বিশ্বব্যাপী আশা জাগিয়েছিল অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন। কিন্তু সেই ভ্যাকিসনের তৃতীয় তথা সর্বশেষ পর্যায়ের ট্রায়াল সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। ব্রিটেনে একজন ভ্যাকসিন গ্রহীতা অসুস্থ হয়ে পড়ায় আপাতত তাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
Asianet News Bangla | Published : Sep 9, 2020 6:48 AM IST / Updated: Sep 09 2020, 01:25 PM IST
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরি করার যজ্ঞে উঠেপড়ে লেগেছে বিশ্বের অনেক দেশ। ইতিমধ্যেই ট্রায়ালে বেশ খানিকটা এগিয়েও গিয়েছে কিছু দেশ। রাশিয়া তো দাবি করেছে, প্রথম পর্যায়ের ভ্যাকসিন তৈরি তাদের।
এর মধ্যেই মানবদেহে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বন্ধ করল ব্রিটেনের ফার্ম অ্যাস্ট্রাজেনেকা। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মিলে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চালাচ্ছিল তারা।
জানা গিয়েছে, এই ভ্যাকসিন যেসব ভলান্টিয়ারদের শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে অনেকেই হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
চূড়ান্ত অর্থাৎ তৃতীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিনের পরীক্ষা চলছিল। প্রতিষেধকের ডোজ নেওয়ার পর স্বেচ্ছাসেবী মধ্যে একজন অজ্ঞাত অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে তাই মানব শরীরে ওই প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অ্যাস্ট্রোজেনেকা।
ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের সঙ্গে হাত মিলিয়ে করোনার প্রতিষেধক তৈরি করছে ব্রিটিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রোজেনেকা। চলতি বছরের শেষে, না হলে আগামী বছরের গোড়ার দিকে তাদের তৈরি প্রতিষেধক ভারতের বাজারে এসে পৌঁছনোর কথা ছিল।
তবে এরকম বিরতিকে ‘রুটিন’ কাজের অংশ হিসেবে উল্লেখ করেছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। তবে, স্বেচ্ছাসেবকের শরীরে কী বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।
সংস্থার তরফে বিবৃতি জারি করে তাদের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘বিশ্ব জুড়ে নিয়ন্ত্রিত ভাবে এবং র্যান্ডোমাইজড পদ্ধতিতে অক্সফোর্ড করোনাভাইরাস প্রতিষেধকের যে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছিল, তা পর্যালোচনা করে দেখে স্বেচ্ছায় সাময়িক বিরতি নিয়েছি আমরা। একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কমিটির হাতে সমস্ত তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা নিরাপত্তার দিকটি খতিয়ে দেখতে পারে।’’
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করোনা ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল চলছে বিশ্বের অনেক দেশেই। কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরিতে বিশ্বজুড়ে যতগুলো চেষ্টা চলছে, তার মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিনকেই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সফলভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ায় প্রত্যাশা ছিল যে, এই ভ্যাকসিনটিই সবার আগে বাজারে আসবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা জুড়ে প্রায় ৩০ হাজার অংশগ্রহণকারীদের উপর তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হয়। তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় হাজার হাজার মানুষের ওপর পরীক্ষা চালানো হয়ে থাকে। অনেক সময় সেই পরীক্ষা কয়েক বছর ধরেও চলতে পারে।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র জানান, ‘বড় ধরনের পরীক্ষায় অনেক সময় এরকম অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে। তবে সেটা অবশ্যই স্বতন্ত্র একজন পরীক্ষককে সতর্কভাবে যাচাই করে দেখতে হবে।’
প্রতিষেধক নিয়ে যে ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, তাঁর নাম-পরিচয় যদিও প্রকাশ করেনি অ্যাস্ট্রোজেনেকা। যে ‘অজ্ঞাত অসুখ’ দেখা দিয়েছে তাঁর শরীরে, তা কতটা গুরুতর, খোলসা করা হয়নি তা-ও। প্রতিষেধক তৈরির ক্ষেত্রে এমন ঘটনাও এই প্রথম নয়। তবে কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরিতে এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল।
অ্যাস্ট্রোজেনেকা তৈরি করোনার সম্ভাব্য প্রতিষেধকটির নাম এজেডডি১২২২। এটি একটি ‘অ্যাডিনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন’। অ্যাডিনোভাইরাস একটি সাধারণ সর্দি-জ্বরের ভাইরাস যা শিম্পাঞ্জিদের থেকে তৈরি। ভাইরাসটিকে ভেক্টর বা বাহক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, কয়েকদিনের মধ্যেই আবার পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হবে।