গোটা বিশ্ব যেন নিজের মাকে হারিয়েছিল সেদিন, গোটা বিশ্ব যেন অনাথ হয়েছিল একসাথে। তাঁর চলে যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে এখনও আমরা সবাই। কোনও বিপদে, কোনও কষ্টে আজও যেন সবাই বলে উঠি ফিরে এসো মা। আর্তের মা, পীড়িতের মা সর্বজনীন জননী তিনি। তিনি মাদার টেরেসা। ২৬শে অগাষ্ট তাঁর জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা কিছু অদেখা ছবি। যা নতুন করে স্মৃতি উসকে দেবে সেই প্রিয় মায়ের।
১৯১০ সালের ২৬ অগাস্ট যুগশ্লোভিয়ার (অধুনা মেসিডোনিয়া) স্কোপিয়ে শহরে জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল মেরি টেরেসা বোজাক্সিউ। তিনি ছিলেন তাঁর পিতা-মাতার কনিষ্ঠ সন্তান।
210
১৯১৯ সালে মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি পিতৃহারা হন। পিতার মৃত্যুর পরে তাঁর মা তাঁকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে লালন-পালন করেন। ছোটবেলা থেকে তিঁনি ধর্ম সংক্রান্ত কাজকর্ম করতেই বেশি আগ্রহী ছিলেন।
310
মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি ধর্মীয় সন্ন্যাস জীবন যাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। এর ঠিক ছয় বছর পরে মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করেন এবং যোগ দেন সিস্টার অফ লরেটো সংস্থায়। ধর্ম প্রচারক হিসাবে কাজ শুরু করার পরে তাঁর আর কোনও দিন তাঁর মা ও দিদির সঙ্গে দেখা হয়নি।
410
টেরেসা প্রথমে ইংরেজি ভাষার শিক্ষক হিসাবে কাজ শুরু করেন এবং এই শিক্ষকতার সূত্র ধরেই তিনি ভারতে আসেন। তবে শিক্ষকতা নয় মাদার টেরেসার ভারতে আগমনের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল সমাজসেবা।
510
সমাজসেবা তাঁকে আজও অমর করে রেখেছে। ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসাবে প্রথম শপথ নেন। সন্ন্যাস গ্রহণের সময়েই তাঁর নাম পরিবর্তন করেন এবং তাঁর নাম রাখা হয় টেরেসা। পরবর্তীকালে তাঁকে অবশ্য সন্ন্যাস গ্রহণের জন্য চূড়ান্ত শপথ নিতে হয়েছিল।
610
১৮৪৮ সাল থেকে টেরেসা জনসাধারণের মধ্যে ধর্ম প্রচার করা শুরু করেন। সেই সময়েই তিনি ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। পোপের অনুপতি নিয়ে তিনি সেই সময়ে কলকাতার ১৪নং ক্রিক লেনের একটি ছোট ঘরকে কেন্দ্র করে মানব সেবার কাজ শুরু করেন।
710
১৯৫০ সালের ৭ অক্টোবর তিনি কলকাতায় 'মিশনারিজ অব চ্যারিটি' প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময় কুষ্ঠরোগীদের সমাজে ব্রাত্য করে রাখার চল ছিল। ফলে কুষ্ঠরোগে আক্রান্তরা বিনা চিকিৎসায় অত্যন্ত দুরাবস্থার মধ্যে রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকতেন।
810
মিশনারিজ অফ চ্যারিটি তৈরির সময় মাদার তাঁর সঙ্গে পেয়েছিলেন মাত্র ১০ জন সহযোগীনিকে। এছাড়াও তিনি গড়ে তোলেন শিশুভবন যা তিনি গড়ে তুলেছিলেন অনাথ শিশুদের জন্য।
910
ভারতের বাইরে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, রাশিয়া, পোল্যান্ড, যুগোশ্লোভিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তাঁর সেবা কেন্দ্রগুলি। সারা বিশ্বে তাঁর মোট ৪৭০ টিরও বেশি সেবা কেন্দ্র আছে। এছাড়াও তিনি গড়ে তুলেছিলেন ১২৪ টি স্কুল, ২২০টি দাতব্য চিকিৎসালয়।
1010
১৯৯৭ সালের ১৩ মার্চ মিশনারিজ অফ চ্যারিটির পদ থেকে সরে দাঁড়ান প্রবল অসুস্থ মাদার। সেই বছরেরই ৫ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পরে কেটে গেছে দুই দশকেরও বেশি সময়, তবে মানুষের জন্য তাঁর আত্মবলিদান আজও তাঁকে মানুষের মনে বাঁচিয়ে রেখেছে।