মার্কোস, গড়ুর বা কোবরা - বিশ্বের অন্যতম সেরা ভারতের এই ৮টি বিশেষ বাহিনী-কে চেনেন কি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই বিশ্বের প্রায় সবকটি শক্তিশালী দেশই উচ্চ প্রশিক্ষিত সেনা সদস্যের প্রয়োজন বোধ করেছিল। বোঝা গিয়েছিল, শুধু সেনাসদস্যদের সংখ্যায় এগিয়ে থাকলেই হবে না, এমন কিছু কিছু অভিযানের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, যার জন্য কড়া প্রশিক্ষণের দরকার। ২১ শতকে বিশ্বে সামরিক দিক থেকে এগিয়ে থাকা অন্যান্য দেশের মতো ভারতের হাতেও এই রকম প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষ বাহিনী রয়েছে। দুর্ভাগ্য়ের বিষয় হলিউডি ফিল্মের দৌলতে মেরিনস, নেভি সিলস-এর মতো বিভিন্ন মার্কিন স্পেশাল ফোর্সের কথা জানলেও, অনেকেরই ভারতের এই নিজস্ব বিশেষ বাহিনীগুলি সম্পর্কে বিশেষ কিছুই জানা নেই। তবে বিশ্বের সেরাদের বাহিনীগুলির মধ্যে পড়ে এই ভারতীয় সেনাদলগুলি। চিনের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনার আঁচ এখন গনগনে। এই পরিস্থিতিতে আসুন জেনে নেওয়া যাক ভারতের বিশেষ বাহিনীগুলি সম্পর্কে -

 

amartya lahiri | Published : Jun 29, 2020 10:42 AM IST / Updated: Jul 28 2020, 06:39 PM IST

18
মার্কোস, গড়ুর বা কোবরা - বিশ্বের অন্যতম সেরা ভারতের এই ৮টি বিশেষ বাহিনী-কে চেনেন কি

মার্কোস বা মেরিন কমান্ডোস

ভারতের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর, সবচেয়ে বিপজ্জনক বিশেষ বাহিনী হল মার্কোস বা মেরিন কমান্ডোস। পাহাড়-মরুভূমি-জঙ্গলের মতো স্থলভাগের যে কোন জায়গায় যুদ্ধের জন্য এই বাহিনী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। সামুদ্রিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে তো তাদের বলা হয় সুপার এক্সপার্ট। কঠিনতম শারীরিক পরীক্ষা দিয়ে তবেই এই বাহিনীর অংশ হওয়া যায়। প্রতিবছর ৮০ শতাংশের বেশি আবেদনকারী প্রথম তিন দিনের দীর্ঘ শারীরিক সুস্থতা পরীক্ষা এবং প্রবণতা পরীক্ষাতেই বাদ পড়েন। ওই তিনটে দিন পার করতে পারেন যাঁরা, তাঁদের এরপরে পাঁচ সপ্তাহের একটা লম্বা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। যা পরিচিত 'নরকের সপ্তাহ' বলে। এই সময়ে তাঁদের দীর্ঘ কয়েকদিন না ঘুমিয়ে কর্তব্য পালনের অনুশীলন করানো হয়। কমান্ডোদের শুয়ে শুয়ে, দাঁড়িয়ে, দৌড়তে দৌড়তে, পিছন ফিরে এবং আয়নায় দেখেও সঠিক নিশানায় গুলি ছুঁড়তে সক্ষম করে তোলা হয়। নিশানা চোখে পড়ার পর গুলি ছুঁড়তে সময় লাগে মাত্র ০.২৭ সেকেন্ড! প্রশিক্ষণের চূড়ান্ত পর্যায়ে উরু কাদামাটির উঁচু ক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে, গুঁড়ি মেরে যেতে হয় কমান্ডোদের। এই প্রশিক্ষণটি পরিচিত 'ডেথ ক্রল' নামে। শরীরে বাঁধা থাকে ২৫ কেজি ওজনের বন্দুক ও অন্যান্য সামরিক সাজ সরঞ্জাম। ওই অবস্থায় ৮০০ মিটার গিয়ে ২৫ মিটার দূরের এক লক্ষ্যবস্তুতে গুলি করতে হয়। আর সেই লক্ষ্যের ছিক পাশেই দাঁড়িয়ে থাকেন একজন মানুষ। এই বাহিনীর পোশাকও তৈরি হয় বিশেষভাবে। মাথায় থাকে বুলেটপ্রুফ হেলমেট, গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। ইউনিফর্মটি জলে ভেজে না, আগুনে পোড়ে না। প্রত্যেক কমান্ডোর সঙ্গে থাকে উচ্চপ্রযুক্তির বেতার যোগাযোগ ব্যবস্থা। শর্টরেঞ্জ সংঘর্ষের জন্য ৯ মিমি সেমি অটোমেটিক পিস্তল এবং এবং লংরেঞ্জের জন্য ইজরাইলে তৈরি টেভর-২১ অ্যাসল্ট রাইফেল থাকে। পায়ের জুতোজোড়াও বিশেষভাবে তৈরি। হালকা এই জুতো যে কোনও তলকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে থাকে। 

