নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল, ২০১৯: আসন্ন অধিবেশনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিলটি পেশ হতে চলেছে তা হল নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল, ২০১৯। ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন পাল্টে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, বংলাদেশ থেকে আগত হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি এবং খ্রিস্টান শরণার্থীদের এই দেশের নাগরিকত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে এই বিলটি আনা হচ্ছে। ১৯৫৫-এর আইনে বলা হয়েছে এই শরণার্থীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য শেষ ১৪ বছরের মধ্যে অন্তত ১১ বছর ভারতে বসবাস করতে হবে। নয়া বিলে এই সময়টা কমিয়ে ৬ বছর করা হচ্ছে। প্রথম মোদী সরকারের সময়ই বিলটি পেশ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু লোকসভা ভেঙে যাওয়ায় বিলটিও বাতিল হয়ে যায়।
ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল, ২০১৯: কর্পোরেট সংস্থাগুলি উপভোক্তাদের তথ্য কীভাবে নাড়াঘাঁটা করবে ও তা প্রক্রিয়াকরণ করবে তাতে লাগাম টানতে এবং অন্যথ্যায় জরিমানা প্রবর্তনের জন্যে এই বিলটি পেশ করা হচ্ছে। এই বিলের প্রস্তাবগুলি তৈরি হয়েছে বিচারপতি বিএন শ্রীকৃষ্ণের ২০১৮ সালের জুলাই মাসে জমা দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। শিল্প মহলের মতামতের ভিত্তিতে এর আগে খসড়া বিলটি-তে দু'বার পরিবর্তন করা হয়েছে।
তৃতীয় লিঙ্গ (অধিকার সংরক্ষণ) বিল, ২০১৯: চলতি বছরের ১৯ জুলাই লোকসভায় সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রী, থাওয়ারচাঁদ গেহলট এই বিলটি এনেছেন। ৫ অগাস্ট তা পাসও হয়ে যায়। বিলটি ট্রান্সজেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিকে সংজ্ঞায়িত করেছে। রুপান্তরকামী পুরুষ, নারী, উভলিঙ্গ বৈচিত্র্যসম্পন্ন, জেন্ডার-ক্যুয়ার্স এবং 'কিন্নর' বা 'হিজড়া' হিসেবে সামাজিক ও সাস্কৃতিকভাবে পরিচিত ব্যক্তিদের সকলকে তৃতীয় লিঙ্গ বা ট্রান্সজেন্ডারের মর্যাদা দেবে। শিক্ষা, চাকুরী, স্বাস্থ্যসেবা, সকলের মধ্যে বসবাসের ক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তিরা যাতে বৈষম্যের শিকার না হন তার জন্য আইন প্রবর্তন করছে।
ইলেকট্রিক সিগারেট নিষিদ্ধকরণ (উৎপাদন, তৈয়ার, আমদানি, রফতানি, বিক্রয়, বিতরণ, সঞ্চয় এবং বিজ্ঞাপন) বিল, ২০১৯: এই অধ্যাদেশ জারি করা হবে ভারতে ই-সিগারেট উৎপাদন, বিক্রি এবং বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে। এই আইন না মানলে এক বছরের পর্যন্ত কারাদণ্ড, অথবা এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডই পেতে হতে পারে। ই-সিগারেটের স্টক সংরক্ষণও করা যাবে না। এর জন্য ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড, বা ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডই দেওয়া হতে পারে।
ন্যাশনাল কমিশন ফর ইন্ডিয়ান সিস্টেম অফ মেডিসিন বিল, ২০১৯: ইন্ডিয়ান মেডিসিন সেন্ট্রাল কাউন্সিল অ্যাক্ট, ১৯৭০ বাতিল করে এই বিলটি আনা হচ্ছে। ভারতীয় মেডিসিন সিস্টেমের শিক্ষা ও অনুশীলনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি জাতীয় কমিশনও গঠন করার প্রস্তাব রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই বিলটি রাজ্যসভায় পেস করা হয়েছিল।
সারোগেসি (নিয়ন্ত্রণ) বিল, ২০১৯ বানিজ্যিকভাবে সারোগেসি বন্ধ করার জন্য এই বিল আনা হচ্ছে।
জালিয়ানওয়ালাবাগ জাতীয় স্মৃতিসৌধ (সংশোধনী) বিল, ২০১৯: এতদিন জালিয়ানওয়ালাবাগ জাতীয় স্মৃতিসৌধ-এর ট্রাস্টি ছিলেন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সভাপতি। এই বিলটি প্রয়োগ করে কংগ্রেস প্রেসিডেন্টকে এই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ট্রাস্টি বোর্ডের মনোনীত সদস্যদের অপসারণের ক্ষমতাও আসবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশন কোড বিল, ২০১৯: এই বিলটি ট্রেড ইউনিয়ন আইন (১৯২৬), শিল্প কর্মসংস্থান (স্থায়ী আদেশ) আইন (১৯৪৭) এবং শিল্প বিতর্ক আইন (১৯৪৪)-কে এক জাগায় সংহত করবে।
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিল: উপরোক্ত বিলগুলি ছাড়াও লোকসভার আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে একটি অধ্যাদেশ প্রতিস্থাপনের জন্য কর আইন (সংশোধনী) বিল, ২০১৯; ২০১৩ সালের কোম্পানি আইন বদলে নির্দিষ্ট কিছু অপরাধকে অপরাধের তালিকা থেকে সরিয়ে ব্যবসায়ে স্বাচ্ছন্দ্য আনতে কোম্পানি (দ্বিতীয় সংশোধনী) বিল, ২০১৯; চিট ফান্ড শিল্পে নিয়ন্ত্রণ আনতে চিট ফান্ডস (সংশোধনী) বিল, ২০১৯ পেশ করা হবে।
থাকতে পারে চমক: উপরে উল্লেখ করা বিলগুলির বাইরেও এই শীতকালীন অধিবেশনে মোদী সরকার আরও একটি চমক দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। দ্বিতীয় মোদী সরকারের আমলে গেরুয়া শিবিরের দীর্ঘদিনের তিন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির দুটি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিল ও রামমন্দিরের নির্মাণের পথ পরিষ্কার হয়েছে। বাকি আছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু। অর্থাৎ পার্সোনাল ল বোর্ডগুলি ভেঙে দিয়ে সব ধর্ম ও সম্প্রদায়কে একটি অভিন্ন দেওয়ানি আইনের আওতায় নিয়ে আসা। এই অদিবেশনে এই বিষয়েও একটি বিল এনে চমক দিতে পারে সরকার।