তাঁর অভিনয় বাংলা চলচ্চিত্রে এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিল। সিনেমাপ্রেমী বাঙালিদের সিনেমাহল মুখি করে তুলেছিল যার অভিনয় তিনি আর কেও নন সবার প্রিয় 'মহানায়ক'। 'দেয়া নেয়া' থেকে শুরু করে 'সপ্তপদী', 'হারানো সুর', 'নায়ক', 'ওগো বধু সুন্দরী', এই সব সিনেমায় তাঁর অভিনয় দর্শকদের মন কেড়েছিল। আজ সেই মহানায়কের ৯৩তম জন্মবার্ষিকী।
১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। কলকাতার সাউথ সাবার্বান স্কুল থেকে পড়াশোনার পরে গোয়েঙ্কা কলেজে ভর্তি হন। তবে গ্র্যাজুয়েশান শেষ করতে পারেননি তিনি। পড়াশোনার সময় থেকেই কলকাতা পোর্টে চাকরি করতে শুরু করেছিলেন। পরে অভিনয়ের প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ, তাঁকে সেই দিকেই নিয়ে যায়। সেই সময় চলচ্চিত্রের তেমন ভবিষ্যত না থাকায়, প্রথম দিকে তাঁকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছিল। পরে অবশ্য আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
সকলের প্রিয় মহানায়ক উত্তম কুমারের অসল নাম ছিল অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। পরে অবশ্য তিনি উত্তম কুমার নামেই জনপ্রিয়তা পান। তিনি তাঁর সম্পূর্ণ কর্মজীবনে দুশোটিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। তাঁর মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ছিল 'দৃষ্টিদান'। ছবিটির পরিচালক ছিলেন নিতীন বসু। এর আগেও তিনি একটি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তবে সেই ছবিটি মুক্তি পায়নি। তাঁর অভিনিত বসু পরিবার চলচ্চিত্রটি সর্বপ্রথম দর্শকদের নজর কাড়ে। এর পরে 'সাড়ে চুয়াত্তর' ছবিতে তাঁকে ও সুচিত্রা সেনকে এক সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা যায়। সেই ছবি থেকেই তাঁদের জুটি দর্শকদের মন জয় করে নেয়।
উত্তম- সুচিত্রার সেই জুটি সেই সময় সবথেকে সফল জুটি ছিল। তাঁরা এক সঙ্গে অনেক সিনেতে অভিনয় করলেও তাঁদের দুটির সবথেকে সফল সিনেমাগুলি হল- 'সপ্তপদী', 'হারানো সুর', 'সাগরিকা', 'জীবন তৃষ্ণা', 'পথে হল দেরী', 'চাওয়া পাওয়া', 'বিপাশা' এছা্ড়াও আরও অনেক।
বাংলার চলচ্চিত্রের পাশাপাশি তিনি বেশ কিছু হিন্দি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছিলেন। হিন্দিতে তাঁর অভিনিত জনপ্রিয় চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে অন্যতম ছবি গুলি হল 'ছোটিসি মুলাকাত', 'অমানুষ', 'আনন্দ আশ্রম' প্রভৃতি। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত দুটি ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। প্রথমটি 'নায়ক' ও দ্বিতীয়টি 'চিড়িয়াখানা'। ব্যোমকেশ বক্সীর ভূমিকায় তাঁকে 'চিড়িয়াখানা'-তে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়াও তাঁর অসংখ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে আছে 'সবার উপরে', 'সাহেব বিবি গোলাম', 'জীবন', 'বন্ধু', 'দুই ভাই', 'চাওয়া পাওয়া', 'অবাক পৃথিবী', 'সন্ন্যাসি রাজা', 'উত্তর মেঘ', 'তিন অধ্যায়' প্রভৃতি। অভিনেতার সেই সময়টাকে চলচ্চিত্র জগতের স্বর্ণযুগ বলে মনে করা হয়। তিনিই প্রথম অভিনেতা যিনি তাঁর অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা হিসাবে পুরষ্কৃত হয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি অভিনয়ের জন্য অসংখ্য পুরষ্কারও পেয়েছিলেন। তাঁর এই অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা তাঁকে মহানায়ক করে তুলেছিল।
দিনটা ছিল ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই দেহাবসান ঘটে কালজয়ী এই অভিনেতার। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিল টলিপাড়া থেকে শুরু করে তাঁর ভক্তরাও। হাজার মানুষের ভিড় জমেছিল মহানায়ককে শেষ বিদায় জানাতে। আজও তাঁর অভিনয়, তাঁর চমকপ্রদ আবিষ্কার তাঁকে বাঙালির মনে চিরস্মরনীয় করে রেখেছে।