সব জল্পনার অবসান হল। জাতীয় কংগ্রেস থেকে ইস্তফা দিলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। প্রয়াত মাধবরাও সিন্ধিয়ার পুত্র একসময় রাগুল গান্ধী ও প্রিয়ঙ্গা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। সেখান থেকে মধ্যপ্রদেশে দলের সরকার ভাঙতে ঘর শত্রু বিভীষণের মত ব্যবহার। তবে গত কয়েকমাস থেকেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছেলিন গোয়ালিয়রের মহারাজা। মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রীত্ব না পেয়ে মাঝে মঝ্যেই বেসুরো গেয়ে উঠছিলেন। সিন্ধিয়ার সেই ক্ষোভকেই মধ্যপ্রদেশে বিজেপি কাজে লাগিয়েছে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।
রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের সভাপতি হওয়ার পর তরুণ ব্রিগেডকে তুলে এনেছিলেন। সেই ব্রিগেডের অন্যতম যোদ্ধা ছইলেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া।
জোত্যিরাদিত্যের বাবা মাধবরাও সিন্ধিয়াও কংগ্রেসের নেতা ছিলেন। হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও। ঠাকুমা ও পিসির পথ অনুসরণ না করে বাবা মাধবরাওয়ের মতই প্রথম জীবনে কংগ্রেসে যোগ দেন জ্যোতিরাদিত্য।
গত ১৭ বছর ধরে গুণা-শিবপুরী কেন্দ্রে কংগ্রেস সাংসদ হিসাবে সেবা করেছেন জ্যোতিরাদিত্য। ছিলেন দলের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ।
জ্যোতিরাদিত্য শুরু থেকেই গাঁধী পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। রাহুল গাঁধীর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হিসেবে ধরা হত কংগ্রেসের যে তরুণ ব্রিগেডকে, তার প্রথম দু’টি নাম ছিল মধ্যপ্রদেশের জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এব রাজস্থানের সচিন পাইলট।
২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার ছিলেন মাধবরাও সিন্ধিয়ার পুত্র । কিন্তু শেষপর্যন্ত সিনিয়র কমলনাথকেই বেছে নেন কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।
তারপর থেকেই ক্রমে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে একটু একটু করে দূরত্ব বাড়তে থাকে। শেষের কয়েক মাস বেশ বেসুরো শোনাচ্ছিল গোয়ালিয়রের মহারাজাকে।
লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের শোচনীয় হারের পর কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন রাহুল গান্ধী। এর কয়েকদিনের মধ্যেও কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে ইস্তফা দেন জ্যোতিরাদিত্য।
গত বছর নভেম্বরে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের পরিচয় বদলে ফেলেন জ্যোতিরাদিত্য। ট্যুইটারে কংগ্রেসের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন করে বায়োতে লেখেন জনসেবক ও ক্রিকেট উৎসাহী।
গতবছর অগস্টে জম্ম-কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ কর নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই সময় বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যেই সমর্থন করেন জ্যোতিরাদিত্য।
কমলনাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মধ্যপ্রদেশের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদটা তাঁকে দেওয়া হবে আশা করেছিলেন জ্যোতিরাদিত্য। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে কমল নাথএক বছর কাটিয়ে ফেলার পরেও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ পাননি।
গোয়ালিয়রের মহারাজার সঙ্গে ছিন্দওয়াড়ার অধীশ্বরের সম্পর্ক এতটাই তিক্ততায় পৌঁছেছিল যে কমলনাথ সরকারের নানা কাজের সমালোচনা প্রকাশ্যেই শুরু করেছেন জ্যোতিরাদিত্য।
জ্যোতিরাদিত্যর বাবা মাধবরাও সিন্ধিয়া ছিলেন রাজীব গান্ধীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু। জ্যোতিরাদিত্যর সঙ্গে রাহুলের সম্পর্কও ছিল অত্যন্ত ভাল। এমনকি দুজনের মধ্যে সমকামিতার অভিযোগও উঠেছিল। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের কুর্সি দখলের লড়াইয়ে শেষপর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে ১৮ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু করলেন মাধবপুত্র।