খেয়াল পড়ে এই রামায়ণ সিরিয়ালের কথা, ৩০ বছর পর চাঞ্চল্যকর পর্দাফাঁস করলেন 'রাম' অরুণ গোভিল
রামায়ণ সিরিয়ালের কথা বললে আজও খেয়াল পড়ে যায় তিন জনের মুখ। অরুণ গোভিল, দীপিকা চিকহালিয়া এবং সুনীল লাহিড়ি। রাম-সীতা এবং লক্ষ্মণের ভূমিকায় এদের অভিনয় সে সময় তাঁদের সাক্ষাৎ ভগবানে পরিণত করেছিল। বলিউড স্টারদের জনপ্রিয়াকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল এদের জনপ্রিয়তা। টেলিভিশনের পর্দাতে অভিনয় করেও এঁরা পেয়েছিলেন মেগাস্টারের সম্মান। রামায়ণ সিরিয়ালের ৩০ বছর পর ফের একসঙ্গে এক মঞ্চে আবির্ভাব ঘটল রাম-সীতা ও লক্ষ্মণের। আর সেই সঙ্গে সামনে এল চাঞ্চল্যকর কাহিনি।
বহুদিন পর একসঙ্গে এক মঞ্চে রাম-সীতা-লক্ষ্মণ। যারা তাঁদের আসল জীবনে পরিচিত অরুণ গোভিল, দীপিকা এবং সুনীল লাহিড়ি নামে। আজ থেকে ৩০ বছর আগে প্রত্যেক রবিবার তাঁদেরকে সকাল ৯টা থেকে দূরদর্শনের পর্দায় দেখা যেত, সেই ভঙ্গিমা-তে হাতজোড় করে সকলের সামনে দাঁড়ালেন এই তিন জন।
১৯৮৭ সালে দূরদর্শনের পর্দায় এসেছিল রামায়ণ। যার পরিচালক ছিলেন রামানন্দ সাগর। বিখ্যাত এই পরিচালক ও প্রযোজক বলতে গেলে বুক ঠুকে একটা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন। প্রমাণ করে দিয়েছিলেন যে রামায়ণেরও নাট্যরূপ সম্ভব। রমানন্দের হাত ধরেই সে সময় আসমুদ্র হিমাচল জনপ্রিয়তার চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছেছিলেন অরুণ গোভিল, দীপিকা এবং সুনীল, অরবিন্দ ত্রিবেদী, দারা সিং-রা।
সোনি টিভি-র রিয়্য়ালিটি চ্যাট শো- কপিল শর্মা শো-তে অতিথি হয়েছিলেন রাম-সীতা ও লক্ষ্মণ। সেখানেই এক চাঞ্চল্যকর তথ্যের পর্দা ফাঁস করেছেন রাম অরুণ গোভিল।
অরুণ জানিয়েছেন, রামায়ণ সিরিয়াল চলার সময়ে একাধিক নামকরা ম্যাগাজিন তাঁর এবং দীপিকা-র পিছনে পড়েছিল। তারা চেয়েছিল যাতে অরুণ ও দীপিকা তাদের হয়ে কিছু উত্তেজক ফোটোশ্যুট করেন। এর জন্য অকল্পনীয় অর্থের প্রলোভনও ওইসব ম্যাগাজিন থেকে দেওয়া হয়েছিল। অরুণ জানিয়েছেন, তিনি এবং দীপিকা কেউ-ই এই অফার গ্রহণ করেননি।
অরুণ আরও জানান, যে তাঁদের মনে হয়েছিল রাম এবং সীতার ভূমিকায় তাঁদের অভিনয় জনমানসে এমন একটা ভাবমূর্তি তৈরি করেছে, তাতে উত্তেজক ফোটোশ্যুট বিতর্ক তৈরি করবে। এমনকী, টেলিভিশনের পর্দায় অরুণ রাম রূপে এবং দীপিকা সীতা রূপে অভিনয় করে সমগ্র দেশের যে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করেছিলেন তাতেও এটা প্রভাব ফেলত। ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারত রামায়ণ সিরিয়ালেরও।
