২০১৯ সালের ৩০ মে শপথ নিয়েছিল দ্বিতীয় নরেন্দ্র মোদী সরকা
দেখতে দেখতে কেটে গেল একটা বছর
এই একবছরে প্রতিশ্রুতিপালনের সঙ্গে সঙ্গে কোভিড মহামারির সংকটের মোকাবিলাও করেছেন মোদী
কেমন গেল প্রথম বছরটা, বিশ্লেষণ করলেন রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব চন্দ্রশেখর
গোটা বিশ্বের সঙ্গে কোভিড-১৯ মহামারির সঙ্গে লড়ছে ভারত। আর তারমধ্য়েই নরেন্দ্র মোদী সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম বর্ষ পূর্ণ হল। ২০১৯ সালের ৩০ মে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দ্বিতীয়বার শপথ নিয়েছিলেন। এই একটা বছরে তিনি কতটা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারলেন? কোভিড সংকটেই বা তিনি কেমন নেতৃত্ব দিচ্ছেন - একচটি নিবন্ধে আলোচনা করেছেন রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব চন্দ্রশেখর।
রাজীব জানিয়েছেন, মোদী তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুতেই সরকারের লক্ষ্যটা স্থির করে দিয়েছিলেন। জানিয়েছিলেন তাঁর সরকারের অনুপ্রেরণা হবে কেরলের মহান আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব, সমাজ সংস্কারক ও কবি শ্রী নারায়ণ গুরু মহৎ চিন্তা, 'জাতি-ভেদম মাত-দ্বেশম আদুমিল্লাদে সারভ্রুম সোদার-তাভাইন ভাদুন মাতৃকাস্থান মানিত', অর্থাৎ এটি একটি আদর্শ দেশে মানুষ বর্ণ ও ধর্মের বৈষম্য থেকে মুক্ত হয়ে ভাতৃত্ববোধে বাস করে।
সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই নতুন ভারতে শক্তিশালী হবে গ্রামীণ ভারত এবং শহুরে ভারতও ক্ষমতায়িত হবে। উদ্যোগপতিরা নতুন উচ্চতা অর্জন করবে এবং তরুণ ভারতের স্বপ্নও পূরণ হবে। সমস্ত ব্যবস্থা হবে স্বচ্ছ এবং সৎ। প্রতিপত্তি বাড়বে দেশবাসীর। তৈরি হবে একবিংশ শতাব্দীর উপযুক্ত পরিকাঠামো এবং শক্তিশালী ভারত গঠনের জন্য সমস্ত সম্পদ একত্রিত করা হবে।
রাজ্যসভার সাাংসদ আরও জানিয়েছেন, নরেন্দ্র মোদী এই এক বছরে যা করে দেখিয়েছেন, গত কয়েক দশকে বেশিরভাগ সরকার তা করে দেখাতে পারেনি। এই সময়কালে তিনি ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করে লাদাখে নতুন রাজ্য তৈরি করেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস করেছেন, রাম মন্দিরের মায়াময় অঙ্গিকার সফল করেছেন, কোম্পানি আইনকে ডিক্রিমিনালাইজ করেছেন, আইবিসি-তে সংশোধনী এনেছেন, সন্ত্রাসবিরোধী শক্তি হিসাবে ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট-এর সঙ্গে ঐতিহাসিক শীর্ষ সম্মেলন করেছেন। অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদী সরকার ভারতীয় জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষায় বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করেনি। অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই বছর এফডিআই গত বছরের প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে।
তবে, এই নতুন দশকের প্রথম বছরে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বের ফোকাসে রয়েছে বিশ্বব্যপী উদীয়মান করোনাভাইরাস মহামারি। এটি সরকার এবং ভারতীয় জনগণের জন্য অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এতে করে গত সাড়ে ৫ বছর ধরে যে অর্থনৈতিক অগ্রগতি হয়েছিল তাতে সাময়িকভাবে ধাক্কা লেগেছে। তবে এই সঙ্কটকালেই নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্ব এবং শাসনক্ষমতার আরও ভালোভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি এই ভাইরাস ঘটিত সংকটের মোকাবিলা এবং এই সংকট থেকে মুক্তির পথে ভারতের ১.৪ বিলিয়ন নাগরিকের প্রত্যেককে সামিল করেছেন।
লকডাউন বেদনাদায়ক হলেও প্রয়োজনীয় ছিল। কারণ এতে করে দেশ দারুণ মূল্যবান কিছু সময় পেয়েছে। যেসব রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভালো ছিল না, সেইসব রাজ্যে পরিষেবার উন্নতি ঘটানো হয়েছে। কোভিড ভাইরাস সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি জাতীয় সংকল্প গড়ে তোলা গিয়েছে। লকডাউন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা নিয়েছেন তা অতিমানবিক। যে কোনও সাধারণ ব্যক্তি এই কাজ করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়তেন। স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে, আমলাদের সঙ্গে, মন্ত্রীদের সঙ্গে, মুখ্য়মন্ত্রীদের সঙ্গে, রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলা, জনগণ ও গণমাধ্যমকে একত্রিত করা এবং একইসঙ্গে দেশের অন্যান্য সমস্ত বিষয় নিয়ে কাজ করার জন্য তাঁর নিরলস কর্মসূচি তাঁর মতো 'ওয়ার্কোহোলিক'কেও বিস্মিত করেছে বলে জানিয়েছেন রাজীব চন্দ্রশেখর। সারা বিশ্ব জুড়ে মোদীর এই প্রচেষ্টা প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ভাইরাস এবং লকডাউনের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ের সময়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারের প্রথম মেয়াদে নেওয়া অনেক সিদ্ধান্তই দেশকে সহায়তা করছে। যেমন যে জনধন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিটি ভারতীয়ের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী, সেই সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই এই সময় হতদরিদ্র ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অংশ, দ্রুত