করোনা টিকাদানে ভারতের রেকর্ড কি বিজেপি'র সাজানো নাটক - উঠল গুরুতর অভিযোগ, দেখুন

সোমবার, ২১ জুন তারিখ থেকে ফের ভারতে টিকাকরণের জন্য ভ্যাকসিন সংগ্রহের দায়িত্ব রাজ্যগুলি হাত থেকে ফিরিয়ে নিয়েছে মোদী সরকার। আর প্রথমদিনই যাকে বলে মারকাটারি রেকর্ড। ৮৬ লক্ষেরও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে একদিনে। হঠাৎ কী করে ভারতের করোনা টিকার ছবিটা পাল্টে গেল? রাজ্য সরকার থেকে কেন্দ্রীয় সরকার দায়িত্ব নেওয়ায় একদিনেই কী ঘটল ম্যাজিক? কী করে সম্ভব হল এই রেকর্ড? নিন্দুকরা বলছেন, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির সাজানো নাটক।

 

Asianet News Bangla | Published : Jun 22, 2021 1:15 PM IST

110
করোনা টিকাদানে ভারতের রেকর্ড কি বিজেপি'র সাজানো নাটক - উঠল গুরুতর অভিযোগ, দেখুন

স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন, সোমবার রাতে টুইট করে দাবি করেন, এককদিনে করোনা টিকাদানের ক্ষেত্রে এটা বিশ্বরেকর্ড। প্রধানমন্ত্রীও এই নিয়ে তাঁর আহ্লাদ প্রকাশ করেছিলেন। ৯ জুনের 'নেচার' জার্নাল অবশ্য জানিয়েছিল, চিনে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন দুই কোট করে নাগরিককে টিকা দেওয়া হয়েছে। তাই এটাকে বিশ্বরেকর্ড বলা যাচ্ছে না, তবে ভারতের করোনা টিকাকরণ অভিযানের দিক থেকে দেখলে এটা একটা বিরাট অর্জন অবশ্যই। তবে এতে 'ডাল মে কুছ কালা হ্যায়' বলে দাবি করছেন অনেকে। তাঁদের দাবি, মোদী সরকারের কৃতিত্ব বাড়িয়ে দেখাতে এই রেকর্ড রীতিমতো সাজিয়ে গুছিয়ে 'তৈরি করেছে' বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি। কীভাবে?  

210

সমালোচকদের দাবি, এই রেকর্ড গড়ার মতো যথেষ্ট টিকার ডোজ যাতে মজুত থাকে, তার জন্য বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি আগের কয়েকদিন, ইচ্ছে করে টিকাদানের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছিল। কোউইন অ্যাপের তথ্যেই তা পরিষ্কার।

310

সোমবার, ভারতের এই রেকর্ডে সবথেকে বড় অবদান মধ্যপ্রদেশের। এদিন, শিবরাজ সিং চৌহানের রাজ্য ১৬.৯ লক্ষ ডোজ টিকা দিয়েছে। তার আগের দিন? মধ্যপ্রদেশে টিকা দেওয়া হয়েছিল মাত্র ৬৯২ টি ডোজ! তবে এই 'চেপে টিকা দেওয়া'র কাজ শুরু হয়েছিল ১৭ জুন থেকেই, এমনটাই অভিযোগ। কোউইন অ্যাপের তথ্য বলছে ১৬ জুন যেখানে ৩,৩৮,৮৭৭ ডোজ কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল, ১৭ জুন তা নেমে এসেছিল ১,২৪,২২৬ ডোজে। ১৮ জুন আরও কমে, ১৪,৮৬২ ডোজ এবং ১৯ জুন টিকা এই রাজ্যে দেওয়া হয় ২২,০০৬ ডোজ।

410

গত সপ্তাহের প্রথম তিন দিনে অর্থাৎ ১৩ জুন থেকে ১৬ জুন যেখানে প্রতিদিন গড়ে ২ লক্ষ ২৮ হাজারের বেশি ডোজটিকা দেওয়া হয়েছে, সেখানে পরের তিনদিনে, ১৭ জুন থেকে ২০ জুনের মধ্যে তা ৫০০ শতাংশ কমে দিন প্রতি গড়ে ৪০,৪৪৬-এ নেমে এসেছিল। ১৬ জুনের মতো একই হারে টিকাদান চললে, পরের চার দিনে প্রায় ১৩.৫ লক্ষ ডোজ দেওয়া হতো, বদলে দেওয়া হয় ১.৬ লক্ষ ডোজ। এইভাবেই চার দিনের বেশি সময় ধরে টিকা সংরক্ষণ করে করে, সোমবার ১৭ লক্ষ ডোজের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগ। এখন, মধ্যপ্রদেশের সামনে, এই দৈনিক ১৭ লক্ষ টিকাদানের মান ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ।

 

