মহালয়া মানেই দুর্গা পুজোর দিন গোনা শুরু হয়ে যাওয়া। বর্তমানে অবশ্য মহালয়া থেকেই পুজোর শুরু হয়ে যাওয়া। মহালয়ার দিনটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। মহালয়া কথাটির বিশেষ অর্থ রয়েছে। পিতৃপক্ষের অবসান বা দেবীপক্ষের পূর্ববর্তী অবস্হাকে বলা হয় মহালয়া। এই ব্যাপারে অবশ্য মতান্তর রয়েছে মহ শব্দটির অর্থ মানে পূজা, আবার মহ বলতে উৎসব ও বোঝায়। এছাড়া মহালয়া বলতে বোঝা যায় মহান ও আলয় নিয়ে মহালয়। এর সঙ্গে আ যোগ করে পূজার আলয়। আলয় শব্দের অর্থ আশ্রয়। আবার মহালয় বলতে বোঝা যায় পিতৃলোককে, যেখানে স্বর্গত পিতৃপুরুষদের অবস্হান।
পিতৃপক্ষের অবসানে পর শুরু হয় দেবীপক্ষের সূচনা। পিতৃতর্পণের মাধ্যমে আমরা পিতৃপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা ও প্রণাম ও সম্মান নিবেদন করি। এই মহালয়ার পিতৃপক্ষটি ষোলা শ্রাদ্ধ, কানাগত, জিতিয়া, মহালয়া পক্ষ ও অপর পক্ষ নামেও পরিচিত। দীর্ঘকাল ধরে কোটি কোটি মানুষ মহালয়ার পুণ্যপ্রভাতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে জল অঞ্জলি দিয়ে স্মরণ করে চলেছেন তাঁদের বিদেহী পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে। ভারতভূমিতে কোটি কোটি মানুষ মহালয়ার পূণ্য প্রভাতে 'ময়া দত্তেন তোয়েন তৃপ্যান্ত ভুবনত্রয়ম, আব্রহ্ম স্তম্ভ পর্যন্তং তৃপ্যন্তু'- এই মন্ত্র উচ্চরণ করে তিন গন্ডুষ জল অঞ্জলি দিয়ে বিদেহী পিতৃপুরুষদের স্মরণ করে চলেছেন। গয়ায় মহালয়া উপলক্ষ্যে পিতৃপক্ষ জুড়ে মেলা চলে। এছাড়া মহালয়ার ভোরে চন্ডীপাঠের রীতি রয়েছে। মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। অনেকে বারাণসী বা গয়ায় গিয়ে দ্বিপ্রহরে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। পূর্বপুরুষকে যে খাদ্য উৎসর্গ করা হয় তা সাধারণত রান্না করে রুপো বা কলাপাতার ওপরে দেওয়া হয়। শ্রাদ্ধকর্তাকে স্নান করে ধুতি পরে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করতে হয়। শ্রাদ্ধের পূর্বে কুশাঙ্গরীয়(কুশ ঘাসের আঙটি) ধারণ করতে হয়। ওই আঙটিতে পূর্বপুরুষদের আহবান করা হয়।
পুরাণ অনুযায়ী মহালয়ার দিনেই দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। ব্রহ্মার বর অনুযায়ী কোনও মানুষ বা দেবতা দ্বারা মহিষাসুরকে বধ করা সম্ভব ছিল না। একমাত্র নারী শক্তির দ্বারা সম্ভব ছিল তাঁকে বধ করা। তাই ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব শক্তি দ্বারা সৃষ্ট নারীশক্তি সিংহবাহিনী মা দুর্গা মহিষাসুরকে পরাজিত করে হত্যা করেন। এভাবেই দেবীর আগমণ ঘটে মর্ত্যে।