আবারও উঠে এল গোমূত্র তত্ত্ব। এবার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সারাতে গোমূত্রকেই ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করার নিদান দিল হিন্দু মহাসভার কর্মীরা। করোনা আতঙ্কের মধ্যেই রাজধানী দিল্লিতে গোমূত্র পার্টি আয়োজন করেছিলেন সংগঠনের প্রধান স্বামী চক্রপানি মহারাজ। শনিবার দিল্লির সেই গোমূত্র পার্টিতে তিনিও উপস্থিত ছিলেন স্বমহিমায়। সঙ্গে ছিলেন সংগঠনের বাকি সদস্যরাও। সকেলই এক ভাঁড় করে গোমূত্র পান করেন।
সংগঠনের উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল করোনাসূর। সেখানে রাবণের মত দেখতে একটি পোস্টার ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুখের জায়গা ছিল করোনার জীবানুর ছবি। বিশ্ব কাঁপানো সেই করোনার জীবানুকে ধ্বংস করতে রীতিমত কালঘাম ছুটছে বিজ্ঞানীতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিন, এমন কি ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশের বিজ্ঞানীরা বর্তমানে করোনার প্রতিশেধকের সন্ধানে রয়েছেন। সেখানে এদিন হিন্দু মহাসভার পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল তারা গত ২১ বছর ধরেই গোমূত্র নিয়মিত পান করছেন। আর স্নানের সময় ব্যবহার করছেন গোবর। তাই তাঁরা সুস্থ রয়েছেন। সরাসরি না বললেন ঘরিয়ে আশ্বাস দেওয়া হল করোনা রুখতে গোমূত্র পান জরুরি। একই সঙ্গে তাঁরা বলেছেন বিদেশী ওষুধ বর্জন করতেই এই পদক্ষেপ বলেও সংগঠেনর পক্ষ থেকে জানান হয়েছে। এদিনের এই অনুষ্ঠানে প্রায় সংগঠনের প্রায় ২০০ জন সদস্য অংশ নিয়েছিলেন। তাঁরা সবাই প্রকাশ্যে গোমূত্র পান করেন। কাউন্টার থেকে গোমূত্র বিলির ব্যবস্থাও করা হয়েছিল।
তবে করোনা সংক্রমণ যখন দেশে ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছে তখন এই জাতীয় অনুষ্ঠানের তীব্র বিরোধিতা করেছেন সচেতন বিজ্ঞান মনস্ক মানুষ। তাঁদের কথায় সাধারণ মানুষকে সচেতন না করে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে কুসস্কারের দিকে।
তবে এর আগেও সংঘ ঘনিষ্ঠ নেতা নেত্রীদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ভাষণের সাক্ষী থেকেছে গোটা দেশ। কেরলে বন্যার সময় এই চক্রপানি মহারাজই বলেছিলেন গোহত্যার জন্যই কেরলে প্রকৃতি তাণ্ডব দেখিয়েছে। সংঘ ঘনিষ্ঠ এক সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর বলেছিলেন, গোমূত্রে সেরে গেছে তাঁর ক্যান্সার। দেশে করোনা উদ্বেগ শুরুর দিকেই অসমের এক বিধায়ক জানিয়েছিলেন, করোনা থেকে মুক্তি পেতে গোমূত্র পান করা জরুরি। বাংলার সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন প্রসাদ খেয়েই ভালো আছেন তিনি। বাড়িতে তৈরি মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। সচেতন মানুষের মতে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মন্তব্য না থামানো গেলে বিপদ আরও বাড়বে। কারণ করোনা রোখার প্রথম শর্তই হল পরিচ্ছন্ন থাকা।
বর্তমানে এই দেশে ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছে করোনা। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮৫। মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাকে আন্তর্জাতিক মহামারী আখ্যা দিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়়িয়েছে। যারমধ্যে চিনেই মৃত্যু হয়েছে তিন হাজারের বেশি মানুষের। আক্রান্তের সংখ্য ১৩৮,০০০ ।