সর্বঋতুর মাঝে এক ঋতুতেই সমৃদ্ধ টলিউড, ৫৮ তম জন্মদিনেও উজ্জ্বল স্মৃতিতে ঋতুপর্ণ ঘোষের ১১ টি জাতীয় পুরষ্কার
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে আজও এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ঋতুপর্ণ ঘোষ। তাঁর কাজ করার ধরণ, তাঁর জীবনযাপন, তাঁর সৃষ্টি, তাঁর কথা বলার ধরণ সবকিছুই যেন আজও আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে। আসলে সৃষ্টির তো মৃত্যু হয় না।
শুধু বাংলা নয় গোটা ভারতীয় চলচ্চিত্রে এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছিলেন ঋতুপর্ণ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তাঁর থেকে বেশি মনে হয় কেউ চিনত না। ২১ বছরের ফিল্ম কেরিয়ারে একাধিক মন ভাল করা ছবি উপহার দিয়েছেন দর্শকদের।
প্রায় ২৬ টা সিনেমার পরিচালনা করেছেন তিনি। যার মধ্যে ১১ টা সিনেমার জন্য জাতীয় পুরষ্কার পেয়েছেন এই কিংবদন্তী শিল্পী ঋতুপর্ণ ঘোষ। ভাল ছবি তৈরি করতে গেলে বড় বাজেটের প্রয়োজন হয় না, তা খুব ভালভাবে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন তিনি।
জেন্ডার বাইনারির বাইরে বেরিয়ে, নারী-পুরুষের সম্পর্ককে আলাদা মাত্রা দিয়েছেন তিনি। আজ ঋতুপর্ণ ঘোষের ৫৮ তম জন্মদিন। তবে সেই মানুষটি আর আমাদের মধ্যে নেই।
২০১৩ সালে তাঁর আকম্বিক চলে যাওয়া, বাংলা চলচ্চিত্র জগতকে ক্ষতবিক্ষত করেছে। চলুন চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক ঋতুপর্ণ ঘোষের জাতীয় পুরষ্কার প্রাপ্ত ছবিগুলি থেকে।
১৯৯২ সালে ‘হীরের আংটি’ ছবির মাধ্যমে পথ চলা শুরু। তাঁর পর গোটা ভারত পেয়েছে একের পর এক চোখ ধাদান ছবি। ১৯৯৫ সালে ‘উনিশে এপ্রিল’ ছবির জন্য প্রথম জাতীয় পুরষ্কার পান।
এরপর ১৯৯৮ সালে ‘দহন’ সিনেমার জন্য দুটি বিভাগে দ্বিতীয় বারের জন্য জাতীয় পুরষ্কার পান। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের নোভেল-এর উপর ভিত্তি করে এই ছবি তৈরি করেন ঋতুপর্ণ। যা দর্শকদের মনে জায়গা করে নিতে বেশি সময় নেয়নি।
দহন সিনেমার পর ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে ৫ বার জাতীয় পুরষ্কার পান ঋতুপর্ণ। ছবিগুলি ছিল ‘অসুখ’, ‘উৎসব’, ‘শুভ মহরৎ’, ‘চোখের বালি’ এবং রেনকোট।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোভেল-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি চোখের বালি ছবিটি বেশ চর্চিত হয়। ছবিতে ঐশ্বর্য রাইয়ের অভিনয় বেশ প্রশংসা পায়। অন্যদিকে ‘রেনকোট’ সিনেমাতে অজয় দেভগন এবং ঐশ্বর্য রাইয়ের প্রেমকে এক আলাদা মাত্রা দেন পরিচালক ঋতুপর্ণ।
ছবিটি সেরা হিন্দি ফিচার ফিল্ম হিসেবে জাতীয় পুরষ্কার পায়। এরপর ২০০৮ থেকে ২০১০ এর মধ্যে ৩ টি সিনেমার জন্য জাতীয় পুরষ্কার পান ঋতুপর্ণ। ছবিগুলি ছিল ‘দ্যা লাস্ট লেটার’, ‘সব চরিত্র কাল্পনিক’ এবং ‘আবহমান’।
২০১২ সালে শেষবারের জন্য জাতীয় পুরষ্কার পেলেন ‘চিত্রাঙ্গদা’ সিনেমার জন্য। খুব তাড়াতাড়ি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন ঋতুপর্ণ। আরও কিছুদিন বেঁচে থাকলে হয়তো বাংলা তথা গোটা ভারত আরও ভাল ছবি উপহার পেত।