জগমোহন ডালমিয়ার প্রয়াণের পর সিএবি প্রেসিডেন্ট পদে যে ব্যক্তিটি সবচেয়ে বড় দাবিদার ছিলেন তাঁর নাম বিশ্বরূপ দে। সেই সময় তিনি ছিলেন সিএবি-র কোষাধ্যক্ষ পদে। সিএবি ক্রিকেট প্রশাসনে সৌরভ যুগ্ম-সচিব পদে থাকলেও সেই সময় কোনওভাবেই ছিলেন না অভিষেক ডালমিয়া। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে রাতারাতি সিএবি প্রশাসনের দখল নিয়েছিলেন সৌরভ।
বিসিসিআই সভাপতি পদে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অপসারণে স্বাভাবিকভাবেই বাংলা ক্রিকেট মহলকে বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে। জগমোহন ডালমিয়ার পর সৌরভ-ই ছিলেন বিসিসিআই-এর অন্দরে বাংলার সবচেয়ে বড় অহঙ্কার। কিন্তু রাতারাতি দাবার চালে তাঁকে মাত দিয়ে রজার বিনি-কে প্রেসিডেন্ট পদে স্থালাভিষিক্ত করায় অনেকেই অনেক কারণ দেখছেন। ক্রিকেট প্রশাসনের সৌরভের আগমনে যে মানুষটি প্রায় ময়দানের পিছনের সারিতে চলে গিয়েছেন তাঁর নাম বিশ্বরূপ দে। মঙ্গলবার দিনভর তাঁর কাছে অনেকেই জানতে চেয়েছেন সৌরভের অপসারণ নিয়ে প্রতিক্রিয়া। কিন্তু, সরকারিভাবে কাউকেই কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি বিশ্বরূপ। রাতে নিজেই ফেসবুক ওয়ালে লিখলেন তাঁর অনুভূতির কথা। জানালেন হয়তো অনেকেই ভাবছেন এটা প্রতিশোধের মতো বিষয়, কিন্তু আদপে তা নয়, ভারতীয় ক্রিকেটের শীর্ষপদে বাংলার প্রতিনিধিত্ব এভাবে নির্মূল হয়ে গেল তা তাঁকে ব্যাথাতুর করে তুলেছে। কিন্তু, পাশাপাশি এসে পড়ছে এমন কিছু বিষয় যেখানে তিনি মনে করেন সেটিং নয় প্রকৃত লোক খুঁজে প্রশাসনকে শক্তিশালী করাটা ছিল বেশি জরুরি।
সৌরভের অপসারণে কেন বিশ্বরূপ প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে এক নম্বর ব্যক্তি?
এই প্রশ্নটাই এই কারণেই স্বাভাবিকবাবে চলে আসছে যে জগমোহন ডালমিয়ার প্রয়াণের পর সিএবি প্রেসিডেন্ট পদে যে ব্যক্তিটি সবচেয়ে বড় দাবিদার ছিলেন তাঁর নাম বিশ্বরূপ দে। সেই সময় তিনি ছিলেন সিএবি-র কোষাধ্যক্ষ পদে। সিএবি ক্রিকেট প্রশাসনে সৌরভ যুগ্ম-সচিব পদে থাকলেও সেই সময় কোনওভাবেই ছিলেন না অভিষেক ডালমিয়া। কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে রাতারাতি সিএবি প্রশাসনের দখল নিয়েছিলেন সৌরভ। হয়েছিলেন জগমোহন ডালমিয়া উত্তর সময়ে সিএবি-র প্রথম সভাপতি। আর ক্ষেত্রে তাঁকে পূর্ণ সমর্থন জুগিয়েছিল ডালমিয়া পরিবার। পরিণামে অভিষেক ডালমিয়া হন সিএবি-র যুগ্ম-সচিব। সিএবি প্রশাসনের ১০৭ জন সদস্য নাকি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বলেই ঘোষণা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে-র অলিন্দে সেদিন মুখ কালো করে পুরো নাটক দেখা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না বিশ্বরূপের। পরবর্তী সময়ে তিনি আস্তে আস্তে সিএবি প্রশাসন থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। ২০১৯ সালের সিএবি নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। বরং বিশ্বরূপ মেতে ওঠেন মানবাধিকার রক্ষা নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগে এবং পারিবারের উদ্যোগে তৈরি হওয়া অনাথ-অক্ষমদের জন্য তৈরি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা রেফিউজি-র কাজে।