অরুণ জানিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ্মণের চরিত্রে অভিনয় করা সুনীল লাহিড়ির কাছেও এই অফার গিয়েছিল। কিন্তু তিনিও তা গ্রহণ করেননি। উপায় না পেয়ে ম্যাগাজিনগুলি অরপর রামায়ণের অন্যান্য নারী ও পুরুষ চরিত্রগুলিকেও একই অফার দিয়েছিল। অরুণ জানিয়েছেন, তাঁরাও কেউ অর্থের বিনিময়ে বিকিয়ে যাননি। রামায়ণ সিরিয়ালের ভাবমূর্তি-কে মাথায় রেখে তাঁরাও বিশাল অর্থের প্রলোভন-কে অবজ্ঞা করেছিলেন।
রামায়ণ সিরিয়ালটি যে সময় টেলিভিশনে দেখানো হয়েছিল, সে সময় অরুণ গোভিলের বয়স ছিল আটত্রিশ বছর। দীপিকা ছিলেন ২১ বছরে। সুনীল লাহিড়ির বয়সও ছিল চল্লিশের নিচে। এখন সকলেই প্রবীণ হয়েছেন। রাম-সীতা ও লক্ষ্মণের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে ছোট ছিলেন দীপিকা। তিনিও এখন ৬০ বছরের পথে। তবু, এদের নিয়ে এখনও উন্মাদনা কমেনি। তাঁদের একসঙ্গে দেখলে এখনও লোকে নস্টালজিক হয়ে পড়েন।
রামায়ণের জনপ্রিয়তা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল যে দীপিকা ও অরুণ পরবর্তীকালে রাজনীতিতেও প্রবেশ করেছিলেন। বিজেপি-র হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে তিনি সাংসদও হয়েছিলেন। কিন্তু, আপাতত রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরেই অবস্থান করেন তিনি। অরুণ গোভিলও বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু, রাজনীতির আঙিনায় তাঁকেও এখন খুঁজে পাওয়া যায় না।
অরুণ গোভিল, দীপিকা, সুনীল লাহিড়িরা ছোট পর্দা থেকে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছলেও তাঁরা সকলেই প্রথমে বলিউড হিন্দি ছবিতে নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষা করেছিলেন। তিন জনেই বহু ছবিতে অভিনয় করলেও কাঙ্খিত সাফল্য পাননি, যা তাঁরা রামায়ণ সিরিয়াল থেকে রাতারাতি পেয়েছিলেন। দীপিকা রামায়ণের পর বহু বড় ব্যানারে এবং বিভিন্ন ভাষাতে ছবিও করেন। ১৯৮৯ সালে তিনি প্রসেনজিতের বিপরীতে আশা ও ভালোবাসা নামে একটি ছবি করেছিলেন। অরুণ গোভিলও রামায়ণের পর বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছিলেন।
বলিউড স্টারদের জনপ্রিয়াকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল এদের জনপ্রিয়তা। টেলিভিশনের পর্দাতে অভিনয় করেও এঁরা পেয়েছিলেন মেগাস্টারের সম্মান।৮০ দশকের শেষে টেলিভিশনে এসেছিল রামায়ণ। এই সিরিয়ালকে ঘিরে গণ উন্মাদনা দেখা দিয়েছিল দেশজুড়ে। যার ফলে ভারতীয় টেলিভিশনে রামায়ণ একটা মহাকাব্য রচনা করেছে।
রামায়ণের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র এবং রামের পরে সবচেয়ে বড় নায়ক অব্যশই রাবণ। এই চরিত্রে অভিনয় করে বলিউডে ছবি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিলেন অরবিন্দ ত্রিবেদী। রামায়ণের আগে বলিউডের চক্কর কাটলেও সেভাবে তিনি কল্কে পাননি। রামায়ণ তাঁকে রাতারাতি স্টার বানিয়ে দিয়েছিল।