পরপর ৪টি ফাইনালে হার। অবশেষে ৫ নম্বর ফাইনালে এসে সাফল্য পেলেন নিওনেল মেসি। কোপা আমেরিকা ফাইনালে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল আর্জেন্টিনা। একইসঙ্গে স্বপ্নপূরণ হল মেসির।
শুধু ব্রাজিল নয়, মেসির স্বপ্ন-ইচ্ছে-জেদের কাছে হার মানল রূপকথার চিত্রনাট্য়ও। ক্লাব ফুটবলে হেন কিছু নেই যা অধরা ছিল মেসির। লা লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, কোপা দেল রে, ব্যালন ডিঅর সব কিছুই ছিল তার ক্যাবিনেটে। কিন্তু দেশের জার্সি গায়ে ট্রফিটাই অধরা ছিল। একের পর এক ফাইনালে হার, চূড়ান্ত সমালোচনা সব কিছুই বয়ে বেডডাতে হচ্ছিল আধুনিক ফুটবলের জাদুকরকে। কিন্তু মেসি হয়তো নিজেও জানতেন না তার রূপকথার চিত্রনাট্যটা লেখা হয়েছে একটু অন্য আঙ্গিকে। অবশেষে ট্রফি এল মেসির ঘরে। আর তাও আবার ফাইনালে চিরপ্রতীদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে। এই জয় যে আর্জেন্টিনার ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কোপা আমেরিকার ফাইনালে ঘরের মাঠে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে লড়াইটা মোটেই সহজ ছিল না। প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই লিওনেল মেসি ও লিওনেল স্কালোনি জুটি পরিকল্পনা মাফিক দলটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। ফাইনালে দি মারিয়ার গোলে ১-০ গোলে জয় পায় আর্জেন্টিনা। ফাইনালে মেসি গোল না পেলেও প্রতিযোগিতায় ৪টি গোল করার সুবাদে গোল্ডেন বুট জেতে মেসি। ট্রফি জয়ের পর মেসির স্বপ্নপূরণের উচ্ছ্বাস ছিল বাঁধভাঙা। তবে এই আনন্দ খুব সহজে আসেনি। দেশের জার্সি গায়ে এনেক ব্যর্থতা, চোখের জল, অবসর ঘোষণা, অবসর ভেঙে ফিরে আসা, প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই, সমালোচকদের বিরুদ্ধে লড়াই, নিজের বিরুদ্ধে লড়াই, সবশেষে এই দিন। মেসির স্বপ্নপূরণে আরও একবার ফিরে দেখা দেশের জার্সিতে ফাইনালে মেসির ব্যর্থতা থেকে সাফল্যের ইতিহাস।
২০০৭ কোপা আমেরিকা ফাইানাল-
আন্তর্জাতিক ফুটবলে তখন একেবারে তরুণ মেসি। সুপার স্টার তকমাও লাগেনি। ২০০৭ সালের কোপা আমেরিকা ফাইনালে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা। আন্তর্জাতিক মঞ্চে সেটাই ছিল মেসির প্রথম ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা। ৩-০ গোলে ম্যাচ জেতে ব্রাজিল। জুলিও ব্যাপটিস্টা এবং দানি আলভেস একটি করে গোল করেন। অপর একটি আত্মঘাতী গোল করেন আয়লা। ফলে প্রথম ফাইনালেই হারের মুখ দেখতে হয় মেসিকে।
২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল-
২০১৪ বিশবকাপ ফাইনালে জার্মানির বিরুদ্ধে হারের ক্ষতএখনও বয়ে বেড়ান মেসি। সেইবার প্রতিযোগিতার শুরু থেকেই দুরন্ত ছন্দে ফুটবল খেলছিল আর্জেন্টিনা। একের পর এক ম্যাচ জিতে ফাইনালে জার্মানির মুখোমুখি হয়েছিল মেসির দল। নির্ধারিত সময়ে খেলার ফল ছিল গোলশূন্য। অবশেষে অতিরিক্ত সময়ের ১১৩ মিনিটে মারিও গোৎজের গোলে বিশ্বকাপ জেতে জার্মানি। বিশ্বজয়ের তীরে গিয়ে ডোবে মেসির স্বপের তরী।
২০১৫ কোপা আমেরিকা ফাইনাল-
পরের বছরই কোপা আমরিকার ফাইনালে ওঠে মেসির আর্জেন্টিনা। ফাইনালে চিলির বিরুদ্ধে ফেভারিট ধরা হচ্ছিল নীল-সাদা ব্রিগেডকে। কিন্তু অদৃষ্ট তখনও বিরূপ ছিল মেসির। টাই ব্রেকারে চিলির কাছে ৪-১ ব্যবধানে হারতে হয় আর্জেন্টিনাকে। আরও একবার হতাশ মেসি।
২০১৬ কোপা আমেরিকা ফাইনাল-
২০১৬ সালে শতবর্ষের কোপাতেও ফাইনালে সেই চিলির মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময়ে খেলার ফল আবারও গোলশূন্য। টাই ব্রেকারে গোল মিস করেন খোদ লিওনেল মেসিও। ৪-২ ব্যবধানে জয় পায় চিলি। এই হারের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন মেসি। নিজের অবসরও ঘোষণা করেছিলেন। পরে সমর্থকদের ভালোবাসায় অবসর ভেঙে ফিরে এসে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন লিও।
২০২১ কোপা আমেরিকা ফাইনাল-
অবশেষে ২০২১ কোপা আমেরিকা ফাইনাল। নিজের বরপুত্রের দিকে মুখ তুলে চাইলেন ফুটবল ঈশ্বর। চির প্রতীদ্বন্দ্বী ব্রাজিলের বিরুদ্ধে ১-০ গোলে জয় পেল মেসির আর্জেন্টিনা। অধিনায়ক মেসির পাশাপাশি ফাইনালে গোল করে ইতিহাসের পাতায় অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। শুধু বার্সেলোননা নয়, নীল-সাদাতেও সফল হলেন মেসি। সমালোচকরাও আজ মেসি বন্দনা করতে বাধ্য হচ্ছেন। সত্যি মেসির ব্যর্থতা থেকে সাফল্যের লড়াই সকলের কাছে অনুপ্রেরণা। যা শুধু রূপোলি পর্দা নয়, হার মানালো রূপ কথাকেও।