১১ বছর আগে ২০০৮ সালের ২২শে অক্টোবর চাঁদের পথে পাড়ি দিয়েছিল 'চন্দ্রায়ণ'। যদিও, 'চন্দ্রায়ণ ' চাঁদের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করেছিল, সেখানে অবতরণ করেনি। 'চন্দ্রায়ণ ২' এবার অবতরণ করতে চলেছে চাঁদের বুকে। এই অভিযান সফল হলে ভারত বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসাবে নজির গড়বে। এর আগে আমেরিকা, রাশিয়া ও চিন এই নজির গড়েছে। এই দেশগুলি চাঁদের বুকে মহাকাশযান অবতরণ করিয়েছে। তবে, ভারত এবার চাঁদের বুকে মহাকাশযান নামানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও একটি নজির গড়ছে। আর সেটি হল 'চন্দ্রায়ণ ২'-কে ইসরো অবতরণ করাচ্ছে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। এর আগে কোনও মহাকাশ যান দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করেনি।
'চন্দ্রায়ণ ২'-এর অরবিটার, ল্যান্ডার, এবং রোভার এর মত সমস্ত যন্ত্রপাতির পরিকল্পনা থেকে শুরু করে, তৈরি সমস্তটাই হয়েছে ভারতে। ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান এ এস কিরণ কুমার জানিয়েছেন- 'দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি একটা জায়গায় অবতরণ করবে চন্দ্রায়ন ২। যেখানে এখনও পর্যন্ত কেউ পৌঁছতে পারেনি। যখন কোনও নতুন জায়গায় যাওয়া হয় তখনি সেখান থেকে নতুন কিছু আবিস্কার হয়। এবার আমরা এমনি একটা জায়গায় যাচ্ছি যেখানে আগে কেউ যায়নি।'
আগে চিন থেকে শুরু করে রাশিয়া- চাঁদের উত্তর মেরুতে মহাকাশযানকে অবতরণ করিয়েছে। আমেরিকা তাদের মহাকাশযানগুলিকে অবতরণ করিয়েছে ইক্যুইটোরাল বা অক্ষরেখা অঞ্চলে। নাসা-র অ্যাপোলো মিশন যখন হয়েছিল তখনও দেখা গিয়েছে চাঁদের ইক্যুইটোরাল অঞ্চলে অবতরণ করতে।
'চন্দ্রায়ণ ২' একটি অত্যন্ত শক্তিশালী একটি চন্দ্রযান। এতে শক্তিশালী রকেট লঞ্চার জি এস এল ভি- এম কে ৩, ২.৪ টনের একটি অরবিটার বহন করছে যা ১বছর -এর কাছাকাছি কাজ করার ক্ষমতা রাখে। 'চন্দ্রায়ণ ২' যেখানে অবতরণ সেখানে গিয়ে তার কাজ হবে জলের অস্তিত্ব সন্ধান। অবতরণের পরেই 'চন্দ্রায়ণ ২'-এর রোভার চাঁদের মাটির বিভিন্ন রাসায়নিক পরীক্ষা করবে। ল্যান্ডার চাঁদের ভূমির কম্পনমাত্রা খতিয়ে দেখার সঙ্গে সঙ্গে ভূগর্ভের গঠনবৈচিত্র্য জানতে গর্ত খুঁড়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা চালাবে। জলের অস্তিত্ব খোঁজার সঙ্গে সঙ্গে 'চন্দ্রায়ণ ২'-এর কাজ হবে চাঁদে প্রাণের বাসযোগ্য পরিস্থিতি খতিয়ে দেখা। ২০২২ সালের মধ্যে মানুষ-সহ চন্দ্রযান-কে চাঁদে পাঠানোর জন্য জোর সওয়াল করেছেন নরেন্দ্র মোদী। সেই সঙ্গে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো একটি স্বল্পব্যায়ের মডেলও গড়ে তুলতে চাইছে। এতে মহাকাশ গবেষণায় আরও বেশি করে কাজ করা যাবে বলে মনে করছে ইসরো। এই কারণে মহাকাশযানের সঙ্গে পর্যটকদেরও মহাকাশ পাঠানোর পরিকল্পনাকে কার্যকর করতে চাইছে তারা। মনে করা হচ্ছে 'চন্দ্রায়ণ ২'-এর অভিযানে সাফল্য এলে ২০২২-এর লক্ষে পরিকল্পনা একটা দিশা পাবে।