হরিয়ানার ছোট্ট শহর থেকে মুম্বইয়ের রাজপথ-প্রাণখোলা হাসির ছবি হয়ে রয়ে যাবেন সতীশ কৌশিক

সতীশ কৌশিক, যিনি প্রায়শই সবাইকে হাসাতেন তাঁর ব্যবহার আর সংলাপে-জীবনে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিলেন একটা বড় দুঃখ, যা কাটিয়ে উঠতে তাঁর কয়েক বছর লেগেছিল। সে সম্পর্কে কতজনই বা জানি।

Web Desk - ANB | Published : Mar 9, 2023 3:34 AM IST

এভাবেও থেমে যেতে পারে একটা দিলখোলা হাসি! এভাবেও থামতে পারে একটা জীবন! হয়তো এভাবেই থামে। নয়তো চলন্ত গাড়িতে হার্ট অ্যাটাক আর বেশি সময় না নিয়ে হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ। বলিউড থেকে এরকম জীবন্ত বিদায় আর কজনই বা নিয়েছেন! কি নামে ডাকবেন তাঁকে? অভিনেতা, চিত্রনাট্যকার, পরিচালক নাকি থিয়েটারের দুনিয়ার অন্যতম শক্তিশালী চরিত্র? সতীশ কৌশিক চলে গেলেন এরকমই অনেক নাম নিয়ে। বৃহস্পতিবার ভোররাতে মারা যান তিনি। ৬৬ বছর বয়সে পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে বলিউড ছাড়লেন এই অভিনেতা। যার মুখের হাসি থেকে যাবে সারা দেশের ভক্তের মনে।

তাঁকে শেষ দেখা গিয়েছিল ওটিটিতে মুক্তি পাওয়া রকুল প্রীত সিংয়ের ছবি 'ছত্রিওয়ালি'-তে। সতীশ কৌশিককে প্রায়ই পর্দায় কমেডি চরিত্রে দেখা যেত। সতীশ কৌশিক, যিনি প্রায়শই সবাইকে হাসাতেন তাঁর ব্যবহার আর সংলাপে-জীবনে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিলেন একটা বড় দুঃখ, যা কাটিয়ে উঠতে তাঁর কয়েক বছর লেগেছিল। সে সম্পর্কে কতজনই বা জানি।

১৯৯০ সালে সতীশ কৌশিকের ছেলে সানু মাত্র দুই বছর বয়সে মারা যায়। ছেলের মৃত্যুতে তিনি এতটাই মর্মাহত হন যে তিনি একা থাকতে শুরু করেন। এই দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি পেতে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে শুরু করেন। এই দুঃখ কাটিয়ে উঠতে তার কয়েক বছর লেগেছিল। প্রায় ১৬ বছর পর, ২০১২ সালে, সারোগেসির মাধ্যমে সতীশ কৌশিকের মেয়ে বংশিকা জন্মগ্রহণ করেন। মেয়ের জন্ম নিয়ে সতীশ কৌশিক বলেছিলেন সব কষ্টের শেষ, আমাদের কাছে আমাদের সন্তান আবার এসেছে।

হরিয়ানার মহেন্দরগড়ে ১৩ এপ্রিল ১৯৫৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন সতীশ কৌশিক। তার পরিচালনা এবং কমেডি চরিত্র দিয়ে দর্শকদের হৃদয়ে একটি বিশেষ জায়গা তৈরি করেছিলেন এই অভিনেতা। সতীশ কৌশিক ১৯৭২ সালে দিল্লির কিরোরি মাল কলেজ থেকে স্নাতক হন। এছাড়াও তিনি ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা অ্যান্ড ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার ছাত্র ছিলেন। বলিউডে কেরিয়ার শুরু করার আগে তিনি থিয়েটারে কাজ করেছিলেন।

সতীশ কৌশিক ১৯৮৩ সালে শেখর কাপুরের ছবি 'মাসুম' দিয়ে একজন সহকারী পরিচালক হিসাবে তার চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করেছিলেন, 'জানে ভি দো ইয়ারন' ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি একজন সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেছিলেন। এই ছবির সংলাপও লিখেছেন তিনি। রূপ কি রানি চোরন কা রাজা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি তার পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

১৯৯০ সালে 'রাম লখন' এবং ১৯৯৭ সালে 'সাজন চলে সাসুরাল'-এর জন্য ফিল্মফেয়ার পুরস্কার (সেরা কমেডিয়ান) জিতেছিলেন। থিয়েটার অভিনেতা হিসেবে তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত ভূমিকা ছিল হিন্দি নাটক 'সেলসম্যান রামলাল'-এ। পরিচালক হিসেবে তাঁর প্রথম ছবি ছিল রূপ কি রানি চোরো কা রাজা (১৯৯৩), যার প্রধান ভূমিকায় ছিলেন শ্রীদেবী।

পরিচালক হিসেবে তার প্রথম হিট ছবি 'হাম আপকে দিল মে রেহতে হ্যায়', যেটি ১৯৯৯ সালে মুক্তি পায়। ২০০৫ সালে, সতীশ কৌশিক অর্জুন রামপাল, আমিশা প্যাটেল এবং জায়েদ খান অভিনীত ভাদা চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন। ২০০৭ সালে, কৌশিক অনুপম খেরের সাথে করোলবাগ প্রোডাকশন নামে একটি নতুন চলচ্চিত্র সংস্থা শুরু করেন। এই ব্যানারে প্রথম ছবি ছিল সতীশ কৌশিক পরিচালিত তেরে সঙ।

সতীশ কৌশিক তার কর্মজীবনে প্রায় ১০০টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। ভক্তরা তার কমেডি পছন্দ করেছিলেন। একজন চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসাবে, তিনি ১৯৮৭ সালের 'মিস্টার ইন্ডিয়া' চলচ্চিত্রের ক্যালেন্ডার চরিত্রের জন্য স্বীকৃতি পান। এরপর ১৯৯৭ সালে দিওয়ানা মাস্তানায় পাপ্পু পেজারের ভূমিকায় অভিনয় করেন। সতীশ কৌশিক 'রাম-লখন' এবং 'সাজন চলে সসুরাল' ছবির জন্য দুবার শ্রেষ্ঠ কমেডিয়ানের ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও জিতেছেন। অভিনেতার আকস্মিক মৃত্যুতে শোকাহত সবাই। সতীশ কৌশিক তার স্ত্রী শশী কৌশিক এবং কন্যা বংশিকাকে রেখে গেছেন।

Share this article
click me!