ভারতের বাজার দখলে মরিয়া অ্যামাজন, গোপন নথিতে ফাঁস আইন ভেঙে লাভবান হওয়ার ছক
প্রেমে আর যুদ্ধ সবকিছুই ঠিক- অনেকটা এমনই ভেবেছিলেন যে অ্যামাজন ডটকম ইনক-এর এক্সিকিউটিভ জে কার্নি। ভারতে ব্যবসা করার জন্য তিনি সবকিছু করতে চেয়েছিলেন। তেমনই রিপোর্ট হাতে এল সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। যদিও অ্যামাজনের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সালটা ছিল ২০১৯। সেই সময় অ্যামাজনের প্রধান একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। আর ঠিক সেই সময়ই দিল্লিতে ভারত সরকার সবেমাত্র বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের বিধি ঘোষণা করেছিল। যা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অ্যামাজনের ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারত। কিন্তু সেই সবদিক বাঁচাতে মরিয়া প্রয়াস চালিয়েছিলেন অ্যামাজনের প্রধান। ১৩০ কোটির বিপুল বড় বাজার দখল করতে সময় সময় নিজেদের ব্যবসার স্ট্র্যাটেজি বদল করেছিল। সেই সংক্রান্ত একগুচ্ছ তথ্য হাতে এসেছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের। একটি সূত্র দাবি করছে কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাব বুঝেই ব্যবসার পরিকল্পনা বারবার বদল করা হয়েছিল।
সংবাদ সংস্থার দাবি ভারতীয় ছোট ও খুচরো ব্যবসায়ীদের প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দিতে বেনামে নিজেদের মালিকানাধীন সংস্থার মাধ্যমে ব্যবসা চালিয়ে লাভের মুখ দেখতে সক্ষম হয়েছিল। সেক্ষেত্র নীতি আদর্শকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। রয়টার্সের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল তাদের হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বৈঠেকের আগে কার্নি কী বলবেন তার জন্য অ্যামাজনের কর্মীরা একটি নোট তৈরি করেছিল। নথি অনুযাসী ২০১৯ সালে অ্যামাজন প্রধান ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও বৈঠক করেছিলেন।
সেখানে বলা হয়েছিল ভারতে বিনিয়োগের জন্য অ্যামাজন ৫.৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। এটি ৪ লক্ষেরও বেশি ভারতীয়দেরকাছে বিক্রির জন্য একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করেছিল। কিন্তু সেখানে সুবিধে দেওয়া গয়েছিল ৩৩জন বিক্রেতাকে। মোট বিক্রির এক তৃতীয়াং তাদের মাধ্যমে নিজেদের ঘরে তোলে অ্যামাজন।
সংবাদ সংস্থার হাতে আসে তথ্য অনুযায়ী বলা হয়েছে সেই সময় অ্যামাজন প্রধানকে সতর্ক করা হয়েছিল দেশের মোট বিক্রির ৩৫ শতাংশই তারা নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু এই তথ্য সামনে এলে রাজনৈতিকভাবে অ্যামাজনের বিরুদ্ধে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছিল। তবে রাষ্ট্রদূত ও কর্নি ঠিক কোন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবে তা প্রকাশ করা হয়নি।
সংবাদ সংস্থা দাবি করেছে, ক্লাউডটেল যে আদতে অ্যামাজনেরই নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা তাও স্বীকার করা হয়নি ভারত সরকারের কাছে। কার্যত ভারত সরকারের কাছে পুরো বিষয়টি চেপে যাওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের মুখে রয়েছে অ্যামাজন। ভারতের একাধিক কোর্টেও তাদের মামলা অবৈধভাবে চলছে বলে অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রয়টার্সের হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী একটি নোটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নট অ্যান ইন্টেলেকচুয়াল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি তাঁর স্ট্রেট ফরোয়ার্ড মনোভাবের প্রবল প্রশংসা করা হয়েছে। অন্য একটি নোটে দেখা যাচ্ছে কী ভাবে দেশের আইনকানুনকে পাশ কাটিয়ে ব্যবসা করার জন্য কোম্পানির অভ্যন্তরে একাধিক পরিকল্পনা করা হয়েছে। এদেশে ব্যবসা চালিয়ে যাওযার জন্য ছকও কষেছেন অ্যামাজনের আধিকারিকরা। ।