
যে সব মানুষ করোনা টিকা নিলেন, তাদের শরীরের রক্তে করোনা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরি হবে এ কথা ঠিক। কিন্তু ওই সব মানুষের নাক দিয়ে যদি নভেল করোনাভাইরাস প্রবেশ করে, তবে সেটা নাকের মধ্যে ফের বংশবৃদ্ধি করবে এবং হাঁচির মাধ্যমে বা নিঃশ্বাসের মধ্যে দিয়ে কাছাকাছি থাকা অন্য মানুষের শরীরে ছড়িয়ে যাবে। যদি না সেই সব মানুষ মাস্ক না পরে থাকেন। করোনার টিকা সাধারণত মাংসপেশিতে দেওয়া হয়। টিকা নেওয়ার পর শরীরের রক্তে তৈরি অ্যান্টিবডিগুলির কিছু অংশ রক্তের মধ্যে দিয়ে নাকের মিউকোসায় প্রবেশ করে সেখানে পাহারা দেবে। কিন্তু অ্যান্টিবডির কতখানি অংশ নাকে আসবে এবং কত দ্রুত আসবে তা এখনো স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ মারিয়ন পেপার বলছেন, করোনা টিকা আর মাস্ক ব্যবহার বিষয়টা এখন একটা প্রতিযোগিতামূলক পর্যায়ে রয়েছে। ভাইরাস আগে সংখ্যায় বাড়বে, না প্রতিষেধক আগে তাকে কাবু করতে পারবে, তার ওপরই সবটা নির্ভর করছে। যে কারণে অনেক চিকিৎসাবিজ্ঞানী মাংসপেশিতে ইনজেকশন দেওয়ার চেয়ে নাকে কিভাবে দেওয়া যায় সে কথা ভাবছেন।যদি এমন স্প্রে তৈরি করা যায় তাহলে তার ওপরই তাঁরা বেশি ভরসা করছেন। ভবিষ্যতে হয়ত করোনার জন্যও এমন ন্যাসাল স্প্রে প্রতিষেধকও চলে আসতে পারে। তবে আসল কথা হল, করোনা টিকা নেওয়ার পরেও মাস্ক খুলে ফেলা যাবে না, অন্তত গোটা বিশ্বের প্রতিটি মানুষ যতদিন না টিকা নিতে পারছেন।
তার মানে বিশেষঙ্গদের কথা অনুযায়ী এটা ধরে নেওয়াই যায়, টিকা না পাওয়া পর্যন্ত কিংবা টিকা দেওয়ার পরেও করোনার ঝুঁকি থেকে বাঁচতে হলে বাইরে চলাফেরার সময় আমাদের মুখে মাস্ক থাকাটা জরুরী। তা না হলে তেমন লাভ হবে না। আজকাল যে অনেক জায়গাতেই করোনার সংক্রমণ আবার বাড়ছে, তার একটি কারণ হতে পারে মুখে মাস্ক পরার ব্যাপারে আমরা একটু উদাসীন হয়ে পড়েছি। না সেটা করলে চলবে না। কারণ আগামী আরও কয়েকটা বছর মাস্ককে আমাদের জীবনের সঙ্গেই রাখতে হবে।