Babul Supriyo: রামদেব বাবা থেকে মশলামুড়ি, বাবুল সুপ্রিয়র বর্ণময় রাজনীতির ৭ বছর
রাজনীতির আঙিনায় উল্কার গতিতে উত্থান বাবুল সুপ্রিয়র। ৭ বছরের রাজনৈতিক জীবন কম বর্ণময় নয়। প্রথমে বিজেপি। তারপর শনিবার তিনি আচমকাই নাম লিখিয়ে ফেলেন তৃণমূল কংগ্রেসে।
Asianet News Bangla | Published : Sep 18, 2021 1:17 PM IST / Updated: Sep 18 2021, 08:43 PM IST
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের উপস্থিতিতেই বিজেপি থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে নাম লেখান বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর দলবদল অপ্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু গত চার দিনে বাবুলের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট যে বদলাচ্ছিল তা তাঁর ঘনিষ্ট অনুগামীরা টের পেয়েছিলেন। যদিও এই বিষয়ে আগে কোনও মন্তব্য করেননি বাবুল। দল বদলের পরই সেকথা জানিয়েছেন তিনি।
এখন তিনি তৃণমূলের সদস্য। হাতে তুলে নিয়েছেন ঘাসফুল পকাতা। পদ্ম এখন অতীত। কিন্তু একটা সময় তিনি যথেষ্ট ঘনিষ্ট ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহের। বিজেপি চোখের মণি বললেও ভুল হবে না। কিন্তু দল বদল করেই তিনি জানিয়েছেন মমতা হয়ে ভোট প্রচারে তিনি রাজি।
সালটা ছিল ২০১৪। তখনও প্রধানমন্ত্রী হননি মোদী। আসনসোলে ভোট প্রচারে এসে মোদীর প্রথম কথাই ছিল 'মুঝে বাবুল চাইয়ে।' তারপর সবটাই ইতিহাস। টলিউড, বলিউডে পরিচিত নাম হলেও বাবুল কিন্তু ২০১৪ সালের আগে রাজনৈতিক মহলে কোনও পরিচিত ছিল না। আনকোরা এই তুরণেকেই তরুপের তাস করেছিল বিজেপি। কারণটা জালনে অবাক হবেন আপনিও।
প্লেনে বাবুলের সঙ্গে আলাপ হয় বাবা রামদেবের। সেই সময়ই বাবুলই রামদেবকে জানিয়েছিলেন তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে আসতে চান। সূত্রের খবর বাবা রামদেবই বাবুলের নাম প্রস্তাব করেন মোদী আর অমিত শাহের কাছে।
সম্প্রতি মন্ত্রিত্ব থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পর রাজনীতি ছাড়তে চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন তিনি। সেখানেই তিনি জানিয়েছিলেন তাঁর রাজনীতিতে আসার নেপথ্য কাহিনি। তিনি বলেছিলেন বাবা রাম দেবের নির্দেশেই তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন।
২০১৪ সালে হাড্ডাহাড্ডির লড়াইয়ে রাজনীততে আনকোরা বাবুল হারিয়েছিলেন তৃণমূলের দাপুটে নেত্রী দোলা সেনকে। হারিয়ে দেন আগের লোকসভা নির্বাচনের জয়ী প্রার্থী সিপিএম-এর বংশোগোপাল চৌধুরীকে। দুবারের সাংসদ ছিলেন তিনি। যদিও ২০১৪ সালে বাংলায় বিজেপি একটাও আসন পাবে বলে কেউই মনে করেনি। কিন্তু বাবুল সেই অসাধ্য সাধ করেছিলেন।
ভোটে জিতেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়ে যান তিনি। তারপরতো সবটাই ইতিহাস। টানা পাঁচ বছর তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তিনি। দিল্লিতে বিজেপির খাতায় নম্বরও বেড়েছিল পাল্লা দিয়ে। ২০১৯ সালেও বিজেপির লক্ষ্য ছিল বাংলায়। আসানসোলেই প্রার্থী করা হয় বাবুলকে। তবে সেইবার তাঁর প্রতিপক্ষ অনেকটাই সহজ। তৃণমূলের মুনমুন সেন। যাকে সহসাই হারিয়ে দেন বাবুল।
বিধানসভা নির্বাচনে কিছুটা বিপাকে পড়েন বাবুল। তৃণমূলের গড় হিসেবে পরিচিত টালিগঞ্জের প্রার্থী করা হয়। তিনি হেরে যান। কিন্তু তাতে বিজেপির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়েনি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব বজায় ছিল। সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করার পরই মন্ত্রিত্ব খোয়াতে হয় বাবুলকে। তারপরই দল ছাড়ার কথা বলেন বাবুল। কিন্তু অমিত শাহর হস্তক্ষেপে সে যাত্রায় খান্ত দেন। রাজনীতি থাকলেও বিজেপির সঙ্গে যে তাঁর দূরত্বে বেড়েছিল তা স্পষ্ট হয় প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালের প্রচারে তাঁর অনুপস্থিতি।
বাবুল নিজেই জানিয়েছেন সম্প্রতি মেয়ের স্কুলের একটি বিষয় নিয়ে ডেরেক ও'ব্রায়নের সঙ্গের তাঁর যোগাযোগ হয়েছিল। ডেরেকের হাত ধরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ। কিন্তু এর আগে যে তাঁর সঙ্গে তৃণমূল নেত্রীর যোগাযোগ ছিল না তেমনটা অবশ্য নয়। কিন্তু ঝালমুড়ি রাজনীতির কথা সকলেরই জানা আছে। দুবার মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সঙ্গে ঝালমুড়ি খেয়েছিলেন বাবুল।
যে যাই হোক বিজেপির বাবুল এখন তৃণমূলের ঘরে। বলা যেতে পারে তৃণমূলের জ্যাকপট। কারণ প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর তকমা রয়েছে তাঁর। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাজেপি বাংলায় যথেষ্ট ধাক্কা দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসকে। একের পর একনেতা মন্ত্রীদের জায়গা দিয়েছিল দলে। কিন্তু তারপরেও শেষরক্ষা হয়নি। কিন্তু বিধানসভা ভোটের পরেই উলটপুরান। দল ভাঙছে বিজেপি। পাল্টা ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ঘোর গোছাতে ব্যস্ত তৃণমূল সুপ্রিমো।