লকডাউনে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক ইডেন টেস্টের স্মৃতিচারণায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়
লকডাউনে স্মৃতিচারণায় ২০০১ সালের ঐতিহাসিক ইডেন টেস্টের ভিডিও শেয়ার করলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ফলোঅন খেয়েও কামব্যাক করে টেস্ট ক্রিকেটের তৃতীয় টিম হিসেবে ম্যাচ জেতে টিম ইন্ডিয়া।
লকডাউনে নিজের কেরিয়ারের অন্যতম সেরা ম্যাচের স্মৃতিচারণা করলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক তথা বর্তমান বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তার সময়ের সেরার সেরা মুহূর্তগুলির মধ্যে অন্যতম ২০০১ কলকাতার ইডেনগার্ডেন্সে ভারত-বনাম অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচ। সেই ম্যাচ জয়ের পরের ড্রেসিংরুমের সেলিব্রেশনের ভিডিও শেয়ার করেন সৌরভ।স্টিভ ওয়ার দলের টানা ১৬ টেস্ট জয়ের অশ্বমেধের ঘোড়া থামিয়েছিলেন সৌরভের নেতৃত্বে টিম ইন্ডিয়া। ম্যাচে ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেছিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ ও রাহুল দ্রাবিড়। অনবদ্য বল করেছিলেন হরভজন সিং। ফিরে দেখা যাক টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ম্যাচের কিছু স্মৃতি।
মুম্বই টেস্ট অস্ট্রেলিয়া জেতার পর কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে ছিল সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় স্টিভ ওয়ার অস্ট্রেলিয়া। ৪৪৫ রানের পাহাড় প্রমাণ রান করে ব্যাগি গ্রিণরা। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করেন অজি অধিনায়ক স্টিভ ওয়া। হাফ সেঞ্চুরি করেন ম্যাথু হেডেন ও জাস্টিন লেঙ্গার।
ইডেন টেস্টেও বোলিংয়ের দুরন্ত ফর্ম ধরে রাখেন ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিং। অজিদের প্রথম ইনিংসে টার্বুনেটর একাই নেন ৭টি উইকেট। দুটি উইকেট পান জাহির খান ও একটি উইকেট পান অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রথম ইনিংসে ৪৪৫ রান তাড়া করতে ব্যাটিং বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় ভারতীয় দল। মাত্র ১৭১ রানেই শেষ হয়ে যায় টিম ইন্ডিয়ার ইনিংস। প্রথম ইনিংসে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৯ রান করেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ে ৪টি উইকেট পান গ্লেন ম্যাক গ্রা ও দুটি করে উইকেট পান গিলিসপি, ক্যাসপ্রোউইচ ও শেন ওয়ার্ন।
ম্যাচে ইন্ডিয়াকে ফলোঅন করানোর সিদ্ধান্ত নেন স্টিভ ওয়া। দ্বিতীয় ইনিংসেও ভাল শুরু করতে ব্যর্থ হন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। ১১৫ রানে চলে গিয়েছিল তিন উইকেট। সৌরভ আউট হন যখন ভারতের রান ২৩২। ৪৮ রান করেন ভারত অধিনায়ক।
তখনও কেউ ভাবেননি ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাতে চলেছে এই ম্যাচ। ভিভিএস লক্ষ্মণ ও রাহুল দ্রাবিড় হাল ধরেন ইনিংসের। ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেন ভারতীয় মিডল অর্ডারের দুই স্তম্ভ। ৩৭৬ রানের পার্টনারশিপ করেন দুজন। সেই ১০৪ ওভার হয়তো আজও ভুলতে পারেনি স্টিভ ওয়া সহ সেই অস্ট্রিলিয়া দলের প্লেয়াররা।
২৮১ রানের ঐতিহাসিক ইনিংস খেলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। যা তার কেরিয়ারের সর্বোচ্চ। অপরদিকে ১৮০ রানের ইনিংস খেলেন রাহুল দ্রাবিড়। সেশনের পর সেশন ব্যাটিং করেন দুই ব্যাটসম্যান। অজিদের দেওয়া লক্ষ্যে টপকে শেষ ইনিংসে পাল্টা অস্ট্রিলিয়াকে ৩৮৪ রানের টার্গেট দেয় টিম ইন্ডিয়া।
দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুটা ভাল করলেও, পরে ভারতীয় স্পিনারদের সামনে অসহায় আত্মসমর্পন করে ক্য়াঙারু ব্রিগেড। প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও একাই ৬ উইকেট নিয়ে অজিদের ইনিংসের কোমড় ভেঙে দেন হরভজন সিং। ম্যাচে হ্যাটট্রিকও করেন ভাজ্জি। তিনটি মূল্যবান উইকেট পান সচিন তেন্ডুলকরও। একটি উইকেট পান ভেঙ্কটপতি রাজু।
২১২ রানে শেষ হয় অজিদের দ্বিতীয় ইনিংস। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে পঞ্চম দিনের মাত্র ৬ ওভার বাকি থাকতে ম্যাচ জিতে নেয় সৌরভ অ্যান্ড ব্রিগেড। টানা ১৬ ম্যাচ জয়ের পর স্টিভ ওয়ার অশ্বমেধের ঘোড়া থামিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ঐতিহাসক ম্যাচ জয়ের মাঠে ও বাইরে টিম ইন্ডিয়ার সেলিব্রেশন আজও টাটকা সকলের মনে।
পুরো ম্য়াচে দলের ১২তম সদস্য হিসেবে সেদিন খেলেছিল ক্রিকেটের নন্দন কাননও। ম্যাচ জয়ের পর উতসবে ফেটে পড়ে গোটা ইডেন গার্ডেন্সে। আর হবেই বা না কেন? টেস্ট ক্রিকেটে তৃতীয় দল হিসেবে ফলোঅন খাওয়ার পর ম্যাচ জয়ের নজির গড়ে ভারত। ২০০১ ইডেন টেস্টে জয়ের স্মৃতি শুধু সৌরভ নয়, মণিকোঠায় রয়েছে তৎকালীন দলের সব সদস্য, কলকাতা তথা দেশবাসীর।