510

তবে, শুধু মধ্যপ্রদেশই নয়, কোউইন অ্যাপের তথ্য অনুযায়ী, একই ধরণের প্রবণতা দেখা গিয়েছে বিজেপি-শাসিত অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও। সোমবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টিকাদান করেছে কর্ণাটক, ১১.২১ লক্ষ ডোজ। তার ঠিক আগের দিন, ২০ জুন, তারা দিয়েছে মাত্র ৬৮,১৭২ টি ডোজ টিকা। তবে রবিবারে টিকাদানের পরিমাণ সাধারণত কমই থাকে। সেই যুক্তিও এই ক্ষেত্রে খাটছে না। কারণ ঠিক আগের দুই রবিবারেই কর্ণাটকের টিকাদানের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৯৬,৯৫৬ ডোজ (১৩ জুন) এবং ১,২৬,৩৮৯ (৬ জুন) ডোজ।

610

উত্তরপ্রদেশে সোমবার টিকা দেওয়া হয়েছে ৭,২৫,৮৯৮ টি ডোজ। অথচ, রবিবার যোগী সরকার দিয়েছিল মাত্র ৮,৮০০ টি ডোজ, রবিবার দিন যোগী-রাজ্যের গড় টিকাদানের সংখ্যার থেকে ৩৫ শতাংশ কম।

710

প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাত নিয়ে সমালোচকরা অবশ্য সেরকম কিছু বলতে পারেনি। এই রাজ্যেও, রবি ও সোমবারের ভ্যাকসিন দেওয়ার সংখ্যায় তারতম্য রয়েছে, তবে তা তুলনায় অনেক কম নাটকীয়। সোমবার এই রাজ্যে ৫,১০,৪৩৪ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আর, রবিবার দেওয়া হয়েছিল ১,৮৯,৯৫৩ ডোজ। তবে এই সংখ্যাটাও গত ১৭ দিনের মধ্যে সর্বনিম্ন।

 

810

অসমে সদ্য দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেছে ভাজপা সরকার। গত সপ্তাহে টানা চারদিন ধরে টিকাদানের সংখ্য়া ক্রমশ বাড়ার পর, গত রবিবার হঠাৎ করেই তা নেমে দাঁড়িয়েছিল ৩৩,৬৫৪-এ। সোমবার তারা টিকা দিয়েছে ৩,৬০,৭০৭ টি ডোজ টিকা। যা রাজ্যের নিরিখে একক দিনে সর্বোচ্চ করোনা টিকাদানের রেকর্ড।

 

910

বিজেপি-বিহীন রাজ্যগুলিতে কি সোমবার টিকাদানের সংখ্যা বাড়েনি? কিংবা, ২০ জুন টিকাদানের মাত্রা কমেনি? দুটিই হয়েছে। তবে তা স্বাভাবিকের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। যেমন, মহারাষ্ট্রে ২১ জুন ৩,৮৩,৪৯৫ ডোজ করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে। ১৯ জুন তারা দিয়েছিল ৩,৮১,৭৬৫ ডোজ টিকা। কাজেই সোমবার হঠাৎ করে তাদের টিকাদানের সংখ্যা বাাড়েনি। আবার রবিবার, অর্থাৎ ২০ জুন, তাদের টিকাদানের পরিমাণ কমেছিল, দেওয়া হয় ১,১৩,১০৯ ডোজ। তা কিন্তু, আগের রবিবার-এর টিকাদানের পরিমাণ (৮৩,২৭৩) চেয়ে বেশি। রাজস্থান-ও ২১ জুনে মোট ৪.৪৬ লক্ষ ডোজ টিকা দিয়েছে, যা তারা গত ১১ জুনও দিয়েছিল।

1010

প্রথম থেকেই ভারতের কোভিড টিকাকরণ কর্মসূচী, কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জর্জরিত। প্রথমে, কেন্দ্র সরাসরি টিকা-নির্মাতাদের কাছ থেকে ভ্যাকসিন কিনে রাজ্যে রাজ্যে সরবরাহ করছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ-সহ অনেক রাজ্যই টিকা সংগ্রহ প্রক্রিয়ার বিকেন্দ্রীকরণ চেয়েছিলেন। এই অবস্থায়, গত এপ্রিল মাসে নীতি পরিবর্তন করে কেন্দ্র। তবে, বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, কোভিড-১৯'এর দ্বিতীয় তরঙ্গের সময়ে টিকার সংকট দেখা দিয়েছে বলেই, রাজ্যগুলির উপর টিকা সংগ্রহের দায় চাপিয়েছে কেন্দ্র। এরপর, জুন মাসের শুরুতেই কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছিল করোনা টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে তারা পুরোনো নীতিতেই ফিরছে, অর্থাৎ কেন্দ্রই টিকা সংগ্রহ করবে। এবার নয়া অভিযোগ নিয়ে জল কতদূর গড়ায়, সেটাই দেখার।

Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos