সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বারুইপুর জমিদারবাড়িতে বসেই ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাস লেখা শুরু করেন। জমিদারি ছিল বারুইপুর থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তৃত। তিনশো বছরেরও প্রাচীন এই পুজো।
সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও বারুইপুরের জমিদার বাড়িতে একবার সময় কাটিয়েছিলেন । এই বাড়িতে বসেই তিনি ‘দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাস লেখা শুরু করেন । সাহিত্য সম্রাট যে টেবিল, চেয়ারে বসে লিখেছিলেন সেটি এখনও যত্নে রাখা আছে জমিদার বাড়িতে । ঐতিহাসিক বারুইপুর জমিদারবাড়ির পুজো নিয়ে লিখেছেন, সংবাদ প্রতিনিধি অনিরুদ্ধ সরকার।
পুজোর ইতিহাস-
তিনশো বছরেরও প্রাচীন এই পুজো । রাজা রাজবল্লভ রায়চৌধুরী রাজবাড়িতে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেছিলেন। তিনজন পুরোহিত মিলে দুর্গাপুজো করেন । প্রতিপদ থেকে শুরু হয় পুজো । সপ্তমী থেকে নবমী নিশি পর্যন্ত প্রতিদিন বলি হয় । নিয়ম মেনে ছাগ বলি হয় ওই তিনদিন । অষ্টমীর দিনে রাজ পরিবারের ছিড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভিন দেশের সদস্যরাও একত্রিত হন রাজবাড়িতে । পরিবারের মহিলা সদস্যদের বিশ্বাস, পরিবারের বিবাহিত মহিলারা ওইদিন মিলে মিশে অষ্টমীর ভোগ খেলে পরিবারে সুখ শান্তি বিরাজ করে । একসময় জমিদার বাড়িতে নৈবেদ্যর ডালা সাজিয়ে প্রজারা আসতেন । এখন তা অতীত।
রাজবাড়ির ইতিহাস-
এই রাজবাড়ি শতাব্দী প্রাচীন । বারুইপুরের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, তৎকালীন নবাবের কাছ থেকে সুবিস্তৃত এলাকা যৌতুক হিসেবে পান জমিদার রাজবল্লভ চৌধুরী । এক বিঘা দুই বিঘা নয়, জমিদারি ছিল বারুইপুর থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত বিস্তৃত । চৌধুরী পরিবার পরবর্তীকালে রায়চৌধুরী উপাধি পান । রাজা রাজবল্লভ রায়চৌধুরী লর্ড কর্নওয়ালিসের জমানায় বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে এক পেল্লাই রাজবাড়ি তৈরি করান । কী না হত সেই রাজবাড়িতে ? বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ । তার প্রায় প্রত্যেকটিই পালিত হত রাজকীয় ভাবে । দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে রথযাত্রা।
নীলকণ্ঠ ওড়ানোর রেওয়াজ-
প্রতিবছর বারুইপুর আদি গঙ্গার জলে প্রতিমার বিসর্জনের সময় দুটি করে নীলকন্ঠ পাখি ওড়ান বারুইপুর রায়চৌধুরী বাড়ির কর্তারা। যদিও নীলকন্ঠ পাখি ধরা বা কেনা আইনত দণ্ডনীয়। তবুও বাপ ঠাকুর্দার আমল থেকে চলে আসা ঐতিহ্য ছাড়তে নারাজ রায়চৌধুরীরা।
দশমীর বিসর্জনের রীতি-
রীতি মেনে বারুইপুরে প্রতি বছরই রায়চৌধুরীদের প্রতিমা সবার আগে বিসর্জন হয়। তারপর অন্যান্য প্রতিমা বিসর্জিত হয়।
রাজবাড়িতে অলৌকিক উপস্থিতি-
এখানে বেশ কয়েকটি ঘর রয়েছে যেগুলি যুগ যুগ ধরে তালাবন্ধ হয়ে পড়ে আছে । খোলা হয় না কখনও । তার মধ্যে একটি ঘর নাকি রানির অর্থাৎ জমিদার গিন্নির । একটি ছোট সিঁড়ি আছে । সেই সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে অনেকেই নানা অনুভূতির শিকার হয়েছেন । অনেক অভিনেতা ও অভিনেত্রী এবিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় লিখেছেন। সন্ধে নামলেই যেন মনে হয় দু‘টি চোখ চোখে চোখে রাখছে । দিনের বেলাতেও বেশ নিঝুম রাজবাড়ি চত্বর । বন্ধ ঘরের দিকে কেউ ভুলেও পা বাড়ায় না ।
জমিদার বাড়ির সাবেকী দুর্গাপুজো দেখতে ফি বছর বারুইপুর রাস মাঠের কাছে রায়চৌধুরীদের ঠাকুর দালানে ভিড় জমান আবালবৃদ্ধবনিতা। শুধু বারুইপুর, সোনারপুর নয়, সূদূর জয়নগর, মন্দিরবাজার, কুলতলি থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী আসেন তিনশো বছরের বেশি প্রাচীন এই এই দুর্গাপুজো দেখতে।
আরও পড়ুন-
রাসমণির বাড়ি হয়ে বিশ্বাস পরিবার, রানির মেয়েদের পরম্পরায় দুর্গাপুজোর নাম এখন ‘তিন বাড়ি’-র পুজো
জার্মানি থেকে আসত দেবী দুর্গার গয়না, বন্দুক তৈরির ব্যবসায় প্রভূত লাভের অর্থে শুরু হল দাঁ বাড়ির ঐতিহ্যশালী পুজো
শাড়ি পরে দুর্গাপুজো করেছিলেন শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, রানি রাসমণির বাড়ির পুজোতে এসেছিলেন রবি ঠাকুরও