ছাত্র স্বপনকে সুযোগ দিতে হেমাঙ্গর সঙ্গে অনুষ্ঠানে নাম সরান দেবব্রত, পরে তা চিঠিতে লিখে যান শম্ভু মিত্র

  • শম্ভু মিত্র ও দেবব্রত বিশ্বাসের জন্ম একই দিনে তবে চার বছরের ব্যবধানে
  • জাতীয় রঙ্গমঞ্চ গড়ার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন শম্ভু মিত্র
  • তবে দুজনেরই বেড়ে ওঠা ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের আবহে
  • দুজনেই সরে গিয়েছিলেন গণনাট্য সঙ্ঘের আওতা থেকে

Tapan Malik | Published : Aug 22, 2020 11:45 AM IST

শম্ভু মিত্র ও দেবব্রত বিশ্বাসের জন্ম একই দিনে তবে চার বছরের ব্যবধানে। শম্ভু মিত্রের জন্ম কলকাতার ভবানীপুর অঞ্চলে আর দেবব্রত বিশ্বাস জন্মেছিলেন পুর্ববঙ্গের কিশোরগঞ্জে। তবে দুজনেরই বেড়ে ওঠা ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের আবহে। কিন্তু দুজনেই সরে গিয়েছিলেন গণনাট্য সঙ্ঘের আওতা থেকে। প্রাতিষ্ঠানিক স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হয়ে দেবব্রত বিশ্বাস জীবনের শেষ দশ বছর রবীন্দ্রনাথের গান গাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। আর শম্ভু মিত্র প্রয়াণের প্রায় দু'দশক আগেই তাঁর সৃজনের ক্ষেত্র থেকে অন্তরালে সরে গিয়েছিলেন। 

৪৬-এর দাঙ্গার সময় সদ্য বিবাহিত শম্ভু ও তৃপ্তি মিত্র আশ্রয় পেয়েছিলেন দেবব্রত বিশ্বাসের রাসবিহারী অ্যাভেনিউ-র বাসা বাড়িতে। এ সব কথা সবারই কম বেশি জানা। এবার যে ঘটনার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করছি সেটা রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী স্বপন গুপ্তের কাছে শোনা ২০১১ সালে। সে বছর দেবব্রত বিশ্বাসের জন্ম শতবর্ষ। স্বপন গুপ্ত দেবব্রত বিশ্বাসের অন্যতম প্রিয় ছাত্র ও বিশেষ স্নেহের পাত্র ছিলেন। স্বপন গুপ্ত তাঁর মাস্টারমশায়ের নানা কথা বলতে বলতে জানিয়েছিলেন, তখন কলকাতায় একটি জাতীয় রঙ্গমঞ্চ গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যার অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন শম্ভু মিত্র। মূলত তাঁরই পরিকল্পনায় এবং উদ্যোগে ওই মঞ্চ তৈরির জন্য কলকাতায় একটি ফান্ড রেইজিং প্রোগ্রাম হবে ঠিক হয়েছে। 

Latest Videos

স্বপন গুপ্ত বলেন, 'আমি এই অনুষ্ঠানের কথা মাষ্টারমশায়ের মুখেই শুনেছিলেম। তিনিই আমাকে বললেন, ওই অনুষ্ঠানে গান গাইবেন বিখ্যাত লোকসঙ্গীত ও গণসঙ্গীত শিল্পী হেমাঙ্গ বিশ্বাস আর আমি, মানে মাষ্টারমাশায়। মনে মনে খুবই উত্তেজনা অনুভব করলাম কারণ, এমন অনুষ্ঠান এ শহরে এর আগে হয়েছে বলে আমার জানা নেই আর আগামী দিনেও সম্ভবনা খুবই কম। তাছাড়া তখন মাষ্টারমশায় বহু অনুরোধে কোনও অনুষ্ঠানে গান গাইতে হাজির হলেও একটা বড়জোর দুটি গান গাইতেন। এই অনুষ্ঠানে তিনি গাইবেন একটি অর্ধজুড়ে। তার মানে অন্তত দশবারোটি গান। হয়ত দুজনে মিলেও গাইবেন এমন কয়েকটি গান যা এর আগেও শোনা হয়নি আর হবেও না'।

