মিলবে কি অর্থ, অনিশ্চিয়তা মেঘ নিয়ে এখনও সংশয়ে সুব্রতরঞ্জন

  • ডিরেক্টর সুব্রতরঞ্জন দত্ত থেকে নিরাপত্তারক্ষী
  • সংসারে অভাবের কারণে এখন এই পেশা 
  • ১৯৭৪ সালে সিনেমা জগতে প্রবেশ সুব্রতবাবুর
  • কাজ করেছেন ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে

একটা খবরেই এখন বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির অন্দর-মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সুব্রতরঞ্জন দত্ত। ঋত্ত্বিক ঘটক, শশধর মুখোপাধ্যায়-দের সংস্পর্শে কাজ করা সুব্রতরঞ্জনের প্রৌঢ় বয়সে নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি গ্রহণের খবর এখন মুখে-মুখে। এশিয়ানেট নিউজ বাংলার সঙ্গে মোবাইলে সরাসরি কথা হয় এই পরিচালকের। তিনি জানান, নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে একটি আবাসনের গেটে তাঁর দাঁড়িয়ে থাকার খবরটা সকলেরই কাছেই পৌঁছেছে। তাঁর কাছে মুহূর্মূহ ফোনও আসছে। অনেকেই অনেক প্রস্তাব দিয়েছেন কাজ শুরু করার। নতুন আশায় মন ভরে উঠেছে ঠিকই, কিন্তু অনিশ্চিয়তা ফের মন দুলে উঠেছে সুব্রতরঞ্জনের। তাঁর মতে, সিনেমা বানানোর কাজের থেকেও তাঁর বেশি প্রয়োজন অর্থের। কারণ, সিনেমা বানানোর সৃষ্টিশীলতায় মেতে থাকতে গিয়ে পরিবারের জন্য আর্থিক নির্ভরতা সেভাবে গড়ে তোলাই সম্ভব হয়নি। যার ফলে, তাঁকে ৬২ বছর বয়সে সিকিউরিটি গার্ডের কাজ করতে হচ্ছে। ঘরে স্ত্রী ও এক মেয়ে এবং তাঁর নিজের পেট চালাতে সিকিউরিটি গার্ডের এই কাজটা খুবই দরকার। তাই খবরের শিরোনামে থেকেও এখনও অনিশ্চিয়তার কালো মেঘেই মন আচ্ছন্ন হয়ে রয়েছে সুব্রতরঞ্জনের। 

ঋত্ত্বিক ঘটক-এর 'যুক্তি-তর্ক-গপ্প'-তে শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করা সুব্রতরঞ্জনের খবরটি প্রকাশ করে সর্বভারতীয় একটি বাংলা দৈনিক। সেখান থেকেই দাবানলের মতো ছড়িয়ে যায় এই খবর। অনেকেই বিষ্ময় প্রকাশ করেন। সুব্রতরঞ্জন দত্ত বাংলা চলচ্চিত্র আঙিনায় যথেষ্টই পরিচিত মুখ। ১৯৭৪ সালে সিনেমা জগতে প্রবেশ সুব্রতবাবুর। প্রথম গুরু ছিলেন শঙ্কর ভট্টাচার্য,যিনি 'দৌড়' সিনেমার জন্য পরিচিত। তারপরে স্বনামধন্য পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের সঙ্গে  'যুক্তি তক্কো আর গপ্পো' সিনেমাতে শিক্ষানবীশ হিসাবে কাজ শুরু করেন। এছাড়া সহকারী পরিচালক হিসাবেও কাজ করেছেন সুব্রতবাবু। মুম্বইয়ের শশধর মুখোপাধ্যায়ের প্রোডাকশন হাউসেও কাজ করেছেন। একক পরিচালনা হিসাবেও সুব্রতবাবু হাত পাকিয়েছেন। ২০১৬ সালে আদিবাসীদের জীবন-যাত্রা নিয়ে তৈরি 'প্রবাহিণী',যা নন্দনে মুক্তি পায়। ছবির ভাবনা ছিল জাত বড় না মানুষ বড়। তারপর 'কলি' নামে একটি সিনেমা পরিচালনা করেন কিন্ত সেই ছবি আজ অবধি মুক্তির পথ দেখেনি। সুব্রতরঞ্জন এর কথায় ' আমি চাই বিষয়ভিত্তিক সিনেমা বানাতে', যা সমাজের কাজে আসবে। এছাড়া তার কথায় বাংলা সিনেমার রুপ বদলের সুরও উঠে আসে।