28

প্যারা কমান্ডো

ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্যতম উচ্চ প্রশিক্ষিত বিশেষ বাহিনী হল প্যারা কমান্ডো। মারাত্মক প্রকৃতির অভিযানে লিপ্ত থাকে তারা। তাই সবসময়ই তাদের অভিযানের দক্ষতা এবং শারীরিক সুস্থতার সর্বোত্তম স্তরে থাকতে হয়। শারীরিকভাবে সবচেয়ে সুস্থ, মানসিকভাবে সবচেয়ে মজবুত, প্রখর বুদ্ধিমান এবং উদ্দিপনায় ভরপুর সেনা সদস্যরাই এই বাহিনীর সদস্য হতে পারেন। প্যারা কমান্ডোদের বিশ্বের সবচেয়ে কঠিনতম কমান্ডো প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। দৈনিক বন্দুক ও সাজসরঞ্জামের বোঝা নিয়ে তাদের ২০ কিলোমিটার দৌড়তে হয়। প্রতিদিনই চলে সরাসরি যুদ্ধের অনুশীলন। প্রশিক্ষণের এক পর্যায়ে তাদের প্রায় ৩৩,৫০০ ফুট উচ্চতা থেকে প্যারাসুট না খুলে ঝাঁপ মারতে হয়। ভূতলে যেকোনও পরিবেশে যুদ্ধের বিষয়ে এবং গভীর সমুদ্র ডাইভ দেওয়ার বিষয়েও উচ্চ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় তাদের। এই বাহিনীর এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অভিযানগুলির মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানের সাথে একাত্তরের যুদ্ধ, ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ এবং ১৯৮৪ সালের কুখ্যাত 'অপারেশন ব্লুস্টার'।

 

38

গরুড় কমান্ডো ফোর্স

ভারতীয় বায়ুসেনার একটি বিশেষ বাহিনী হল এই গরুড় কমান্ডো ফোর্স। এই বাহিনীর হাতে ২০০০-এরও বেশি কমান্ডো রয়েছে। কোনও এয়ারফিল্ড দখল করা বা পুনরুদ্ধার করা, আকাশপথে যে কোনও অভিযান, আকাশপথে হানা, য়ুদ্ধের সময় বিশেষ অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান, বিদ্রোহ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞ এই বাহিনী। এছাড়াও গরুড় কমান্ডোরা হাইজ্যাকিং-এর মতো পরিস্থিতির মোকাবিলায় দক্ষ। জঙ্গল এবং তুষারাবৃত এলাকায় দীর্ঘদিন টিকে থাকার কৌশল তাদের জানা। বিশেষ বিশেষ অস্ত্রচালনার প্রশিক্ষণও পান গড়ুর-রা। একইসঙ্গে ড্রাইভিং-এও প্রত্যেকে অত্যন্ত পারদর্শী হন। গরুড় বাহিনীর সদস্য হওয়াটা অবশ্য মুখের কথা নয়। পুরোদস্তুর গরুড় সদস্য হয়ে উঠতে ৩ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

 

48

ঘাতক বাহিনী

ঘাতক বাহিনী একটি বিশেষ অভিযানে সক্ষম পদাতিক বাহিনী যা শত্রু শিবিরে অতর্কিতে হামলা চালায় এবং সেনাবাহিনীর বাকি সদস্যরা এসে পৌঁছনোর আগে সরাসরি ম্যান-টু-ম্যান আক্রমণ চালায়। তারা শত্রুপক্ষের কামানের অবস্থানে,   এয়ারফিল্ডে, সরবরাহ ক্ষেত্রে এবং কৌশলগত সদর দফতরে অভিযান চালাতে পারদর্শী। শত্রু পক্ষের কবলে থাকা এলাকার অনেক গভীরে গিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে তোপ দাগতে এবং বিমান হামলা চালানোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞও বটে। শারীরিক ও মানসিকভাবে সবচেয়ে সুস্থ সৈন্যদের পক্ষেই ঘাতক বাহিনীর সদস্য হওয়া সম্ভব। সাধারণত ২০ জন সেনা নিয়ে তৈরি হয় এই বাহিনী। হেলিকপ্টারের মাধ্যমে হামলা, পর্বতারোহন, পর্বতে যুদ্ধ, শত্রুঘাঁটি ধ্বংস করা, উন্নত মানের অস্ত্রচালনা, ছোট এলাকার মধ্যে যুদ্ধ এবং পদাতিক বাহিনীর সবরকম কৌশলের প্রশিক্ষণ নিতে  হয় এই বাহিনীর সদস্যদের।

