জেটলি-স্বরাজ থেকে সেশন, ২০১৯-এ ভারতীয় রাজনীতি হারালো একডজন নক্ষত্র-কে

কেটে গেল আরও একটি বছর। ভারতীয় রাজনীতিতে এই বছরটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একদিকে লোকসভা নির্বাচনে দারুণ জয় পেয়েছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি, অন্যদিকে আবার মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে ক্ষমতা হাতছাড়া হয়েছে গেরুয়া শিবিরের। একদিকে নির্বাচনী রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছে আদিত্য ঠাকরে, মিমি চক্রবর্তী, নুসরত জাহান-এর মতো তরুণদের। আবার অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, শিলা দিক্ষীত-দের মতো বহু বিশিষ্ট রাজনীতিবিদদের হারাতেও হয়েছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ভারতীয় রাজনীতিতে কোনও কোনও নক্ষত্র পতন ঘটল।

 

amartya lahiri | Published : Dec 30, 2019 12:14 PM IST / Updated: Dec 30 2019, 05:45 PM IST

112
জেটলি-স্বরাজ থেকে সেশন, ২০১৯-এ ভারতীয় রাজনীতি হারালো একডজন নক্ষত্র-কে
জর্জ ফার্নান্ডেজ - ২৮ জানুয়ারি ভারতের প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জর্জ ফার্নান্ডেজ-এর জীবনাবসান ঘটে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধের সময় অটলবিহারী বাজপেয়ীর এনডিএ সরকারে তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭০ এর সোশ্যালিস্ট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ছিলেন তিনি। জরুরি অবস্থার সময় 'বরোদা ডায়নামাইট ষড়যন্ত্র'-এ জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁকে কারাবন্দি করা হয়েছিল। ১৯৬৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে মুম্বইয়ের বিশিষ্ট কংগ্রেস নেতা এসকে পাতিল-কে পরাজিত করে তিনি 'জায়ান্ট কিলার' হিসাবে পরিচিত হয়েছিলেন।
212
মনোহর পর্রিকর - দীর্ঘ অসুস্থতার পর ১৭ মার্চ ৬৯ বছর বয়সে জীবনাবসান হয় গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রিকর-এর। গোয়ার তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী, পর্রিকর সাধারণ জীবনযাত্রার জন্য পরিচিত ছিলেন। জনগণের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পরিচিতি ছিল তাঁর। আইআইটি-র প্রাক্তনী এই রাজনীতিবিদ, সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশের আগে বিজেপির আদর্শিক পরামর্শদাতা তথা আরএসএস ছিলেন। প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসারের সঙ্গে লড়তে লড়তেই তিনি শেষ দিকে নাকে নল নিয়েও গোয়া বিধায়সভায় উপস্থিত হয়েছেন।
312
শিলা দিক্ষীত - ১৯৯৯ থেকে ২০১৩ সাল - টানা ১৫ বছর দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদে ছিলেন কংগ্রেসের প্রবীণ নেত্রী শিলা দীক্ষিত। ২০ জুলাই ৮৮ বছর বয়সে এক বেসরকারী হাসপাতালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর প্রয়ান ঘটে। রাস্তা, ফ্লাইওভার ও গণপরিবহন ব্যবস্থাসহ দিল্লির পরিকাঠামোর উন্নয়নে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরে যাওয়ার পর ২০১৪ সালে তিনি কেরল-এর রাজ্যপাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে মাত্র ছয় মাসের মধ্য়েই পদত্যাগ করেন। এই বছরের শুরুর দিকে শিলা দীক্ষিতকে দিল্লি কংগ্রেসের প্রধান করা হয়েছিল। তবে লোকসভা নির্বাচনে তিনি বিজেপির মনোজ তিওয়ারির কাছে পরাজিত হন।
412
জয়পাল রেড্ডি - ২৮ শে জুলাই ৭৭ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়পাল রেড্ডি। উচ্চ মাত্রায় জ্বর নিয়ে প্রবীণ এই কংগ্রেস নেতা হায়দরাবাদের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি-র আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। পাঁচবারের সাংসদ ও চারবারের বিধায়ক দুইবার রাজ্যসভার সাংসদও হয়েছিলেন। তিনটি সরকারের অধীনে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করলে প্রতিবাদে কংগ্রেস ছেড়ে জনতা পার্টি-তে যোগ দিয়েছিলেন জয়পাল রেড্ডি। ১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর তিনি ফের কংগ্রেসে যোগ দেন।
512
সুষমা স্বরাজ - ৬ অগাস্ট সকলকে চমকে দিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়ান ঘটে প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী তথা বিশিষ্ট বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ-এর। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৭। দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতারা শোক প্রকাশ করেন। প্রথম মোদী সরকারের বিদেশমন্ত্রী হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন তিনি। বিদেশী অথবা বিদেশে গিয়ে কোনও ভারতীয় বিপদে পড়ে তাঁর কাছে সাহায্য চাইলে সব সময় তাঁর সহায়তা পাওয়া যেত। টুইটারে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সক্রিয়। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় মাধ্যমে সরাসরি তাঁর কাছে পৌঁছে যেতে পারতেন। এমনকি কেউ মজা বা রসিকতা করে সহায্যের অনুরোধ জানালেও সুষমা স্বরাজ তাঁদের উত্তর দিতেন।
612
