করোনা-যোদ্ধা মহিলা ডাক্তারদের কুপ্রস্তাবের বন্যা, অশ্লীলতার সীমা ছাড়ালো পাকিস্তান
বিশ্বজুড়ে মারাত্মক সংক্রামক করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একেবারে সামনের সারিতে রয়েছেন চিকিৎসকরা। সেইসঙ্গে বহু সংখ্যায় স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষ করে মহিলা কর্মীরা এই লড়াইয়ে সামিল হয়েছেন। কেউ কেউ করোনার ভয়ে পিছিয়ে আসতে চাইলেও, সারা পৃথিবীতেই দারণ সাহসের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন এই স্বাস্থ্যকর্মীরা। তবে তাঁদের বোধহয় কল্পনাতেও ছিল না, এই চরম বির্যয়ের সময়েও মহিলা হওয়ার কারণে তাঁদের ইন্টারনেটে ব্যঙ্গ বিদ্রুপের শিকার হতে হবে। তাদের দেওয়া হবে কু-প্রস্তাব, জিজ্ঞেস করা হবে এক রাতের রেট।
amartya lahiri | Published : Apr 4, 2020 7:46 AM IST / Updated: Apr 04 2020, 02:58 PM IST
ভারতেও কোভিড-১৯ আক্রান্তের পরীক্ষা করাতে গিয়ে বা চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে চিকিৎসকদের। নিগৃহিত হতে হয়েছে। আবার গাজিয়াবাদে নার্সদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করার অভিযোগও উঠেছে। এগুলি একেকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু, অশ্লীলতার সব সীমা পার করে দিয়েছে পাকিস্তানিরা।
একের পর এক পাক মহিলা ডাক্তার এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস করছেন, প্রতিনিয়ত কীভাবে তাঁদের মানসিকভাবে যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অন্যান্য অনেক দেশের মতো পাকিস্তানেও এখন লকডাউন চলছে। এরসঙ্গে সেই দেশে কেউ করোনা আক্রান্ত বা তার দেহে করোনার উপসর্গ আছে কিনা, বা করোনাভাইরাস সংক্রমণ সংক্রান্ত যে কোনও জিজ্ঞাসার সমাধানের জন্য, বেশ কয়েকটি চিকিৎসা সংক্রান্ত মোবাইল অ্যাপে অনলাইন পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে ডাক্তার, নার্স এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা মানুষের উদ্বেগ দূর করছেন।
এর আগে এই অ্যাপগুলি ব্যবহার করতে পয়সা লাগত। অর্থাৎ, প্রথমে টাকা দিয়ে এই অ্যাপগুলিতে রোগীর নাম নথিভুক্ত করতে হতো, তারপর অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সেই অ্যাপয়েন্টমেন্ট অনুযায়ী চিকিৎসা পরিষেবা মিলত। এখন এই অ্যাপগুলিকে সাময়িভাবে ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ বিনামূল্যেই পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে। আর মহিলা অনলাইন চিকিৎসা পরিষেবাদানকারীদের অভিযোগ, তারপর থেকেই যেন এই অ্যাপগুলিতে অশ্লীল বার্তার বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
পাক মহিলা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ তাঁরা, অ্যাপ বা অনলাইনের মাধ্যমে সবসময় মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু, এই সময় অধিকাংশ মানুষই রোগীর ছলনায় কথা শুরু করছেন। একটি-দুটি কথার পরই ব্যক্তিগত স্তরে চলে আসছে কথা। জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে মহিলা ডাক্তার বা চিকিৎসাকর্মীদের বয়স, তাদের বৈবাহিক অবস্থা, ব্যক্তিগত ফোন নম্বর। কখনও কখনও সরাসরি যৌনতার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় অশ্লীল ছবি, এমনকী পর্ন সাইটের লিঙ্ক পাঠানো হচ্ছে।
অসুস্থতার ঝুঁকি নিয়েও অনেক মহিলা ডাক্তার করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসায় নিযুক্ত হয়েছেন। অনেককে কাটাতে হয়েছে পারিবারিক, সামাজিক বাধা। এরপর অনলাইনে এই ধরণের কুপ্রস্তাব আসতে থাকায় তাঁরা যে শুধু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছেন তাই নয়, পরিবারের তরফ থেকেও এই কাজ ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ বাড়ছে। এই মহিলা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেই দারুণ প্রতিভাবান। কিন্তু, এই কুৎসিত আচরণের মুখে পড়ে যেমন কয়েকজন মহিলা ওই ব্যক্তিদের মুখের উপর জবাব দিয়েছেন, তেমনই বহু প্রতিভাবান ডাক্তারই কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
তাঁদের অভিযোগ পেয়ে অ্যাপগুলিতে আগের থেকে অনেক কড়া চেকিং-এর বন্দোবস্ত করা হয়েছে। কাদের সত্যি সত্যি প্রয়োজন, আর কারা এই ধরণের কুরুচিকর কাজের জন্য ডাক্তারদের প্রয়োজনীয় সময় নষ্ট করতে চাইছেন তা ধরার অনেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাতে কিছুটা কাজ হলেও, সমস্যাটা পুরোপুরি যায়নি।