'রাতভর বিমানে করে ছড়ানো হবে করোনা-মারক গ্যাস', সাবধান থাকুন ভাইরাল পোস্ট থেকে

রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ

কোভিড-১৯ মারতে বিমানে করে বাতাসে ছড়ানো হবে রাসায়নিক

স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পক্ষ থেকে নাকি এই মর্মে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে

সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল এই বার্তা

 

amartya lahiri | Published : Mar 23, 2020 9:17 AM IST / Updated: Mar 23 2020, 02:58 PM IST

'বিনীতভাবে অনুরোধ করা হচ্ছে আজ রাত ১০টার পর থেকে আগামীকাল ভোর ৫টা অবধি বাড়ির বাইরে বের হবেন না। কারণ কোভিড-১৯ রোগকে মারতে বাতাসে ওষুধ স্প্রে করা হবে! আপনার সমস্ত বন্ধু, আত্মীয়স্বজন এবং আপনার পরিবারবর্গের কাছেও এই তথ্য শেয়ার করুন...ধন্যবাদ!' গত বুধবার এমনই একটি বার্তা চণ্ডীগড়ের অনেক বাসিন্দাই সোশ্যাল মিডিয়া মারফত পেয়েছিলেন। আতঙ্কে অনেকেই ঘর থেকে বের হননি। এরপর এমন বার্তা ছড়িয়েছিল বেঙ্গালুরুতেও। করোনাভাইরাস-এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে যে যে জায়গায় লকডাউন প্রোটোকল জারি করা হচ্ছে সেখানে সেখানেই এই বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে। তবে কি সত্যি সত্যিই সরকারের পক্ষ থেকে গোপনে রাতারাতি এই ভাইরাস মারার জন্য বাতাসে কোনও ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে?

অনেক জায়গাতেই এই বার্তাটিকে কেন্দ্রীয় বা রাজ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে প্রচারিত বার্তা বলেও দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু, যাচাই করে দেখা গিয়েছে এই দাবিটি সর্বৈব মিথ্যা। চণ্ডীগড়, বেঙ্গালুরু বা অন্য কোনও শহরেই বাসিন্দাদের জন্য এমন কোনও সরকারী নির্দেশ জারি করা হয়নি। তাছাড়া সরকার-এর পক্ষ থেকে গোপনেও এমন কোনও রাসায়নিক বাতাসে স্প্রে করা হচ্ছে না। তা সত্ত্বেও বার্তাটি ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল।

সরকারি নীতি এবং প্রকল্প সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রচার রোধ করার উদ্দেশ্যে তৈরি 'পিআইবি ফ্যাক্ট চেক'-ও তাদের টুইটার হ্যান্ডেল এই ভাইরাল বার্তাটিকে ভুয়ো বলে জানিয়েছে। তারা সাফ জানিয়েছে, 'করোনাভাইরাস প্রাদদুর্ভাবের মধ্যে, বিমানের মাধ্যমে সিভি ভ্যাকসিন গ্যাস ছড়িয়ে দেওয়া নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। ভারত সরকার এ জাতীয় কোনও পদক্ষেপের পরিকল্পনা করেনি'।

বস্তুত, করোনাভাইরাস নিরাময়ের জন্য বিমানে করে ভ্যাকসিন গ্যাস ছড়ানোর কোনও পরিকল্পনা ভারত সরকারের পক্ষে করা সম্ভবও নয়। কারণ এ জাতীয় কোনও ভ্যাকসিন এখনও বিশ্বের কোথাও তৈরি করা যায়নি। সব দেশের গবেষকরাই বলেছেন এই রোগের প্রতিরোধক টিকা বা ওষুধ বের করতে করতে অন্তত বছর দুয়েক লাগবেই। আমেরিকায় অবশ্য এরমধ্যেই একটি ওষুধের হিউম্যান ট্রায়াল হয়ে গিয়েছে। তবে সেই পরীক্ষা যদি সফলও হয়, তাহলেও বাজারে সেই ওষুধ আসতে আরও দেড় বছর অন্তত লাগবেই।

তাছাড়া, করোনাভাইরাস এয়ারবোর্ন নয়, অর্থাৎ বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় না। এখনও অবধি এই ভাইরাসটি সম্পর্কে যা জানা গিয়েছে, তাতে বলা হচ্ছে, ভাইরাসটি একমাত্র মানুষের মুখ নিঃসৃত লালারস মারফতই ছড়ায়। স্পর্শ এড়াতে বলা হচ্ছে, কারণ মানুষের হাতের ত্বকে এই ভাইরাস আটকে থাকে। সেই হাত মুখ, নাক বা চোখে দিলেই সংক্রমণ। কাজেই প্রতিশেধক তৈরি হলেও তা বিমানের মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে এই ভাইরাসকে পরাজিত করার সম্ভাবনা বেশ কম।

পশ্চিমবঙ্গে সোমবার বিকাল থেকেই লকডাউন প্রোটোকল জারি করা হচ্ছে। এরমধ্যে, এই ধরণের বার্তা সোশ্য়াল মিডিয়ায় আসার সম্ভাবনা প্রবল। এই ধরণের গুজব থেকে দূরে থাকাই ভালো। সরকারের পক্ষ থেকেও কিন্তু, গুজব রটনাকারীদের বিপক্ষে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

 

Share this article
click me!