আর্থিক ত্রাণ পেয়েছে। জেডিওয়াই, প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনা, পিডিএস এবং প্রধানমন্ত্রী কিষান যোজনা গ্রামাঞ্চলের নাগরিক, কৃষক এবং দরিদ্রদের সরাসরি কোনও সরকারি ফাইলের ফাঁস ছাড়াই সরকারকে অর্থায়ন নিশ্চিত করেছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া কোটি কোটি মানুষকে সংযোগ স্থাপনে এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলিকে অফিসের বাইরে বসেও কাজ চালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। স্বচ্ছ ভারত আন্দোলন ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করেছে। রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের জন্য উজালা যোজনা, জন ঔষধি যোজনা এবং প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান সবকটিই এই মহামারিতে সাধারণ মানুষকে ব্যাপক সমর্থন জুগিয়েছে।
রেলের সংস্কার ও রূপান্তরকরণের ফলে লক্ষ লক্ষ আতঙ্কিত পরিযীয় শ্রমিককে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব করেছে, যা বিগত বছরগুলিতে ভারতীয় রেলের জন্য অকল্পনীয় ছিল। উড়ানে বা জাহাজপথে বিদেশে থাকা কয়েক'শ হাজার ভারতীয়কে বন্দেভারত মিশনের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এতে নরেন্দ্র মোদীর সক্ষমতা এবং সংকল্পই প্রতিফলিত হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে তিনি যেভাবে আর্থিক ক্ষেত্র এবং ব্যাঙ্কগুলিকে গত ৫ বছরে পরিষ্কার করেছেন এবং শক্তিশালী করে তুলেছেন, তার কারণেই আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়িক সংস্থাগুলি অর্থনীতিতে গভীর ধাক্কাও সহ্য করতে পেরেছে।
রাজীবের মতে, এই সমস্ত ঘটনা একদিকে যেমন ভারতকে কোভিড ধাক্কা সামলাতে এবং অন্যান্য উন্নত দেশগুলির তুলনায় মৃত্যুর হার অনেক নিচে রাখতে সহায়তা করেছে, অন্যদিকে নরেন্দ্র মোদী যেভাবে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাতে আরও দুটি বিষয় উঠে এসেছে। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতিবদ্ধতা। রাজ্যগুলির সঙ্গে যেভাবে তিনি নিয়মিত শলাপরামর্শ করেছেন, তাতে এটা স্পষ্ট, রাজ্য সরকারগুলির পরামর্শেই জাতীয় নীতি পরিচালিত হচ্ছে। সংকটের মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে সত্যিকারের অংশীদারিত্ব দেখা গিয়েছে এবং স্বাস্থ্যসেবা ক্ষমতা দ্রুত তৈরি করার মাধ্যমে মানুষকে সুরক্ষিত রাখা গিয়েছে।
অন্যটি হল নাগরিকদের সহ-বিকল্প প্রদান। আইনের ভয়ের ও বিধি প্রয়োগের পরিবর্তে বিষয়টিকে নাগরিকদের আচরণ এবং পদ্ধতি তৈরি করা। নরেন্দ্র মোদী এটা করতে পেরেছেন তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাসযোগ্যতা এবং জনপ্রিয়তার জোরে। অর্থনীতি, ব্যবসা, চাকরি এবং জীবিকা সহ অনেকগুলি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এইক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সরকার প্রতিক্রিয়াশীল এবং সহানুভূতিশীল। ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজের ফোকাসে রয়েছে ছোট ব্যবসা, দরিদ্র এবং কৃষকরা। এই প্যাকেজ জনগণকে আস্থা প্রদান করেছে, নরেন্দ্র মোদী এই আর্থিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার সময়টায় তাঁদের সঙ্গেই থাকবেন।
এখানেই শেষ নয়, এই সব চ্যালেঞ্জের সঙ্গেই পাকিস্তান এবং চিন সম্প্রতি এই মহামারির সুযোগে ভারতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালিয়েছে। তবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের অধীনে, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্য পরিষেবার ধাক্কা সত্ত্বেও তাদের সুস্পষ্ট এবং মানানসই জবাব দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যসভার সাংসদ রাজীব চন্দ্রশেখর আরও জানিয়েছেন এই মহামারির প্রভাব বেশ কিছু সময়ের জন্য থাকবে। এই অনিশ্চয়তাকেই এখন স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে হবে। তবে তাঁর মতে এই বছরটি দেখিয়ে দিয়েছে এই সঙ্কটের সময়ে মোদীর মতো শক্তিশালি নেতার কতটা প্রয়োজন। রাজ্যসভার সাংদের মতে ভারতের সৌভাগ্য যে দুর্বল, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা নেতৃত্বের পরিবর্তে, মোদীর নেতৃত্ব পেয়েছে।
এর সঙ্গে সঙ্গে রাজীব উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর 'আত্মনির্ভর ভারত'-এর দৃষ্টিভঙ্গির। এই মহামারির মোকাবিলায় ভারত যেমন এখন বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, সংকট পরবর্তীকালের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারেও সেভাবেই দেশ বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে, প্রধানমমন্ত্রীর কথা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আর তাই নরেন্দ্র মোদী সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদের অধীনে এই এক বছরে যেভাবে এই সমস্ত কাজ হয়েছে, তা পরবর্তী ৪ বছর ধরেও অব্যাহত রাখার জন্য রাজীব চন্দ্রশেখর সকল ভারতীয়কে তাঁর প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ, তাতে করেই সকল ভারতীয়ের জন্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসবে। কারণ তাঁর সরকারে মন্ত্রই হল, 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস'।