বিতর্কে ভরা শাহিদ আফ্রিদির সেরা একাদশ, দলে একমাত্র ভারতীয় সচিন, ৫ জন পাকিস্তানি ক্রিকেটার
লকডাউনের ম্যধ্যে নিজের সেরা একাদশ বাছলেন প্রাক্তন পাকিস্তান অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদি। দলে রয়েছে ৫ পাকিস্তানি ক্রিকেটার। ভারতীয় ক্রিকেটার মাত্র এক জন। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক।
আফ্রিদির দলে ওপেনার হিসেবে রয়েছেন পাকিসস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটার সইদ আনোয়ার। পাকিস্তানের হয়ে বহু যুদ্ধের নায়ক তিনি। দেশের হয়ে ৫৫টু টেস্ট খেলে ৪০৫২ রান করেছেন আনোয়ার ও ২৪৭টি এক দিনের ম্যাচ খেলে করেছেন ৮৮২৪ রান। টেস্টে ১১টি ও ওয়ান ডে তে ২০ টি সেঞ্চুরি করেছেন আনোয়ার। আনোয়ারের উপরই নিজের দলের ওপেনিংয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন আফ্রিদি।
আফ্রিদির দলের অপর ওপেনার হলেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন বিধ্বংসী ওপেনার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। ৯৬টি টেস্ট ম্যাচে ৫৫৭০ রান ও ২৮৭টি এক দিনের ম্যাচে ৯৬১৯ রান করেছেন গিলি। আনোয়ারের সঙ্গী হিসেবে অজি তারকাকেই পছন্দ করেছেন আফ্রিদি।
আফ্রিদির দলে তিন নম্বরে রয়েছে আরও এক অজি তারকা। প্রাক্তন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক ও দুটি বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন রিকি পন্টিং। দেশের হয়ে ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটে পন্টিং খেলেছেন ১৬৮ টেস্ট, ৩৭৫ ওয়ানডে, ১৭ টি-টোয়েন্টি। রান করেছেন যথাক্রমে ১৩,৩৭৮ রান, ১৩৭০৪ রান ও ৪০১ রান। টেস্ট ও এক দিনের ক্রিকেটে করেছেন যথাক্রমে ৪১ ও ৩০ সেঞ্চুরি। দলের মিডল অর্ডারের দায়িত্ব পন্টিংয়ের উপর দিয়েছেন আফ্রিদি।
চার নম্বরে রয়েছেনএকমাত্র প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার মাসস্টার ব্লাস্টার সচিন তেন্ডুলকর। ২০০ টেস্ট, ৪৬৩ একদিনের ম্যাচ, একটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন মুম্বইকর। করেছেন যথাক্রমে ১৫,৯২১ রান, ১৮৪২৬ রান ও ১ রান। টেস্ট ও একদিনের ফরম্যাটে তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যা যথাক্রমে ৫১ ও ৪৯। সচিন তেন্ডুলকরকে ওপিনংয়ে না রেখে দলের চার নম্বরে রাখা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা।
পাকি্তানের অপর প্রাক্তন অধিনায়ক ইনজামাম উল হক রয়েছেন আফ্রিদির দলের ৫ নম্বরে। ইনজামাম ১২০ টেস্ট, ৩৭৮ ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। তার রান সংগ্রহ যথাক্রমে ৮৮৩০, ১১৭৩৯ ও ১১ রান। টেস্ট ও এক দিনের ক্রিকেটে তাঁর শতরানের সংখ্যা যথাক্রমে ২৫ ও ১০।
দলে অলরাউন্ডার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তী জ্যাক কালিস। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১৬৬ টেস্ট, ৩২৮ ওয়ানডে ও ২৫ টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি। করেছেন যথাক্রমে ১৩২৮৯, ১১৫৭৯ ও ৬৬৬ রান। নিয়েছেন যথাক্রমে ২৯২। ২৭৩ ও ১২ উইকেট। মিডল অর্ডারে ব্যাটং ও বোলিংয়ের দায়িত্বভার কালিসের উপরই সপেছেন আফ্রিদি।
আফ্রিদির দলে কিপার নির্বাচন নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক। দলে গিলক্রিস্ট থাকা সত্ত্বেও কিপার হিসেবে আফ্রিদির দলে জায়গা পেয়েছেন প্রাক্তন পাকিসস্তানের উইকেট রক্ষক রশিদ লতিফ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তেমন পরিংখ্যান না থাকা সত্ত্বেও কেন লতিফকে টিমে রাখলেন আফ্রিদি তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
দলে তিন জন পেস বোলার রেখেছেন আফ্রিদি। প্রথম জন পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক ও সুইং বোলিংয়ের যাদুকর ওয়াসিম আক্রম। সর্বকালের সেরা বাঁ-হাতি পেসার হিসেবে আক্রমকেই মানেন অনেকে। ১০৪ টেস্টে ৪১৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ২৫ বার। ম্যাচে ১০ উইকেট নিয়েছেন পাঁচ বার। পাশাপাশি, ৩৫৬ একদিনের ম্যাচও খেলেছেন তিনি। উইকেট নিয়েছেন ৫০২টি।
আক্রমকে নতুন বলে সঙ্গ দেবেন অপর কিংবদন্তী পেসার অজি তারকা গ্লেন ম্যাকগ্রা। নতু বলে সুইংয়ের জন্য তিনি সর্বকালের সেরাদের মধ্যে অন্যতম। ১২৪ টেস্ট, ২৫০ ওয়ানডে ও দুটো টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি। নিয়েছেন যথাক্রমে ৫৬৩, ৩৮১ ও পাঁচ উইকেট। নতুন বলে উইকেট নেওয়ার জন্য ম্যাকগ্রাকেই নির্ভরযোগ্য মনে করেছেন আফ্রিদি।
দলের তৃতীয় পেসার হলেন আফ্রিদির সতীর্থ রাওয়াল পিন্ডি এক্সপ্রেস শোয়েব আখতার। সুইংয়ের পাশাপাশি আগুনে বোলিংয়ের জন্য আখতারকেই দলে রেখেছেন বুম বুম আফ্রিদি। বিধ্বংসী এই পেসার খেলেছেন ৪৬ টেস্ট, ১৬৩ ওয়ানডে ও ১৫ টি-টোয়েন্টি। নিয়েছেন যথাক্রমে ১৭৮, ২৪৭ ও ১৯ উইকেট।
আফ্রিদির দলে স্পিনার হিসেবে জায়গা পেয়েছেন মাত্র একজন। তিনি হলেন কিংবদন্তী লেগ স্পিনার অজি তারকা শেন ওয়ার্ন। ১৪৫ টেস্টে ৭০৮ উইকেট নিয়েছেন তিনি। খেলেছেন ১৯৪ এক দিনের ম্যাচও। নিয়েছেন ২৯৩ উইকেট। আফ্রিদির দলে মাত্র একজন স্পিনার নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
আফ্রিদির এই দলে একমাত্র ভারতীয় হিসেবে সচিন থাকলেও, জায়গা হয়নি বীরেন্দ্র সহবাগ, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, যুবরাজ সিংহ, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, রাহুল দ্রাবিড়, ভিভিএস লক্ষ্মণ, অনিল কুম্বলের মতো ক্রিকেটারদের। অথচ, দলে রয়েছেন রশিদ লতিফ। একইসঙ্গে সেরা একাদশ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখেন সকলে। সেখানে আফ্রিদির দলে নিজের দেশেরই ৫ ক্রিকেটার রাখাকে ভাল চোখে দেখছেন না ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। আফ্রিদির দল দেখে হতবাক ক্রিকেট প্রেমীরাও।