কেএম মণি - ১৯৬৫ সাল থেকে কেরলের পলা বিধানসভা এলাকায় একটানা ৫০ বছর বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ড করেছিলেন কেএম মণি। সেইসঙ্গে হিসেবে তিনি কংগ্রেসের নেতৃত্বীন ইউডিএ সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে রেকর্ড ১৩ বার বাজেট পেশ করেন। ৯ এপ্রিল ৮৬ বছর বয়সে তাঁর জীবনাবসান ঘটে।
712
জগন্নাথ মিশ্র - ১৯ আগস্ট নয়াদিল্লির একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিহারের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্র। বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তার আগে বেশ কয়েক মাস ধরেই তিনি কিছু স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তিন-তিনবার তিনি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনিই ছিলেন রাজ্যের শেষ কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তাঁর ভাই ললিতনারায়ণ মিশ্র ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী সরকারের রেলমন্ত্রী।
812
অরুণ জেটলি - সুষমা স্বরাজের মৃত্যুর শোক কাটতে না কাটতেই প্রথম মোদী সরকারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী অরুণ জেটলি-রও জীবনাবসান ঘটে। দিল্লির এইমস হাসপাতালে দুই সপ্তাহ ভর্তি তাকার পর ২৪ অগাস্ট তাঁর লড়াই শেষ হয়ে যায়। বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অন্যতম আস্থাভাজন ছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। জেটলি ছিলেন বিজেপি সরকারের অন্যতম সেরা কৌশলবিদ। দল যখনই সমস্যায় পড়ত, সমাধানকারী হিসাবে সামনে এগিয়ে আসতেন তিনি। অর্থমন্ত্রী হিসাবে তাঁর হাত ধরেই স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের সবচেয়ে বড় আর্থিক সংস্কার জিএসটি চালু হয়েছিল। তবে মন্ত্রী থাকাকালীনই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেই কারণেই এই আইনজীবী-রাজনীতিবিদ দ্বিতীয় মোদী সরকারে আর মন্ত্রিত্বের দায়িত্ব নিতে চাননি।
912
রাম জেঠমালানি - ৮ সেপ্টেম্বর প্রয়ান ঘটে ভারতের অন্যতম বিশিষ্ট আইনজীবী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাম জেঠমালানি-র। বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। ছয়বারের রাজ্যসভার এই সদস্য যুক্তফ্রন্ট এবং বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৬ সালে, তিনি অবশ্য আরজেডি টিকিটে রাজ্যসভায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। কোর্টরুমে তীব্র যুক্তি দেওয়ার জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টে বহু হাই-প্রোফাইল মামলা লড়েছেন তিনি। এছাড়া লালকৃষ্ণ আদবানী, লালুপ্রসাদ যাদব, জয়ললিতা, অরবিন্দ কেজরিওয়াল-এর মতো বহু বিশিষ্ট রাজনীতিবিদের হয়েও মামলা লড়েছেন।
1012
গুরুদাস দাসগুপ্ত - দীর্ঘদিন ফুসফুসের ক্যানসারে ভোগার পর ৩১ অক্টোবর জীবনাবসান ঘটে বিশিষ্ট সিপিআই নেতা গুরুদাস দাসগুপ্ত-এর। রাজনীতি শুরু করেছিলেন ছাত্রনেতা হিসেবে। পরে ট্রেড ইউনিয়ন ও ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের নেতাও হন। ১৯৬৪ সালে কমিউনিস্ট পার্টি ভাগ হলেও তিনি মার্ক্সিস্টদের সঙ্গে না গিয়ে সিপিআই-তেই থেকে গিয়েছিলেন। ১৯৮৫ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে তিনি তিনবার রাজ্যসভার সাংসদ নির্বাচিত হন, আর ২০০৪ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে দুইবার নির্বাচিত হন লোকসভায়।
1112
টিএন সেশন - গত শতাব্দীর নয়ের দশকে ভারতের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আমূল সংস্কারের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন প্রাক্তন প্রধান নির্বাচন কমিশনার টিএন সেশন। ১০ নভেম্বর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণের জন্য ইলেকশন কমিশনের সুদূরপ্রসারী সাংবিধানিক ক্ষমতার প্রয়োগের জন্যই এই অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার বেশি পরিচিত ছিলেন। তাঁর সংস্কারগুলি অবশ্য সেই সময়ের রাজনৈতিক মহল ভালোভাবে নেয়নি। তাঁর ডানা ছাঁটার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার সেই সময় দুজন অতিরিক্ত নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করেছিল। তাতেও অবশ্য তাঁকে রোখা যায়নি। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে তাঁর উদ্যোগের জন্য তিনি এশিয়ার নোবেল হিসাবে পরিচিত রামন ম্যাগসেসে পুরষ্কার পেয়েছিলেন।
1212
ক্ষিতি গোস্বামী - ২৪ নভেম্বর ভোরে বার্থক্যজনিত রোগে চেন্নাই-এর এক হাসপাতালে জীবনাবসান ঘটে বিশিষ্ট আরএসপি নেতা তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীর। বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। বয়সজনিত রোগ ছাড়াও তিনি ফুসফুসের সংক্রমণেও ভুগছিলেন। আটের দশকের শেষ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটানা প্রায় দুই দশক ধরে তিনি পশ্চিমবঙ্গের জলসম্পদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে তিনি আরএসপির রাজ্য সম্পাদক হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হন।
Share this Photo Gallery
click me!
Recommended Photos