চিনের সাম্রাজ্যবাদী লোলুপতার সঙ্গে পরিচিত গোটা বিশ্ব। দক্ষিণ চিন সাগরের রাষ্ট্রগুলি নিয়মিত তার প্রামণ পাচ্ছে। ভুক্তভোগী ভারতও। সীমান্তের একাধিক জায়গায় আধিপত্য জমাতে সবসময় মুখিয়ে থাকে চিনের লাল ফৌজ। গালওয়ান উপত্যকায় নিয়ে চিনের সঙ্গে বেড়ে চলার উত্তেজনার আবহে এবার তাই আগেভাগেই আন্দামান-নিকোবার দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে সতর্ক হল ভারত সরকার। ভারত মহাসাগরের বুকে অবস্থিত এই দ্বীপপুঞ্জের নিরাপত্তার কথা ভেবে অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার।
আন্দামান ও নিকোবারে সেনার পরিকাঠামো ও সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি বহু দিন ধরেই নানা কারণে আটকে ছিল। কিন্তু লাদাখে চিনা আগ্রাসন দেখার পর আর এই বিষয়ে বিলম্ব করতে চাইছে না ভারত সরকার। তাই আন্দামানে অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে ভারত। কারণ চিনের সাম্রাজ্যবাদ মোকাবিলায় ভারত মহাসাগরের উপর অবস্থিত আন্দামান নিকোবার দ্বীপপুঞ্জের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করেন কূটনীতিক ও সামরিকবিদরা।
২০০১-এ প্রথম আন্দামান-নিকোবর কম্যান্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। এটিই এখনও পর্যন্ত দেশের প্রথম এবং একমাত্র থিয়েটার কম্যান্ড, যেখানে আর্মি, বায়ুসেনা এবং নৌসেনা একটিই অপারেশনাল কম্যান্ডারের অধীনে রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে আন্দামান-নিকোবর কম্যান্ড অবহেলার শিকার ছিল। যথেষ্ট পরিমাণে ফান্ড এই কম্যান্ডের জন্য নির্দিষ্ট করা হত না। কিন্তু গলওয়ানের সংঘর্ষের পর নড়েচড়ে বসেছে ভারত।
আন্দামান-নিকোবরের কাছ দিয়েই ভারত মহাসাগরের মধ্যে দিয়ে জ্বালানি তেল আমদানি করে চিন। সেই বিষয়টি মাথা রেখেই এবার আন্দামান-নিকোবর কম্যান্ডের গুরুত্ব বাড়ানো হচ্ছে। উত্তর আন্দামানের শিবপুরে নৌসেনার এয়ার স্টেশন আইএনএস কোহাসারের রানওয়ের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ক্যাম্পবেলে আইএনএস বাজের রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়ানোরও কথা চলছে। প্রয়োজনে বড় যুদ্ধবিমান যাতে এখান থেকে কাজ করতে পারে, তার জন্য বাড়ানো হচ্ছে রানওয়ের দৈর্ঘ্য।
আন্দামান-নিকোবরে সেনা কর্মকাণ্ড বাড়ানোর জন্য যে রোল-অন প্ল্যান নেওয়া হয়েছে, তাতে ১০ বছরের জন্য প্রতিরক্ষা পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। আরও যুদ্ধবিমান , নৌজাহাজ ও সেনা এখানে মোতায়েন করা হবে। এই কাজে ৫৬৫০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। ২০২৭-এর মধ্যে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সেনা পরিকাঠামো বৃদ্ধির কাজ সম্পুর্ণ করা হবে বলে জানা যাচ্ছে। এখানে আগামী বছরের মধ্যেই যুদ্ধবিমানের পাকাপাকি ঘাঁটি তৈরি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার।
এদিকে আন্দামানের ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগ নিয়ে চিনকে শিক্ষা দেওয়া উচিত। সেকরাণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানকে আন্দামান ব্যবহার করার সুযোগ দিক ভারত। এমনটাই মনে করছেন জাপানে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত চিনয়।
চিনের বিরুদ্ধে আমেরিকা, ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া যেভাবে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে, এটাই সুবর্ণ সুযোগ দক্ষিণ চিন সাগর ও ভারত মহাসাগরে চিনের আধিপত্য খর্ব করার, বলে মনে করছেন প্রাক্তন এই কূটনীতিবিদ।
ভারত মহাসাগরে চিনের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে গেলে বন্ধু রাষ্ট্রগুলির সাহায্য লাগবে। সেক্ষেত্রে আমেরিকা ও জাপানের কাছে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের প্রবেশাধিকার দেওয়া হলে চিনা সাবমেরিনের ওপর নজরদারি চালানোয় সুবিধা হত ভারতের। এনমনটাই রিপোর্ট তৈরি করেছেন চিনয়। তাঁর তৈরি রিপোর্ট বলছে, চিন খুব দ্রুত ভারত মহাসাগরের ওপর নিজেদের কব্জা পেতে চাইছে। পাকিস্তানের গদর ও দিজিবৌটিতে নতুন ঘাঁটি তৈরি করা থেকে শুরু করে, চিনা সাবমেরিনের আনাগোনা, কোনও সুযোগই ছাড়ছে না চিন।
এদিকে, ভিয়েতানামের বিদেশমন্ত্রক অভিযোগ করেছিল সেদেশের মৎস্যজীবীদের নৌকায় হামলা চালায় চিনা নৌবাহিনীর জাহাজ। দক্ষিণ চিন সাগরে এই ঘটনা ঘটে। পার্সেল আইল্যান্ডের কাছে এই হামলার শিকার হয় ভিয়েতনামের মৎস্যজীবীদের নৌকা। উল্লেখ্য এই দ্বীপকে চিন নিজেদের অংশ বলে দাবি করে। এপ্রিল মাসেও একই অভিযোগ করেছিল ভিয়েতনাম।
এরমধ্যে জাপানও চিনের বিরুদ্ধে উস্কানির অভিযোগ এনেছে। টোকিও জানিয়েছে, চিন ৬৬ দিন ধরে সেনকুকু দ্বীপপুঞ্জের সামনে নিজেদের নৌবাহিনী মোতায়েন রেখেছে। পূর্ব চিন সাগরের ওপর এই দ্বীপ জাপানের এক্তিয়ারভুক্ত। একই অভিযোগ আনে ইন্দোনেশিয়াও। চিন জলসীমা নিয়ে ক্রমাগত উত্যক্ত করছে বলে অভিযোগ সেদেশেরও।