১৯৮১ সালের বিহার ট্রেন বিপর্যয় থেকে শুরু করে ২০১৬ সালে ইন্দোর পটনা বিপর্যয়, মোট ১০টি ভয়ঙ্কর ঘটনার মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার কথাও।
১৯৮১ সালের বিহার ট্রেন বিপর্যয়
প্রায় ৯০০ জনকে নিয়ে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন রেললাইন থেকে উলটে যায় এবং বিহারের সহরসার কাছে বাগমতি নদীতে ডুবে যায়। ওই ঘটনায় প্রায় পাঁচশো জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন বলে জানা যায়। কেউ কেউ মনে করেন যে, ওই দুর্ঘটনাটি ঘূর্ণিঝড়ের কারণে হয়েছিল। আবার কেউ কেউ দাবি করেছেন যে, এটি আকস্মিক বন্যার কারণে ঘটেছিল। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটিকে ভারতের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ট্রেন দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে একটি হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে।
১৯৯৫ সালে ফিরোজাবাদ রেল বিপর্যয়
উত্তর প্রদেশের ফিরোজাবাদের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা কালিন্দী এক্সপ্রেসে ধাক্কা মারে দিল্লিগামী যাত্রীবাহী পুরুষোত্তম এক্সপ্রেস। ওই ঘটনায় অন্তত ৩৫৮ জন মানুষ মারা যান। কালিন্দী এক্সপ্রেসটি একটি গরুর সাথে ধাক্কা খেয়ে ব্রেক ফেইল করার কারণে রেল লাইনে আটকে গিয়েছিল, ফলে পুরুষোত্তম এক্সপ্রেসটি ওই সময় একই লাইনে চলে আসায় সেটি এসে ওই ট্রেনে ধাক্কা মারে।
১৯৯৯ সালে গাইসাল ট্রেন বিপর্যয়
অসমের গাইসালের কাছে আড়াই হাজারেরও বেশি যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল দুটি ট্রেন। গুয়াহাটি থেকে প্রায় ৩১০ মাইল দূরে দুটির মধ্যে ভয়ঙ্কর সংঘর্ষ হয়, এর ফলে ২৯০ জন যাত্রী মারা যান। স্থানীয় বাসিন্দাদের বয়ান অনুযায়ী, ট্রেনগুলির মধ্যে এতও জোরে সংঘর্ষ হয়েছিল যে, সেই আওয়াজ শুনে বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে মনে হয়েছিল।
১৯৯৮ সালে খন্না ট্রেন বিপর্যয়
উত্তর রেলওয়ের খন্না-লুধিয়ানা বিভাগে খন্নার কাছে লাইনচ্যুত হয়ে গিয়েছিল অমৃতসরগামী ছয়টি ফ্রন্টিয়ার গোল্ডেন টেম্পল মেল ট্রেনের কামরা। এরপর কলকাতাগামী জম্মু তাউই- শিয়ালদহ এক্সপ্রেসটি পঞ্জাব পৌঁছনোর পর ওই ৬টি কামরার সাথে প্রবল জোরে ধাক্কা লাগে। এই দুর্ঘটনার জেরে অন্তত ২১২ জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন বলে জানা গেছে।
২০০২ সালে হাওড়া- নিউ দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস
হাওড়া-নয়া দিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস রাত ১০টা বেজে ৪০ মিনিট নাগাদ গয়া এবং দেহরি-অন-সোন স্টেশনের মধ্যে রফিগঞ্জ স্টেশনের কাছে লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এই দুর্ঘটনার জেরে ১৪০ জনেরও বেশি যাত্রীর মৃত্যু হয়েছিল।
২০০৫ সালে ভ্যালিগোন্ডা ট্রেন দুর্ঘটনা
নদীতে আচমকা বান এসে যাওয়ার কারণে ২০০৫ সালের ২৯ অক্টোবর একটি ছোট রেল সেতু ভেসে যায়। এর উপর দিয়ে তখন যাচ্ছিল একটি ‘ডেল্টা ফাস্ট প্যাসেঞ্জার’ ট্রেন। তৎক্ষণাৎ সেটি লাইনচ্যুত হয় এবং কমপক্ষে ১১৪ জন মানুষ মারা যান। ২০০ জনেরও বেশি আহত হন।
২০১০ সালে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস বিপর্যয়
একটি মুম্বইগামী হাওড়া কুরলা লোকমান্য তিলক জ্ঞানেশ্বরী সুপার ডিলাক্স এক্সপ্রেস দুপুর দেড়টা নাগাদ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খেমাশুলি এবং সারডিহার মাঝখানে লাইনচ্যুত হয়ে যায়। ওই এলাকায় একটি বিস্ফোরণের কারণে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়েছিল বলে জানা গেছিল। এরপর একটি মালবাহী ট্রেনের সাথে ধাক্কা লাগে। এটি একটি মাওবাদী হামলা বলে সন্দেহ করা হয়েছিল এবং এর জেরে কমপক্ষে ১৭০ জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন।
২০১০ সাঁইথিয়া ট্রেন দুর্ঘটনা
১৯ জুলাই তারিখে উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের সাথে ধাক্কা লাগে বনাঞ্চল এক্সপ্রেসের। এই দুর্ঘটনা ঘটেছিল পশ্চিমবঙ্গের সাঁইথিয়ায়। এই সংঘর্ষের জেরে প্রায় ৬৩ জনের মৃত্যু হয় এবং ১৬৫ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন।
২০১২ সালে হাম্পি এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা
হুবলি-ব্যাঙ্গালোর হাম্পি এক্সপ্রেস ২২ মে তারিখে অন্ধ্র প্রদেশের কাছে একটি মালবাহী ট্রেনে ধাক্কা মারে। ট্রেনের চারটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায় এবং তাদের মধ্যে একটিতে আগুন ধরে যায়। এর ফলে প্রায় ২৫ জন যাত্রী মারা যান এবং প্রায় ৪৩ জন যাত্রী আহত হন।
২০১৬ সালে ইন্দোর পটনা বিপর্যয়
১৯৩২১ ইন্দোর- পটনা এক্সপ্রেস কানপুরের পুখরায়ানের কাছে ২০ নভেম্বর তারিখে লাইনচ্যুত হয়। কমপক্ষে ১৫০ জন মানুষ মারা গিয়েছিলেন। দেড়শ জনেরও বেশি মানুষ গুরুতরভাবে আহত হন।