দেশের টিকাদান কর্মসূচিতে এইচপিভি ভ্যাকসিন অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
ভারতে প্রতিবছর বহু মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হন। সেইসব আক্রান্তদের মধ্যে জরায়ু মুখের ক্যানসার মহিলাদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাধারণ ক্যানসার। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস এই জরায়ু মুখ ক্যান্সারের জন্য দায়ী। এই ভাইরাসটি অন্য ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। তার মধ্যে রয়েছে পেনাইল ক্যানসার, মলদ্বারের ক্যানসার এবং অরোফ্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সার। অরোফ্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সার গলার পিছনের অংশ অরোফ্যারিংসে হয়। এই অবস্থায় একটি টিকা নিয়ে সবকটি ক্যানসারের ঝুঁকি কমানো যায়, এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
এক্ষেত্রে যে ভ্যাকসিনটি কার্যকরী তা হল, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ভ্যাকসিন। এই ভ্যাকসিন নির্দিষ্ট ধরণের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসই সারভাইক্যাল ক্যানসারের সব থেকে বড় ঝুঁকি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস সংক্রমণ শুধুমাত্র জরায়ুর ক্যান্সারই নয়, পেনাইল ক্যান্সার, মলদ্বারের ক্যানসার এবং অরোফ্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সারের জন্যও দায়ী। এই পরিস্থিতিতে কেউ যদি এই ভ্যাকসিন নেন, তাহলে তিনি চারটি ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারবেন। এব্যাপারে বিদেশে গবেষণার ফলাফল সামনে রয়েছে।
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্ট্র্যাথক্লাইডের সহযোগিতায় স্কটল্যান্ডের পাবলিক হেলথের গবেষণায় দেখা গিয়েছে এইচপিভি ভ্যাকসিন সার্ভাইকাল ক্যান্সারের প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরী। ২০০৮ সাল থেকে স্কটল্যান্ডে ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী বালিকাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল। এখন তাঁদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তাঁদের বর্তমান পরিস্থিতি যাচাই করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে বর্তমানে এইসব মহিলাদের কারও মধ্যেই একটিও ভাইরাস সংক্রমণ দেখা যায়নি। এই গবেষণায় ১০০ শতাংশ ইতিবাচক ফল পাওয়া গিয়েছে।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ২০১৬ সালে ক্যান্সার দিবসে সার্ভাইকাল ক্যান্সারের জন্য এইচপিভি ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়। সার্ভাইকাল ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রথম দেশীয় ভ্যাকসিন সার্বাভ্যাকের দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। যা বেসরকারি সব হাসপাতালে পাওয়া যায়। সিরাম ইনস্টিটিউট এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। যা ভারতের ড্রাগ কন্ট্রোল অনুমোদন দিয়েছে। এই একই ক্যান্সার প্রতিরোধে দেশে পাওয়া যায় এমন বিদেশি ভ্যাকসিনের দাম দুহাজার থেকে চার হাজার টাকা।
তাঁদের মতে, প্রত্যেকের জন্য এই ভ্যাকসিন নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এটি মারণ রোগ থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। তবে ভ্যাকসিন নিলেও সময়ে সময়ে স্ক্রিনিংও প্রয়োজন। কারণ ভ্যাকসিন সব ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে না। তবে দেশের টিকাদান কর্মসূচিতে এইচপিভি ভ্যাকসিন অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।