58

ন্যাশনাল সিকিওরিটি গার্ড অথবা ব্ল্যাক ক্যাটস

১৯৮৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল এই বিশেষ বাহিনী। কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী কিংবা ভারতের আধা সামরিক বাহিনী - কারোরই সরাসরি অধীনে এই বাহিনী পড়লেও বাহিনীটি তৈরি করা হয় ভারতীয় সেনা এবং সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর কমান্ডোদের মিশ্রণেই। পুলিশ বিভাগের একজন ডিজি এই বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। ব্ল্যাক ক্যাটসদের আবার দুটি ইউনিট রয়েছে -  স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ বা এসএজি এবং স্পেশাল রেঞ্জার গ্রুপ বা এসআরজি। এসএজি তৈরি হয় পুরোপুরি সেনা সদস্যদের নিয়ে, আর সন্ত্রাসবাদ বিরোধী কার্যকলাপের মোকাবিলার জন্য কাজে লাগানো হয় পুলিশ ও সেনার সমন্বয়ে গঠিত এসআরজি-কে। এনএসজি সদস্যদের হাতে থাকে বিশ্বের সর্বাধিক উন্নত অস্ত্রশস্ত্র। তবে বাছাই প্রক্রিয়াটি এতটাই কড়া যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই হাল ছেড়ে দেন। যারা সেই পর্ব পার করতে পারেন, তাদের আরও ৯ মাসের জন্য ফ্যান্টম এনএসজি কমান্ডো হওয়ার  প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

 

68

কমান্ডো ব্যাটালিয়ন ফর রেজোলিউট অ্যাকশন বা কোবরা

কম্যান্ডো ব্যাটালিয়ন ফর রেজলিউশন অ্যাকশন বাহিনীকে সংক্ষেপে কোবরা বলে ডাকা হয়। এটিই একমাত্র ভারতীয় বিশেষ বাহিনী যাদের বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় শুদুমাত্র দেশের অভ্যন্তরে মাওবাদীদের গেরিলা যুদ্ধের মোকাবিলা করার জন্য। কোব্রা কমান্ডোরা আদতে সিআরপিএফ-এর একটি অংশ। ক্যামোফ্ল্যাজ অর্থাৎ অভিযানের সময় নিজেদের আড়ালে করায়, জঙ্গলে যুদ্ধ পরিচালনায়, প্যারাসুট নিয়ে  লাফ দেওয়ায়, নিখুঁত লক্ষ্যে আঘাত করায় এবং ঘাপটি  মেরে থেকে শত্রুদের উপর আঘাত হানার ক্ষেত্রে এই বাহিনী দারুণ দক্ষ। তাদের স্নাইপার ইউনিটগুলিকে ভারতের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে অন্যতম সেরা হিসাবে ধরা হয়।

78

স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স

১৯৬২ সালের ১৪ নভেম্বর চিন-ভারত যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছিল ভারতের আধাসামরিক বাহিনী আওতায় তৈরি হয়েছিল এই স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স বা বিশেষ সীমান্ত বাহিনী। এসএসএফ-এর সদস্যরা বিশেষ পুনরুদ্ধার, প্রত্যক্ষ হামলা, পণবন্দি উদ্ধার, সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অভিযান, অপ্রচলিত যুদ্ধ এবং গোপন অভিযানে বিশেষ পারদর্শী। এই বিশেষ বাহিনী ভারতের গুপ্তচর সংস্থা 'র' অর্থাৎ রিসার্ড অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং-এর সঙ্গে সংহতি রেখে কাজ করে। এই বাহিনীর কমান্ডোদের গেরিলা কৌশল, পার্বত্য অঞ্চল এবং জঙ্গলে যুদ্ধ এবং প্যারাশুট নিয়ে লাফ দেওয়া নিয়ে সর্বাধিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

88

মহারাষ্ট্র পুলিশ ফোর্স ওয়ান

২৬/১১ মুম্বই সন্ত্রাসবাদী হামলার পর, মহারাষ্ট্র সরকার রাজ্যের সেরা কমান্ডোদের একত্রিত করে 'ফোর্স ওয়ান' নামে ভারতীয় মবতম বিশেষ বাহিনী গঠন করেছিল। এই স্কোয়াডের একমাত্র উদ্দেশ্য হুমকির মুখে পড়লে মুম্বই মহানগরি-কে রক্ষা করা। ফোর্স ওয়ান বিশ্বের কুইক রেসপন্স টিম (দ্রুততম প্রতিক্রিয়া দল)-গুলির মধ্যে অন্যতম সেরা। খবর পাওয়ার ১৫ মিনিটেরও কম সময়ে তারা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হতে পারে। এই বাহিনীর সদস্য হওয়ার জন্য ৩০০০-টিরও বেশি আবেদন জমা পড়েছিল। তার মধ্য থেকে নির্বাচিত করা হয় মাত্র ২১৬ জনকে। তারপর তাদের ইসরাইলি বিশেষ বাহিনীর নিবিড় নির্দেশনায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।

Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos