আজও অব্যাহত বাংলা ভাষা আন্দোলন, মাতৃভাষাকে স্বীকৃতি দিতে এখনও ওঠে কলরব

  • মাতৃভাষা অধিকারে বাঙালি বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেছে
  • অন্যান্য প্রদেশে বাংলা ভাষা আন্দোলন আজও বিদ্যমান
  • বরাক উপত্যকায় বাংলাকে সরকারী ভাষা হিসাবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়
  • উত্তর দিনাজপুরের বিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার শিক্ষকের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়

Asianet News Bangla | Published : Feb 21, 2021 4:40 AM IST

ভারতের বিভিন্ন অংশে মাতৃভাষার অধিকার আদায়ে বাঙালি জনগোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন শুরু করে। অবিভক্ত ভারতে ১৯১২ সালে মানভূম জেলাকে ভারতের বিহার ও ওড়িশার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। সে সময় মানভূমবাসী তাদের জেলাকে বাংলার সঙ্গে যুক্ত করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। বাংলার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার এ আন্দোলন থেকেই মানভূমে ভাষা দাবিও যুক্ত হয়। সে সময় যে আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল তা ১৯৫৬ সালে সাময়িক ভাবে নতুন জেলা গঠনের মাধ্যমে সেই আন্দোলনের আন্দোলনকারীদের দাবি মিটে গেলেও ভারতের অন্যান্য প্রদেশে বাংলা ভাষা আন্দোলন আজও বিদ্যমান। ভারতের বাংলা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে মানভূম ও আসামের নাম প্রথম উঠে আসে। এছাড়াও ঝাড়খন্ড, বিহার, ছত্রিশগড়, কর্ণাটক ও দিল্লিতে বাঙালি মাতৃভাষার দাবিতে লড়াই করছে।

আরও পড়ুন- স্মৃতিতে আজও টাটকা রফিক-সেলাম-বরকতরা, রক্ত দিয়ে যাঁরা কিনেছিল বাংলা ভাষার অধিকার 

Latest Videos

বর্তমানের পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র দুটি পূর্বে ব্রিটিশ শাসনাধীন অবিভক্ত ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে উর্দু ভাষাটি কিছু সংখ্যক মুসলিম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও ধর্মীয় নেতা স্যার খাজা সলিমুল্লাহ, স্যার সৈয়দ আহমদ খান, নবাব ওয়াকার-উল-মুলক মৌলভী‎‎ এবং মৌলভী আবদুল হক প্রমুখদের চেষ্টায় ভারতীয় মুসলমানদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কায় উন্নীত হয়। উর্দু একটি ইন্দো-আর্য ভাষা, যা ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য। এ ভাষাটি আবার ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এর পারসিক-আরবি লিপির কারণে উর্দুকে ভারতীয় মুসলমানদের ইসলামী সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হত, যেখানে হিন্দি এবং দেবনাগরী লিপিকে হিন্দুধর্মের উপাদান বিবেচনা করা হত।

আরও পড়ুন- আজ কলকাতা সহ সারা দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, দেখুন ছবিতে-ছবিতে 

উর্দুর ব্যবহার ক্রমেই উত্তর ভারতের মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে, কিন্তু বাংলার ব্রিটিশ ভারতের পূর্বাঞ্চলের একটি প্রদেশ, মুসলমানেরা বাংলা ভাষাকে তাদের প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহারেই অভ্যস্ত ছিল। বাংলা পূর্বাঞ্চলীয় মধ্য ইন্দো ভাষাসমূহ থেকে উদ্ভূত একটি পূর্বাঞ্চলীয় ইন্দো-আর্য ভাষা, যা বাংলার নবজাগরণের সময়ে বিপুল বিকাশ লাভ করে। উনিশ শতকের শেষভাগ থেকেই মুসলিম নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চা শুরু করেন এবং আধুনিক ভাষা হিসেবে বাংলার বিস্তার তখন থেকেই বিকশিত হয়। বাংলা ভাষার সমর্থকরা ভারত ভাগের পূর্বেই উর্দুর বিরোধিতা শুরু করেন, যখন ১৯৩৭ সালে মুসলিম লীগের লক্ষ্মৌ অধিবেশনে বাংলার সভ্যরা উর্দুকে ভারতের মুসলিমদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা মনোনয়নের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন। 

