করোনা আবহেই ১১ জুন থেকে শুরু হচ্ছে লা-লিগা। ফুটবল ইতিহাসে শুধু প্লেয়ারই নয়,লা লিগা দিয়েছে একের পর এক সেরা কোচও। যাদের ক্ষুরধার বুদ্ধিতেই বিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করত দল। চিনে নিন প্রায় শতাব্দী প্রাচীন লিগের ইতিহাসের সেরা ১০ ম্যানেজারদের।
জোহান ক্রুয়েফ
ফুটবলার হিসাবে যতটা সফল ছিলেন জোহান ক্রুয়েফ, তার থেকেও বেশি সফল হয়েছিলেন নিজের কোচিং জীবনে। ১৯৮৫ তে আয়াক্সের হয়ে তার কোচিং জীবন শুরু হয়। ১৯৮৮ সালে দায়িত্ব নেয় বার্সালোনার। বার্সায় ৮ বছর কোচিং করানোর সময় তিনি ৪ বার লিগ, ৩ বার স্প্যানিশ সুপার কাপ ৩ বার কোপা দেল রে ও বার্সার ইতিহাসের প্রথম ইউরোপীয়ান কাপ টি যেতেন। নিজের ফুটবল বোধ থেকে তিনি জন্ম দেন সম্পূর্ণ নতুন এক ফুটবল শৈলীর। তার এই অবদানের জন্য তিনি শুধু লা-লিগারই নন, সারা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কোচ বলে বিবেচিত হন। ২০১০ সালে ফুটবলে তার অবদানের জন্য "ফিফা দ্য অর্ডার অফ মেরিট" সম্মানে ভূষিত হন তিনি। তার টোটাল ফুটবলের দর্শনে পরবর্তীকালে আচ্ছন্ন হয়েছেন একাধিক কোচ এবং খেলোয়াড়।
পেপ গুয়ার্দিওলা
একসময় নিজে খেলোয়াড় হিসাবে খেলেছেন লা-লিগাতে। তারপর অন্যান্য অনেক জায়গার ক্লাবে খেলে ২০০৬ সালে ফুটবল থেকে অবসর নেন। এরপর ২০০৭ সালে যে ক্লাবে ফুটবল খেলেছেন একসময় সেই ক্লাবে অর্থাৎ বার্সেলোনার যুব দলের কোচিংয়ের দায়িত্ব নিয়ে আসেন। এক বছরের মধ্যে মূল দলের দায়িত্বও পান তিনি। কোচ হিসেবে নিজের প্রথম মরশুমেই ত্রিমুকুট জেতেন তিনি। একই মরশুমে ছয়টি ট্রফি জিতে বার্সাকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দেন তিনি। তার চার বছরের বার্সা কোচ থাকা কালীন তিনি তিনটে লা-লিগা এবং দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতেন। ২০১১ সালে ফিফার তরফ থেকে তাকে বিশ্বের সেরা কোচ ঘোষিত করা হয়।
মিগুয়েল মুনোজ-
মিগুয়েল মুনোজ-কে রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ম্যানেজার বলে উল্লেখ করা হয়। রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসের প্রথম তিনটে ইউরোপিয়ান কাপজয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৫৮ তে তিনি ফুটবল থেকে অবসর নেন। তারপর তিনি দায়িত্ব পান রিয়াল মাদ্রিদের রিয়াল মাদ্রিদের রিসার্ভ দলের। ১৯৫৯ এ তিনি রিয়াল মাদ্রিদের প্রধান দলের দায়িত্ব পান এবং ১৯৬০ সালে রিয়াল মাদ্রিদ কে পঞ্চম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিততে সাহায্য করেন। তার কোচিংয়ে রিয়াল মাদ্রিদ টানা ৫ বার লা-লিগা জেতে। ১৯৬৬ তে তার কোচিংয়েই রিয়াল নিজের ষষ্ঠ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতেন। ১৬ বছর তিনি কোচিং করিয়েছিলেন মাদ্রিদে। এর পর স্প্যানিশ লিগে অন্যান্য কিছু দলে কোচিং করিয়ে তিনি স্পেনের জাতীয় দলের দায়িত্ব সামলান।
লুইস আরাগোনাস-
খেলোয়াড় জীবনে আতলেতিকো মাদ্রিদের হয়ে খেলেছেন দীর্ঘদিন। লা রোজিব্ল্যানকোসের সর্বকালের সেরা গোলদাতাও তিনি। ১৯৭৪ সালে প্রথমবার তিনি ওই দলের ম্যানেজার নিযুক্ত হন। নিজের সুদীর্ঘ কোচিং কেরিয়ারে মোট চার দফায় কোচিং করিয়েছেন আতলেতিকো মাদ্রিদকে। তিনি আতলেতিকোকে তিনবার কোপা-দেল-রে এবং একবার লা-লিগা জিতিয়েছেন। এছাড়া একবার দ্বিতীয় ডিভিশনে চলে যাওয়া আতলেতিকো-কে তিনি আবার নিজের কোচিংয়ে প্রথম ডিভিশনে তুলে আনেন। আতলেতিকো ছাড়াও বার্সালোনা, সেভিয়া, ভ্যালেন্সিয়া, ম্যালোরোকার মত লা-লিগার দলগুলির দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। স্পেনের ম্যানেজার হয়ে স্পেন কে ২০০৮ ইউরো কাপ জিততেও সাহায্য করেন তিনি।
জিনেদিন জিদান-