কথায় কথায় তাঁর মাষ্টারমশায় সম্পর্কে আরও কিছু কথা বললেন স্বপন গুপ্ত। তারপর আবার ফিরে গেলেন সেই অনুষ্ঠানের কথায়। বললেন, 'এর কয়েকদিন পরে আমার একটি টেলিফোন আসে। আমি হ্যালো বলার পর উলটো দিকে থেকে জানান, তিনি সবপন গুপ্তের সঙ্গে কথা বলতে চান। কণ্ঠস্বরটি আমার পরিচিত, আমি আশ্চর্য এক ভয় এবং অবিশ্বাস মেশানো অনুভূতিতে কথা বলতে পারি না। আমার সাড়া না পেয়ে তিনি আবার বলেন যে তিনি স্বপন গুপ্তের সঙ্গে কথা বলতে চান। আমি তখন বলি হ্যাঁ আমি স্বপন গুপ্ত। উনি বলেন, 'আমি শম্ভু মিত্র বলছি'। 

কয়েক মিনিট নীরব থেকে স্বপন গুপ্ত আবার বলতে শুরু করেন। 'শম্ভু মিত্র আমাকে বললেন, ওই অনুষ্ঠানে আমাকে বেশ কয়েকটি গান গাইতে হবে। আমি অবাক হয়ে চুপ করে থাকি। আমি তখন কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমি চুপ করে থাকাতে উনি ফের আমাকে জিঙ্গাসা করেন আমি রাজি কিনা। আমি দু-তিন বার বলি হ্যাঁ...। কেন মাষ্টারমশায় নন, কেন আমি? সে কথা জানতে চাওয়ার স্পর্ধা আমার সেদিনও ছিল না আজও নেই। তাই আমি সে কথা মাষ্টারমশায়ের কাছে কোনওদিন জানতে চায় নি। তবে পরে জেনেছিলাম। 

সেদিনের অনুষ্ঠানে মাষ্টারমশায়কে স্মরণ করে একের পর এক গান গেয়েছিলাম। বুঝতে পারছিলাম ভাল গাইছিলাম। শ্রোতারাও মন দিয়ে শুনছিলেন আমার গান। অনুষ্ঠান শেষে শম্ভু মিত্র আমাকে অনেক আশীর্বাদ করে হাতে একটা চিঠি দিয়েছিলেন। 
জেনেছিলাম মাষ্টারমশায়ই শম্ভু মিত্রকে বলেছিলেন, তিনি নন স্বপন গুপ্ত গাইবে ওই অনুষ্ঠানে। শম্ভু মিত্রও নাকি কোনও প্রশ্ন করেন নি। কেন মাষ্টারশায় সেদিন গান গাইলেন না, কেন আমাকে দিয়ে গাওয়ালেন? এর উত্তর আমি আমার মতো করেই জেনেছি এবং বুঝেছি। আর আপনারা?

Share this article
click me!

Latest Videos

৫০০০ টাকা ধার শোধ করতে না পারায় যা ঘটল! দুপক্ষই থানার দ্বারস্থ | Berhampore News Today | Bangla News
Live: আবাস যোজনার বাড়ি নিয়ে তৃণমূলকে তুলোধোনা বিজেপির, দেখুন সরাসরি
সিঙ্গুরের রাস্তায় জগদ্ধাত্রী শোভাযাত্রায় পা মেলালেন সাংসদ রচনা ব্যানার্জী! | Jagadhatri Puja 2024
Virat Kohli: ৫০ ফুটের বিরাট! কোহলির ৩৬ তম জন্মদিন পালনে সাঁতরাগাছিতে মহোৎসব! | Howrah News Today
ঘটনাকে চাপছে কারা! কার ভয়ে মুখ খুলছে না সঞ্জয়! ভালো করে দেখুন | RG Kar Case | Kolkata Doctor News