বিহারের (Bihar) নীতীশ কুমার (Nitish Kumar) সরকারে ফাটল। জেডিইউ (JDU) দলকে সরাসরি হুমকি দিল বিজেপি (BJP)।
মহা-সমস্যায় বিহারের (Bihar) নীতীশ কুমার (Nitish Kumar) সরকার। গত বছর সরকারে আসার পর থেকেই জোটের দুই শরিক বিজেপি (BJP) এবং জেডইউ-এর (JDU) মধ্যে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মত বিরোধ দেখা দিচ্ছিল। সোমবার, সেই বিরোধ একেবারে প্রকাশ্যে চলে এল। বিহার বিজেপির প্রধান সঞ্জয় জয়সওয়াল (Sanjay Jaiswal) এদিন এক দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দলকে সীমা অতিক্রম না করার বিষয়ে এবং জনতা দল ইউনাইটেড নেতাদের, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (PM Narendra Modi) সঙ্গে 'টুইটার গেম' খেলার বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন। কোনওরকম রাখাঢাক না রেখে তাঁর শাসানি, নাহলে 'বিহারের ৭৬ লক্ষ বিজেপি কর্মী' তাঁদের জবাব দেবেন।
সঞ্জয় জয়সওয়াল কারোর নাম করেননি। কিন্তু, তাঁর আক্রমণে লক্ষ্য যে জেডিইউ-এর জাতীয় সভাপতি রাজীব রঞ্জন (Rajiv Ranjan) এবং সংসদীয় বোর্ডের চেয়ারম্যান উপেন্দ্র কুশওয়া (Upendra Kushwaha) - তা বুঝতে কারোর অসুবিধা হয়নি। সম্প্রতি মৌর্য সম্রাট অশোক (King Ashoka) এবং মুঘল শাসক আওরঙ্গজেবের (Mughal ruler Aurangzeb) মধ্যে তুলনা টেনেছিলেন প্রখ্যাত নাট্যকার দয়াপ্রকাশ সিনহা (Daya Prakash Sinha)। এরপরই তাঁকে দেওয়া পদ্মশ্রী পুরস্কার (Padma Shri Award) প্রত্যাহার করে নেওয়ার আবেদন করে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিয়েছিলেন রাজীব রঞ্জন ও উপেন্দ্র কুশওয়া।
সঞ্জয় জয়সওয়াল, দয়াপ্রকাশ সিনহার ওই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। লেখকের বিরুদ্ধে তিনি এফআইআর দায়ের করেছেন। এরপরই ওই দীর্ঘ ফেসবুক পোস্টে তিনি প্রশ্ন করেছেন, কেন দয়াপ্রকাশ সিনহাকে গ্রেফতার করার পরিবর্তে, নীতীশ কুমারের দলের নেতারা তাঁর পুরস্কার প্রত্যাহার করার দাবি করছেন? তিনি দাবি করেন, পদ্মশ্রী পুরস্কার কাউকে দেওয়ার পর প্রত্যাহার করা হয়েছে, এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। কেন এমন অবাস্তব দাবি তুলছেন ডেজিইউ নেতারা? তিনি আরও বলেন, জোটে সকল শরিক নেতাদের তাদের নিজেদের সীমার মধ্যে থাকা উচিত। জেডিইউ নেতারা একতরফাভাবে জোট নিয়ন্ত্রণ করবেন, তা যে আর হতে দেবে না বিজেপি, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন জয়সওয়াল। 'সীমার মধ্যে থাকা'র প্রথম শর্ত হিসাবে তিনি বলেছেন দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টুইটার টুইটার খেলা যাবে না। ভবিষ্যতে এমনটা করলে বিহারের ৭৬ লক্ষ বিজেপি কর্মী উপযুক্ত জবাব দেবে।
একইসঙ্গে বিহার বিজেপির প্রধান জোট ভাঙার ভয়ও দেখিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জোটের শরিকরা একসঙ্গে বসে নিজেদের মতবিরোধ দূর করতে পারে। কারণ, বিজেপি চায় না, মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবন ফের ২০০৫-এর আগের মতো হত্যা, অপহরণ এবং তোলাবাজির কেন্দ্র হয়ে উঠুক। স্পষ্টতই, শাসক জোট ভেঙে পড়লে রাষ্ট্রীয় জনতা দল বা আরজেডি (RJD) ক্ষমতায় চলে আসবে, এমনটাই বলতে চেয়েছেন বিজেপি নেতা। তবে, তাঁর এই খোলাখুলি হুমকির পরও নিজেদের দাবি থেকে সরে আসার কোনও ইঙ্গিত দেননি জেডিইউ নেতারা। উপেন্দ্র কুশওয়া বলেছেন, তাদের দাবি থেকে সরে আসার প্রশ্নই নেই। দয়াপ্রকাশ সিনহার পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
২০২০ সালে বিহার নির্বাচনে নীতীশ কুমারের ডেজিইউ এবং বিজেপি জোট ক্ষমতায় ফিরেছে ঠিকই, কিন্তু, গত কয়েকবারের জোটের যে শক্তি সমীকরণ ছিল, তা এবারের ভোটে বদলে গিয়েছে। জেডিইউ-কে পিছনে ফেলে জোটের বড় দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে বিজেপি। তারপর, নীতীশ কুমারকে ভোট পূর্ববর্তী ঘোষণা মতো মুখ্যমন্ত্রী করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু, প্রতি পদক্ষেপে বিজেপি বুঝিয়ে দিচ্ছে তারা দ্বিতীয় দল হয়ে থাকতে আর ইচ্ছুক নয়। তাই জোটের দুই শরিকের মধ্যে নিয়মিত বিভিন্ন বিষয় নিয়েই মতবিরোধ দেখা দিচ্ছে। সর্বশেষ ঘটনা এই সম্রাট অশোককে নিয়ে দুই পক্ষের বিবাদ।