আসামের বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল আসাম সরকারের অসমীয়া ভাষাকে রাজ্যের একমাত্র দাপ্তরিক ভাষা করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, যদিও জনসংখ্যার এক উল্লেখযোগ্য অংশ ছিল বাংলাভাষী। বরাক উপত্যকায়, বাংলাভাষী জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ। প্রধান ঘটনাটি ১৯৬১ সালের ১৯ মে ঘটে, সেদিন ১১ জন প্রতিবাদীকে শিলচরে প্রাদেশিক পুলিশ হত্যা করে। শিলচরের লোকজন শহীদদের শবদেহ নিয়ে প্রতিবাদ সাব্যস্ত করেছিলেন। এই ঘটনার পর অসম সরকার বরাক উপত্যকায় বাংলাকে সরকারী ভাষা হিসাবে ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।

১৯৪৭ এর দেশ ভাগের পর পূর্ব বাংলার হিন্দু উদ্বাস্তুদের দণ্ডকারণ্য প্রকল্পের মাধ্যমে ১৩২ টি গ্রামে পুনর্বাসন দেওয়া হয়, যার মধ্যে ৩৩ টি গ্রামই পখাঞ্জুরে অবস্থিত। পরবর্তী কালে বাঙালিদের বাংলায় পঠনপাঠন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু, দণ্ডকারণ্য প্রজেক্ট বন্ধ হলে ছত্রিশগড় সরকার পরে বাংলায় শিক্ষার ব্যবস্থা বন্ধ করে দেন। বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয় গুলিকে হিন্দি মাধ্যমে রূপান্তর করা হয়। নিখিল ভারত বাঙালি উদ্বাস্তু সমিতির নেতৃত্বে আন্দোলনের রূপ ধারণ করে বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে বাংলায় পঠনপাঠন এবং সরকারি কাজে বাংলা ব্যবহারের দাবিতে আন্দোলন চলতে থাকে। ছত্রিশগড়ের পখাঞ্জুর থেকে শুরু করে রাজধানী দিল্লিতে তারা বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। সাময়িক কিছু সমস্যার সমাধান হলেও বাকি দাবিতে সংগ্রামকারীরা আজও আন্দোলনরত।

১৯৫৬ সালের আগে পুরুলিয়া বিহারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজনৈতিক ভাবে বিহারের স্কুল-কলেজ-সরকারি দপ্তরে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সেই সময় জাতীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে আন্দোলন করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু, বাংলা ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় অবশেষে পুরুলিয়া কোর্টের আইনজীবী রজনীকান্ত সরকার, শরৎচন্দ্র সেন এবং গুণেন্দ্রনাথ রায় জাতীয় কংগ্রেস ত্যাগ করে জাতীয়তাবাদী আঞ্চলিক দল লোকসেবক সঙ্ঘ গড়ে তোলেন। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার লড়াইয়ে তাদের সুদৃঢ় আন্দোলন করেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫৬ এই আন্দোলন তীব্র ভাবে প্রতিভাত হয়।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের দাঁড়িভীট বিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার শিক্ষকের দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্রদের দাবি বাংলার শিক্ষক না থাকা সত্ত্বেও বাংলা ভাষার জন্য শিক্ষক নিয়োগ না করে উর্দুভাষায় শিক্ষক নিয়োগের প্রতিবাদে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। বাঙালি জাতির উপর এহেন অন্যায়ের প্রতিবাদে মাতৃভাষাপ্রেমী বিদ্যালয়ের বাঙালি ছাত্রছাত্রী, প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী, গ্রামের অন্যান্য তরুণ-তরুণী ও অভিভাবকমণ্ডলী সম্মিলিতভাবে আন্দোলন করেন। ২০১৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পুলিশ আন্দোলনকারীদের উপর লাঠিচার্জ করে ও গুলি চালায়। এতে আন্দোলনকারী রাজেশ সরকারের ও তাপস বর্মণের মৃত্যু হয়। এছাড়া দশম শ্রেণির ছাত্র বিপ্লব সরকার গুলিবিদ্ধ হয়। তার পায়ে গুলি লাগে।

Share this article
click me!

Latest Videos

৫০০০ টাকা ধার শোধ করতে না পারায় যা ঘটল! দুপক্ষই থানার দ্বারস্থ | Berhampore News Today | Bangla News
সিঙ্গুরের রাস্তায় জগদ্ধাত্রী শোভাযাত্রায় পা মেলালেন সাংসদ রচনা ব্যানার্জী! | Jagadhatri Puja 2024
তৃণমূল সরকারের সবচেয়ে বড় দুর্নীতি ধরে ফেলল বিজেপি, দেখুন কী বললেন জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
Live: আবাস যোজনার বাড়ি নিয়ে তৃণমূলকে তুলোধোনা বিজেপির, দেখুন সরাসরি
Virat Kohli: ৫০ ফুটের বিরাট! কোহলির ৩৬ তম জন্মদিন পালনে সাঁতরাগাছিতে মহোৎসব! | Howrah News Today