পড়ানোর সঙ্গে ছাত্রদের এঁটো বাসনও মাজেন,শিক্ষক দিবসে শ্রদ্ধা বিশেষভাবে সক্ষম 'প্রবীর স্যার'-কে
আজ শিক্ষক দিবস। আজ সবাই তাঁদের জীবনের চলার পাথেয় চির-নমস্য শিক্ষকদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছেন। তবে এই পৃথিবীর বুকে এমন অনেক মানুষও রয়েছেন, যাঁরা শিক্ষক হিসাবে তো বটেই একজন মানুষ হিসাবেও সকলের মনের মধ্যে থেকে যাবেন আজীবন। তেমনই একজন হলেন প্রবীর পাল। সকলের প্রিয় প্রবীর স্যার।
Indrani Mukherjee | Published : Sep 5, 2019 11:03 AM IST / Updated: Sep 05 2019, 05:15 PM IST
ছোট থেকেই তাঁর ইচ্ছে ছিল শিক্ষকতা করবেন। পড়াশোনার প্রতিও ছিল অদম্য ভালবাসা। তবে প্রতিদিনের মতো শিক্ষক দিবসের দিনেও তাঁকে দেখা গেল বাসন-পত্র ধুতে। কাজটি খানিকটা অভ্যাসবশতই করেন তিনি।
নিজের স্কুলের ছাত্রদের প্রাণের থেকেও বেশি ভালবাসেন তিনি। আর এই বিশেষ দিনে সকলের প্রিয় প্রবীর স্যারকে শ্রদ্ধা জানাতে ভোলেনি তাঁর প্রিয় ছাত্রীরা। ১৯৪৮ সালে স্থাপিত হয় গোঘাট চাতরা প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের পড়ুয়া প্রায় ১২০ জন ছাত্র-ছাত্রী। আর এই বিদ্যালয়ের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছেন প্রবীর বাবু।
তাঁর বাড়ি গোঘাট চাতরা গ্রামেই। খুব ছোটবেলা থেকেই প্রতিবন্ধকতার শিকার তিনি। পোলিওর গ্রাসে দেহের নিম্নাঙ্গে নেই কোনও সাড়। তাই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরায় বারবার অসুবিধার সম্মুখীন হন প্রবীর বাবু। কিন্তু জীবন যুদ্ধে কোনওভাবেই হেরে যাননি তিনি, বরং নিজের সামান্যতম সক্ষমতা দিয়েও লড়াই করে চলেছেন তিনি।
৪৩ বছর বয়স্ক প্রবীরবাবুর বাড়িতে রয়েছেন কেবল তাঁর বৃদ্ধা মা। পাশেই থাকেম তাঁর দাদা এবং বৌদিরা। বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ার কারণে চাকরি পাননি তিনি। কিন্তু ছোটবেলা থেকে মনের মধ্যে যে ইচ্ছেটাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন আজ তার হাত ধরেই এগিয়ে চলেছেন একটু একটু করে।
সম্পূর্ণ অবৈতনিকভাবেই গোঘাট চাতরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পড়ান তিনি। তাঁর আয় বলতে হাতে গোনা কয়েকটি টিউশনি এবং সরকারের তরফে পাওয়া ১০০০ টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা।
গত ২০ বছর ধরে চাতরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রী দের পড়িয়ে চলেছেন তিনি। তবে শুধু পড়ানোই নয়, বিদ্যালয়ের সমস্ত ঘর নিজে হাতেই ঝাড় দেন তিনি। বিদ্যালয়ের বাগানও তিনিই পরিচর্যা করেন। বিদ্যালয়ের বাগানে ফলিয়েছেন অনেক সবজিও। গাছের পরিচর্যা করাও নিখুঁত হাতেই সামলান তিনি।
এখানেই শেষ নয়, ছাত্রছাত্রীদের মিড ডে মিল খাওয়া হয়ে গেলে সেইসব বাসনপত্রও নিজের হাতে মেজে দেন তিনি। তবে তাঁকে এইসব কাজ করার জন্য কেউ কোনওদিন জোর করেনি। সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছে থেকেই এই কাজ করেন তিনি।
সম্প্রতি একটি ক্লাবের তরফে তাঁকে একটি ট্রাইসাইকেল দেওয়া হয়, আর সেই ট্রাই সাইকেলে করেই বিদ্যালয়ে আসেন তিনি। অনেকসময়ে, বিদ্যালয়ের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী তাঁকে বাড়ি থেকে নিয়ে আসে গাড়ি ঠেলে।
কথায় কথায় তিনি জানান তাঁর ইচ্ছে ছিল ওই চাতরা বিদ্যালয়ে প্যারা টিচার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই সুযোগ তাঁর আসেনি।
তাঁর একটাই ইচ্ছে একবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার। তবে তিনি এও জানান যে, তাঁর কোনও চাহিদা নেই, দিদিকে তাঁর ভাললাগে তাঁর কাজের জন্য। অন্তত একটিবার তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চান তিনি। কবে সেই আশা পূরণ হবে সেই চিন্তাতেই এখন দিন কাটে তাঁর।