ভাড়া বাড়িই ছিল জঙ্গিদের সদর দফতর, আহমেদাবাদে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের নেপথ্য কাহিনি

মঙ্গলবার ২০০৮ সালের আহমেদাবাদ ধারাবাহিক বিস্ফোরণ (Ahmedabad Serial Blasts) মামলায় ৪৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। কী ঘটেছিল ১৪ বছর আগে, কীভাবে দেড় ঘন্টার কম সময়ে ২৩টি বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল জঙ্গিরা? 
 

amartya lahiri | Published : Feb 8, 2022 10:14 AM IST / Updated: Feb 08 2022, 04:03 PM IST

১৪ বছর পর, মঙ্গলবার ২০০৮ সালের আহমেদাবাদ ধারাবাহিক বিস্ফোরণ (Ahmedabad Serial Blasts) মামলার রায় ঘোষণা করেছে আদালত। ৪৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। আদালত এদিন এই মামলার তদন্তের সাফল্যের গুজরাট পুলিশের প্রশংসা করেছে। কী ঘটেছিল ১৪ বছর আগে, আসুন ফিরে দেখা যাক - 

দেড় ঘন্টারও কম সময়ে ২৩টি বিস্ফোরণ

দিনটা ছিল ২০০৮ সালের ২৬ জুলাই। সন্ধ্য়া সাড়ে ছটা থেকে পৌনে আটটার মধ্যে আহমেদাবাদ (Ahmedabad) শহরে মোট ২৩টি বিস্ফোরণ ঘটেছিল। যার ফলে মৃত্যু হয়েছিল ৫৬ জনের, আহত হয়েছিলেন ২৪০ জন। এই ধারাবাহিক বোমা বিস্ফোরণের মাত্র কয়েক মিনিট আগে, বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল এবং সংবাদমাধ্যমে ই-মেইল করে, সতর্কবার্তা পাঠিয়েছিল 'ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন' জঙ্গি সংগঠন। জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর উদ্দেশ্যে বিস্ফোরণের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছিল শহরের জনাকীর্ণ স্থানগুলি। 

আরও পড়ুন - ১৪ বছরের মাথায় ঘোষিত হল গুজরাট বিস্ফোরণ মামলায় রায়, ৪৯ জন-কে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত

আরও পড়ুন - Telangana CM KCR: 'নির্বাচনের পোশাক পরেন', প্রধানমন্ত্রী মোদীর কড়া সমালোচনা করলেন KCR

বোমা ছিল সাইকেলে, হাসপাতালে

বেশিরভাগ বোমা রাখা হয়েছিল সাইকেলে। নীল পলিথিনের ব্যাগে টিফিন বক্সে কম মাত্রার বিস্ফোরক রাখা হয়েছিল। এলজি এবং সিভিল হাসপাতালে বোমা রাখা হয়েছিল গ্যাস সিলিন্ডার ভর্তি গাড়িতে। এই দুই জায়গাতেই সর্বাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল। সমস্ত বোমাতেই ব্যবহার করা হয়েছিল টাইমার যন্ত্র এবং বিস্ফোরক হিসাবে ছিল অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট।

পুলিশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ

হামলার দায় ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন নিলেও, তখনও পুলিশ এই জঙ্গি সংগঠন সম্পর্কে কিছু জানত না। আহমেদাবাদের আগে, বেঙ্গালুরু, জয়পুর, মুম্বই, বারাণসীতে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের দায় নিয়েছিল ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই আততায়ীদের সনাক্ত করা যায়নি। কাজেই গুজরাট পুলিশের সামনে চ্যালেঞ্জটা অনেক বড় ছিল। আহমেদাবাদ সিটি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের এক বিশেষ দল এই তদন্তের ভার পেয়েছিল। তদন্তকারী দলের নেতৃত্বে ছিলেন যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপরাধ শাখা) শ্রী আশিস ভাটিয়া। 

সামনে এল ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন

২০০৮ সালেরই ১৫ অগাস্ট এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত এগারো জনকে গ্রেফতার করেছিল গুজরাট পুলিশ। আর তাদেরকে জেরা করেই প্রথমবারের মতো সামনে এসেছিল, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের ষড়যন্ত্র এবং ব্যাপ্তি। জানা গিয়েছিল, কেন্দ্রীয় সরকার, স্টুডেন্ট ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া বা সিমি-কে নিষিদ্ধ সংগঠন ঘোষণা করার পর, তারাই নিজেদের নাম বদলে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনে রূপান্তরিত হয়েছিল। পাকিস্তানি গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই এবং আন্ডারওয়ার্ল্ডের সক্রিয় সহায়তাতেই তারা ভারতের বিভিন্ন শহরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। 

আহমেদাবাদেই ছিল জঙ্গিরা

আহমেদাবাদ বিস্ফোরণের পরিকল্পনাকারীরা শহরে আস্তানা গেড়েছিল ২০০৮ সালের মে মাসেই। ভাটভা এলাকায় একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল তারা। বাড়িটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল স্থানীয় জাহিদ শেখের নামে। ওই বাড়িটিই ছিল তাদের স্থানীয় হেডকোয়ার্টার। সেখানেই মুফতি আবু বশির, মহম্মদ কেয়ামুদ্দিন, আব্দুল সুবহান ওরফে তৌকীরের মতো ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন নেতা ও জঙ্গি সদস্যরা বেশ কয়েকদিন ধরে বসবাস করেছিলেন। সেখানেই তৈরি হয়েছিল বিস্ফোরণের পরিকল্পনা। বিস্ফোরণের সম্ভাব্য স্থানগুলি নির্বাচনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল স্থানীয় যুবকদের। তাদের নিয়োগও করা হয়েছিল ওই বাড়ি থেকেই। বিস্ফোরণ ঘটার একদিন আগে, ২৫ জুলাই তারা বাড়িটি ছেড়ে দিয়েছিল। 

Share this article
click me!