করোনা আতঙ্কে ঘুচল না বন্দিদশা, ব্যাঙ্কের লকারে বসে পুজো নিলেন দেবী দুর্গা
বছরভর বন্দি থাকতে হয় দেবী দুর্গাকেও! প্রতিবছর পুজো সময়ে রীতিমতো পুলিশি প্রহরায় রাজবাড়িতে গিয়ে পুজো নেন তিনি। করোনা আতঙ্কের এবার সেই রীতিতে ছেদ পড়ল। ভিড় এড়াতে এবার আর ব্যাঙ্কের লকার থেকে বের করা হল না বিগ্রহকে!
সে প্রায় সাড়ে চারশোর বছর আগেকার কথা। তখন পুরুলিয়ার জয়পুর থাকতেন মুন্ডার জনজাতির মানুষের। উজ্জ্বয়িনী থেকে প্রত্যন্ত এই এলাকায় পা রাখেন রাজ সিংহ। পরবর্তীকালে তাঁর নামে এলাকাটির নাম হয় জয়পুর।
কথিত আছে, মুন্ডা সর্দারকে হত্যা করে এলাকার দখল নেন জয় সিংহ। মুন্ডা সম্প্রদায়ের মানুষেরা যে খাঁড়াটি ইষ্টদেবী হিসেবে পুজা করতেন, সেই খাঁড়াটিকে বিনা মূর্তিতে শক্তির দেবী কলাবউ হিসেবে পুজোর প্রচলন করেন।
বহু বছর পর সপ্তম রাজা কাশিনাথ সিংহের আমলে কলাবউটি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এরপর সোনার দ্বিভূজা দুর্গামূর্তি ও রুপোর চালচিত্র তৈরি করে পুজো শুরু করে জয়পুরের তৎকালীন রাজা।
এভাবেই চলছিল। ১৯৭০ সালে রাজবাড়ি থেকে সোনার গয়না ও দামি সামগ্রী লুট করে নিয়ে চলে যায় ডাকাতরা। কোনওমতে রক্ষা পায় সোনার দুর্গা মূর্তিটি।
আর ঝুঁকি নেননি, সোনার বিগ্রহটি ব্যাঙ্কের লকার রেখে দিয়ে আসেন রাজবাড়ির সদস্যরা। স্রেফ পুজোর সময়ে পুলিশি নিরাপত্তায় রীতিমতো কনভয়ে চাপিয়ে মূর্তিটি আনা হয় রাজবাড়িতে। চারদিন পুজো পাঠের পর ফের দেবী দুর্গা চলে যান ব্যাঙ্কের লকারে।
করোনা আতঙ্কের মাঝে যদি পুজো দেখতে ভিড় জমে যায়! সেই আশঙ্কায় এবার আর রাজবাড়িতে না এনে ব্যাঙ্কের লকারেই দেবীকে পুজো করলেন রাজ পরিবারের সদস্যরা। আর প্রাচীন রীতি মনে মূর্তি ছাড়াই পুজো হল রাজবাড়িতে।