এবার হজযাত্রার উপর চিনের বিধিনিষেধ, জাতিগত শুদ্ধিকরণের ভয় পাচ্ছেন মুসলমানরা
উপরে চরমপন্থা ও বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবিলার বোরখা। তার নিচে লুকোনো জাতিগত শুদ্ধিকরণের খাঁড়া। ফের চিনা মুসলমানদের উপর নেমে বেজিং-এর বিধিনিষেধ। এবার একেবারে পবিত্র হজযাত্রার উপর আরোপ করা হল বিধিনিষেধ।
amartya lahiri | Published : Oct 13, 2020 11:53 PM IST / Updated: Oct 28 2020, 05:09 PM IST
মঙ্গলবার শি জিনপিং সরকার চিনে বার্ষিক হজের জন্য সৌদি আরব সফরকারী মুসলমানদের উপর নতুন করে বিধিনিষেধ জারি করল। যা না মানলে হজ তো করা যাবেই না, আর প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে তারপরও হজ করতে গেলে পড়তে হবে শাস্তির মুখে।
হজযাত্রীদের জন্য জারি করা নতুন বিধিমালায় মোট ৪২ টি ধারা বা শর্ত রয়েছে। বলা হয়েছে, শুধুমাত্র চিনা ইসলামিক সমিতির মাধ্যমেই হজযাত্রা করা যাবে। কেউ চাইলেও নিজের আয়োজনে বা অন্য কোনও সংস্থার মাধ্যমনে হজে যেতে পারবেন না। সেইসঙ্গে হজযাত্রীদের চিনা আইন এবং সৌদির আইন মানতে হবে। এছাড়া, হজযাত্রীদের ধর্মীয় উগ্রবাদের বিরোধিতা করতে হবে।
আপাত দৃষ্টিতে এই বিধিগুলির মধ্যে কোনও আপত্তিকর বিষয় না থাকলেও, এই বিধির মধ্যেই বিপদের আভাস পাচ্ছেন চিনা মুসলমানরা। চিনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী হজের আবেদন করার সময় চিনা নাগরিকদের মৌলিক কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। এই শর্তগুলি কি তা জানানো হয়নি। এইভাবে মুসলমানদের উপর রাষ্ট্রীয় নজরদারি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চিনে প্রায় দুই কোটি মুসলমান রয়েছে, প্রায় এক কোটি তুর্কি বংশোদ্ভূত উইঘুর মুসলমান আর বাকি এক কোটি হুই মুসলিম, অর্থাৎ যারা জাতিগতভাবে চিনা বংশোদ্ভূত। প্রতি বছর গড়ে ১০,০০০ চিনা মুসলমান হজযাত্রায় যান। হুইদের নিয়ে তেমন সমস্যা না থাকলেও প্রাকৃতিক সম্পদে ঠাসা শিনজিয়াং প্রদেশের তুর্কিভাষী উইঘুর মুসলমানদের জাতিসত্ত্বা মুছে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে চিনা কমিউনিস্ট শাসকদের বিরুদ্ধে।
একে একে তাদের মসজিদগুলি ভেঙে দিচ্ছে বেজিং। এমনকী একটি মসজিদ ভেঙে গণশৌচাগার তৈরি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। এছাড়া, ধর্মীয় চরমপন্থার পথ থেকে সরিয়ে আনার অছিলায় অন্তত ১ লক্ষ উইঘুর মুসলমানকে বন্দিশিবিরে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা। তবে চিনের দাবি, ওইগুলি কারাগার নয়, পুনঃশিক্ষা কেন্দ্র।
ইসলামের ধর্মের মূল পাঁচ স্তম্ভের একটি হল হজ যাত্রা। ধর্মীয় নির্দেশ অনুযায়ী প্রত্যেক মুসলমানকে ক্ষমতা থাকলে জীবৎকালে কমপক্ষে একবার অন্তত হজযাত্রা করতেই হয়। এবার সেই হজযাত্রার উপরই শর্ত চাপালো চিন সরকার। একে সরাসরি ইসলামের উপর আঘাত বলেই মনে করছেন চিনা মুসলিমরা।