Latest Videos

এশিয়ানেট নিউজ বাংলার সঙ্গে কথোপকথনে সুব্রতরঞ্জন জানান, 'কয়েক বছর ধরে বসে রয়েছি,হাতে কাজ নেই, কিছু তো করতে হবে, তাই শেষে এই কাজ। কোনও কাজ-ই ছোট নয়।'  তিনি বলে চলেন, ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতি আজ-ও সতেজ তাঁর মনে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর 'যুক্তি তক্কো আর গপ্পো'- র সেটে দাঁড়িয়ে ওনার কাজ দেখতেন সুব্রতরঞ্জন। শিক্ষানবিশ হিসাবে কাজ করেছিলেন সিনেমার প্রোডাকশন ইউনিটে। সময় পেলেই চিত্রনাট্য নিয়ে ভাবতে বসেন তিনি। এই মুহূর্তে তিনি ভেবেছেন এক চিত্রনাট্যের কথা যার বিষয়-বস্তু হল মানুষ। মুক্তামনা মানুষ হলেই মানব জন্ম সার্থক। বরাবরই অন্যরকম ধারার চিন্তা সুব্রত-র মনে, আর তা দিয়েই তিনি ফুটিয়ে তুলতে চান সিনেমা। 

বয়স ৬২ পেরিয়েছে সুব্রতরঞ্জনের। কালো চুলে এখন সাদা ছোপ। ভিআইপি রোডে-র নিচে কয়লা বিহার আবাসনে  নিরাপত্তারক্ষীর পোশাক পরে ডিউটি করতে করতে সুব্রতরঞ্জনের মনে জেগে ওঠে অনেক ভাবনাই। কিন্তু ভাবনা থাকলে তো হবে না। তাতে অর্থ না থাকলে কী হতে পারে তা এখন বুঝতে পারেন সুব্রতরঞ্জন। আর তাই হাজারো মুক্তির ডাকে এখনও তাঁর মনে একটা প্রশ্নই বারবার উঁকি দেয়- দু'বেলা তিনটি প্রাণির ভরপেট খাওয়া জুটবে তো! সাহিত্যিক মিল্টন সৃষ্টিশীলতায় নিজের চোখ অন্ধ করে ফেলেছিলেন। সুব্রতরঞ্জনও সৃষ্টিশীলতায় মেতে থাকতে থাকতে পৌঁছে গিয়েছেন সিকিউরিটি গার্ডের জীবনে। বাংলা চলচ্চিত্র ক্ষেত্রের এই ছবি কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল তা নিয়ে তাত্ত্বিকরা তর্কযুদ্ধে নামতেই পারেন। কিন্তু, সস্তা-দক্ষিণী ছবির রিমেক করে বাজার টিকিয়ে রাখা বাংলা ছবির বাজারে সুব্রতরঞ্জনের মতো মানুষদের হারিয়ে যাওয়াটা নিশ্চয় ভালো বিজ্ঞাপন নয়।  
 

Share this article
click me!

Latest Videos

'ওদের চুলকানি হয়েছে, ভারত ওষুধ দিয়ে দেবে' | Suvendu Adhikari | #shorts |
Kaustav Bagchi: স্যালাইন কাণ্ডে কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা কৌস্তব বাগচীর, দেখুন কী বলছেন তিনি
'ওদের চোখের জলে ধ্বংস হয়ে যাবে মমতা' | Suvendu Adhikari | #shorts | #shortsvideo | #shortsfeed |
Rashifal Today : মকর সংক্রান্তিতে আপানার ভাগ্য কি বলছে? দেখুন আজকের রাশিফল | Makar Sankranti 2025
সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে পাল্টা দিলেন শুভেন্দু, দেখুন কী বলছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা । Suvendu Adhikari