কোচ হিসেবে এত অল্প সময়ে এত সাফল্য বোধহয় কোনও ফুটবল ম্যানেজার পাননি। ২০১৫-১৬ মরশুমে রাফায়েল বেনিতেজকে মাঝপথে ম্যানেজারের দায়িত্ব থেকে সরানোর পর সেই ভাঙ্গাচোরা রিয়াল মাদ্রিদের দায়িত্ব দেওয়া হয় জিনেদিন জিদান-কে। এর আগে তিনি রিয়াল মাদ্রিদের যুবদলের দায়িত্ব সামলেছেন। তারপর মাত্র আড়াই বছরে তিন বার রিয়াল মাদ্রিদ-কে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতান তিনি। পাঁচবছর পর তার কোচিংয়ে লা-লিগা জেতে রিয়াল মাদ্রিদ। এছাড়া দুটি ক্লাব বিশ্বকাপও তিনি জিতিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদকে। এইমুহুর্তে রিয়াল মাদ্রিদে নিজের দ্বিতীয় ইনিংস সামলাচ্ছেন জিদান। দ্বিতীয় ইনিংসে এখনও অবধি মাদ্রিদ কে স্প্যানিশ সুপার কাপ জিততে সাহায্য করেছেন তিনি।
দিয়েগো সিমিওনে-
২০১১ সালে আতলেতিকো মাদ্রিদের দায়িত্ব নিয়ে দলের ভোল পালটে দিয়েছেন সামনে। তার কোচিংয়ে লা-লিগার অন্যতম সুপার পাওয়ার হয়ে উঠেছে আতলেতিকো মাদ্রিদ। এর আগে সিঁরি আ তে অল্প কিছুদিন কোচিং করিয়েছিলেন তিনি। তার কোচিংয়ে আতলেতিকো মোট ৭ টি মেজর ট্রফি জিতেছেন। তার মধ্যে রয়েছে একটি লা লিগা এবং দুটি ইউরোপা লিগ। এছাড়া দলকে দুবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালেও তুলেছেন তিনি। কিন্তু ট্রফি অধরা থেকেছে। তিনি লা-লিগার সেরা কোচের সম্মান জিতেছেন তিনবার এবং ২০১৬ তে আইএফএফএইচএস-এর বিচারে বিশ্বের সেরা কোচ নির্বাচিত হয়েছেন।
ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড-
খেলোয়াড় জীবনে বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার ছিলেন। নেদারল্যান্ডস-এর ম্যানেজার হিসাবে কোচিং জীবন শুরু করেন তিনি। ২০০৩-০৪ মরশুমে লুই ফান গলের ছেড়ে যাওয়া ভাঙ্গাচোরা বার্সার দায়িত্ব নেন তিনি। ২০০৪-০৫ এবং ২০০৫-০৬ মরশুমে বার্সাকে তিনি লিগ চ্যাম্পিয়ন করান। ভাঙচোরা বার্সায় স্থিতাবস্থা ফিরিয়ে আনেন তিনি। ২০০৫-০৬ মরশুমে তিনি বার্সাকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বিজয়ীর শিরোপা এনে দেন।
ভিসেন্তে দেল বস্কি-
১৯৯৯-২০০০ মরশুমে প্রথমবার পূর্ণ-দৈর্ঘ্যের ম্যানেজার হিসাবে রিয়াল মাদ্রিদে আসেন দেল বস্কি। এর আগে তিনি গ্যালাকটিকোদের স্টপ গ্যাপ ম্যানেজারের দায়িত্ব সামলেছিলেন। ম্যানেজার হিসাবে তিনি রিয়ালকে দুবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং দুবার লা-লিগা জিতিয়েছিলেন। এছাড়া স্প্যানিশ জাতীয় দল তার কোচিংয়ে ২০১০ বিশ্বকাপ এবং ২০১২ ইউরো জিতেছিল। সারা কেরিয়ারে একাধিক সেরা কোচের তকমাও পেছেয়েন তিনি।
লুইস এনরিকে-
২০১৩-১৪ মরশুমে প্রথমবারের জন্য স্প্যানিশ লিগে কোচিং করতে আসেন তিনি। তখন তার দায়িত্বে ছিল সেল্টা ভিগো। সেখানে তার পারফরম্যান্স দেখে পরের মরশুমে বার্সা তাকে কোচ নিযুক্ত করে। বার্সাকে তিনি দুটি লা-লিগা, একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, একটি ক্লাব বিশ্বকাপ সহ আরও অনেক ট্রফি জিততে সাহায্য করেন। ২০১৫ সালে লা-লিগা এবং ফিফার বিচারে বিশ্বের সেরা কোচের সম্মানও পান তিনি। বর্তমানে তিনি স্প্যানিশ জাতীয় দলের দায়িত্বে আছেন।
জাভিয়ের ইরুরেতা-
রেসিং স্টাটান্ডার, আতলেতিকো বিলবাও, সেল্টা ভিগো, রিয়াল বেতিস, রিয়াল সোসিয়াদাদ, দিপোর্তিভ লা করুনিয়ার মতো একাধিক ছোট দলের কোচিংয়ের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি লা-লিগায়। লা-লিগার ইতিহাস তাকে মনে রাখবে ১৯৯৯-২০০০ মরশুমে দিপোর্তিভ লা করুনিয়ার মতো সাদামাটা দলকে লা-লিগা জেতানোর জন্য। এছাড়া তিনি দিপোর্তিভ লা করুনিয়াকে একটি কোপা-দেল-রে এবং দুটি স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতিয়েছেন। লা-লিগা জেতানোর পর কোচ হিসেবে পেয়েছেন ডন ব্যালন অ্যাওয়ার্ড।