মসনদচূত্য মহারাজ- বিশ্বরূপ দে
ফেসবুক পেজে বিশ্বরূপ লিখেছেন- 'সকলেই জানতে চাইছেন সৌরভ বোর্ড প্রেসিডেন্ট না থাকায় আমি খুশি না অখুশি? আমার উত্তর খুব সহজ- বৃহত্তর প্রেক্ষাপট বিচারে আমি অখুশি। কারণ বাংলার আর কোনও প্রতিনিধি যখন প্রশাসন বা অন্য কোনও ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ পদ থেকে সরে আসেন, বা তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়, সেটা একজন প্রকৃত বাঙালির কাছে সুখকর হতে পারে না। একজন বাঙালি হিসেবে যে ভাবে চক্রান্ত করে সৌরভকে সরিয়ে দেওয়া হল তার নিন্দা করি আমি। একই সঙ্গে বলব আমি অসম্ভব ব্যাথিত।'
'সৌরভের প্রশাসনিক যোগ্যতা থাকলে এভাবে অপসারণ ঘটত না'- বিশ্বরূপ
বিশ্বরূপ আরও লিখছেন- 'কিন্তু অনুবীক্ষণ যন্ত্রের তলায় ফেলে দেখলে, এটা তো হওয়ারই ছিল। কারণ বছর তিনেক আগে বিজেপি-র হাত ধরে (পড়তে হবে অমিত শাহর-র হাত ধরে) ব্রিজেশ প্যাটেলকে হঠিয়ে, রাতারাতি বোর্ড প্রেসিডেন্ট হয়ে গিয়েছিলেন সৌরভ। অথচ প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার ব্রিজেশের প্রেসিডেন্ট হওয়াটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ব্রিজেশের বদলে সৌরভকে বোর্ড প্রেসিডেন্ট করা হয় শুধুমাত্র ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে। ঠিক একইভাবে আমার গুরু জগমোহন ডালমিয়ার আকস্মিক প্রয়াণের বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে নবান্নে গিয়ে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়ে সিএবি প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন সৌরভ। সিএবি নির্বাচন এড়িয়ে এভাবে ঘুরপথে তখন সংস্থার প্রেসিডেন্ট হয়ে যাওয়া সৌরভের মতো ব্যক্তিত্বের পক্ষে খুব মানানসই ছিল কি? অতিতে বাম আমলে সৌরভ গাঙ্গোপাধ্যায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও অশোক ভট্টাচার্যের কতটা কাছের মানুষ হয়ে উঠেছিলেন সেটা সকলেরই জানা। আসলে কোনও বাঙালি নতজানু হয়ে কোনও পদে আসীন হলে সেটা সমগ্র বাঙালি জাতির কাছেই প্রবল লজ্জার হয়। যৌরভ যদি নিজের প্রশাসনিক যোগ্যতায় (ক্রিকেটার হিসাবে যাঁর যোগ্যতা তর্কাতীতভাবে প্রাণিধানযোগ্য)বিসিসিআই ও সিএবি প্রেসিডেন্ট হতেন, আজ এভাবে তাঁর অপসারণ ঘটত না বোর্ড থেকে। আসলে রাজনীতিবিদদের হাত ধরে ঘুরপথে ক্ষমতায় আসলে পরিণতি এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। সৌরভ গাঙ্গুলিকে পরামর্শ বা উপদেশ দেওয়ার মতো জায়গায় নেই আমি। শুধু কয়েকটা অনুরোধ করব। প্রথমত, ক্রিকেট প্রশাসনে থাকতে গেলে ব্যবসায়িক স্বার্থের যে বৃত্ত, তার বাইরে বেরোতে হবে। আর দুই কিছু মোসাবেবের চোখ দিয়ে বাংলা বা ভারতীয় ক্রিকেটকে না দেখে কিছু পরিচ্ছন্ন প্রশাসককে খুঁজে নেওয়া দরকার। ক্রিকেটার হিসাবে রত্ন যে ভাবে চিনতেন সৌরভ, সেই ভাবে। আর এই দুটো কাজ সৌরভ যত দ্রুত করতে পারবেন, তত বাংলার ক্রিকেটের মঙ্গলসাধন হবে। না হলে ঋদ্ধিমান সাহার মতো একের পর এক সফল ক্রিকেটার বাংলা ছেড়ে ভিন্ন রাজ্যে চলে যাবেন, মুখ থুবড়ে পড়বে ভিশন টোয়েন্টি-টোয়েন্টি প্রজেক্ট। রসাতলে যাবে বঙ্গ ক্রিকেট। আর যন্ত্রণাক্লিষ্ট হৃদয়ে দেখতে হবে তাঁর অপমানজনক অপসারণ। একজন বাঙালি হিসাবে আগামীদিনে তোমাকে আইসিসি চেয়ারম্যান পদে দেখতে চাই।'