করোনা পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক মন্দা, সীমান্তে চিনা আগ্রাসন- এই সব নিয়ে কয়েক মাস ধরেই সময়টা খুব একটা ভাল যাচ্ছে না বিজেপির। দ্বিতীয় দফার মোদী সরকার এক বছর পূর্ণ করতেই দীর্ঘ দিনের জোটসঙ্গী শিবসেনা এনডিএ ছেড়েছিল। মহারাষ্ট্র ভোটের পর পরই ক্ষমতা দখল নিয়ে বিরোধ চরমে পৌঁছলে পুরনো আঁতাত ভেঙে যায়। এবার জোট ছেড়ে বেরিয়ে না এলেও মন্ত্রীত্ব ছেড়েছেন অকালি দলের হরসিমরত কউর বাদল।
হরসিমরতের স্বামী এবং দলের প্রধান সুখবীর সিং বাদল তার পরেই হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, অকালি দল ভবিষ্যতে এনডিএ-তে থাকবে কি না, তাও তাঁরা ভেবে দেখছেন৷ হুঁশিয়ারি সত্যি হলে অর্থাৎ শিরোমণি অকালি দল এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে গেলে সাম্প্রতিক কালে শিবসেনার পর আরও এক পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হবে বিজেপি-র৷
হরসিমরতের ইস্তফায় সরকারের কোনও অসুবিধা ঘটে নি। তবে, জোট রাজনীতির প্রেক্ষিতে পদ্ম বাহিনীর কাছে বড় ধাক্কা বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, অকালি দল সোচ্চার হওয়ায় যেন বিরোধী শিবিরের দাবিই মান্যতা পেল। এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে এবার সংসদ-বিহার ভোটের প্রচারে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে প্রবলভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
দেশের কৃষি উৎপাদনে হরিয়ানা, পাঞ্জাবের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য নিশ্চয়তা প্রকল্পেও এই দুটি রাজ্যের ভূমিকা অপরিসীম। কৃষি সংস্কার বিল নিয়ে অকালি দলের সঙ্গে বহুবার আলোচনা সেরেছে গেরুয়া দলের নেতারা। কিন্তু লাভ হয়নি। এই দুই রাজ্যের কৃষকরা যেভাবে আন্দোলন চালিয়েছে তাতে বিজেপি সরকার যথেষ্ট চিন্তিত। দলের অন্দরে উদ্বেগ বাড়লেও মুখে অবশ্য সেকথা সবীকার করছে না বিজেপি নেতৃত্ব। তবে কোনও কোনও বিজেপি নেতার বক্তব্য, কৃষি সংস্কার নিয়ে অকালি দলের বিরোধীতা বিহার ভোটে দলকে বেকায়দায় ফেলতে পারে। ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার-সিএএ নিয়ে সরকারের সঙ্গে নীতীশের দল জেডিইউ-এরও মতপার্থক্য রয়েছে। উলেখ্য, বিহারের জোট হলেও যদিও জেডিইউ মোদী সরকরের অংশ নয়।
বিতর্ক যাতে না বাড়ে বা বিজেপির গায়ে যাতে কৃষক বিরোধী তকমা না লাগে তার জন্য পদ্ম শিবির বিলগুলি কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ আমলের বলে প্রচার করছে। ২০১৯ সালে ইউপিএ-এর ইস্তেহার সামনে আনার চেষ্টা করছে। যদিও প্রাথমিক অবস্থায় এই বিলে সায় দিয়েছিল অকালি দল। কিন্তু পাঞ্জাবে কৃষকদের বিক্ষোভ দেখে তারা সরে এসেছে। মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন দলের নেত্রী হরসিমরত কৌর। নিজের রাজ্যে সমালোচনার মুখে পড়ে দলের তরফে জানানো হয়, সরকারে বাইরে থেকে সমর্থন দেবে অকালি দল। বিজেপি–র সবথেকে পুরনো শরিক দল এও জানায়, জোট নিয়েও চিন্তাভাবনা করছে তারা।
বিল আগেই লোকসভায় পাশ হয়েছে। রবিবার রাজ্যসভায় পেশ করা হয় কৃষিক্ষেত্রে সংস্কার সংক্রান্ত তিনটির মধ্যে দু’টি বিল। ‘কৃষিপণ্য লেনদেন ও বাণিজ্য উন্নয়ন’ এবং ‘কৃষিপণ্যের দাম নিশ্চিত করতে কৃষকদের সুরক্ষা ও ক্ষমতায়ন চুক্তি’ বিল। বিক্ষুব্ধ কৃষক ও বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, এই বিলগুলিতে কৃষকদের স্বার্থ উপেক্ষা করে বড় ব্যবসায়ী এবং কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে একতরফা ভাবে ফসলের দাম নির্ধারণ এবং মজুতদারির অধিকার দেওয়া হয়েছে।
অকালি দলের সাংসদ গুজরাল ফের দাবি জানিয়েছে, বিল তিনটি সিলেক্ট কমিটির কাছে পাঠানো হোক। যাতে স্টেকহোল্ডারদের বক্তব্যও শোনা হয়। একই দাবি তুলেছে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন বিরোধী দলগুলি। রেজোলিউশন এনে বিলটিকে সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোর চেষ্টা করে। যদিও এত কিছুর পরেও লোকসভার পর রাজ্যসভাতেও বিল দু’টি পাশ হয়ে গিয়েছে।
এখন প্রশ্ন, অকালি কি তাহলে এনডিএ ছাড়বে। কারণ পাঞ্জাবে অমরিন্দর সিংয়ের সরকার এবং কৃষক সংগঠনগুলির তোপের মুখে পড়েছে তারা। দলের প্রধান সুখবীর সিং বাদল আগেই জানিয়েছেন, অকালি আসলে কৃষকদের দল, যে সরকার এভাবে কৃষকদের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে, সেখানে থাকা মানে তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। অতএব সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়াই একমাত্র পথ। এবার কি সেই সিদ্ধান্তই নেবে আকালি দল? এনডিএ প্রতিষ্ঠা হওয়ার সময় থেকে অকালি দল বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন এই জোটের সঙ্গে ছিল৷ কিন্তু এবার সেই সম্পর্ক ছিন্ন করা হবে কি না, দলের কোর কমিটির বৈঠকে আলোচনা করেই সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷ জানা যাবে আগামী দিনে।