সরকারি বনজ ও প্রাণীজ সম্পদ দফতর ঘোষণা করেছিল যে ভারতের বুক থেকে চিতার অবলুপ্তি হয়েছে। তাই ৭০ বছর পর ভারতের বুকে চিতা-র অস্তিত্ব তৈরি করা নিয়ে তৎপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভারতের বুকে চিতা-র অস্তিত্ব তৈরি করা নিয়ে তৎপর হয়েছিলেন। এই নিয়ে বেশ কয়েক বছর ধরেই গবেষণা চলছিল। কোনওভাবে আফ্রিকা থেকে চিতা এনে ভারতের জঙ্গলে ছাড়লে কেমন হয়! একটা সময় ভারতের বিভিন্ন জঙ্গলে চিতার দেখা পাওয়া যেত। কিন্তু লাগাতার শিকারিদের শিকার করা এবং প্রাকৃতিক কারণে ভারতের বুকে চিতা অবলুপ্তির পথে চলে যায়। ৭০ বছর আগে শেষবার ভারতের বুকে সরকারি দস্তাবেজ অনুযায়ী চিতা দেখা গিয়েছিল। এরপর আর কখনও চিতার দেখা পাওয়া যায়নি। সরকারি বনজ ও প্রাণীজ সম্পদ দফতরও ঘোষণা করেছিল যে ভারতের বুক থেকে চিতার অবলুপ্তি হয়েছে। তাই ৭০ বছর পর ভারতের বুকে চিতা এনে এবং তাদের জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে এক অসাধ্য সাধনের পথে এগোল ভারত সরকার।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ভারতের প্রাণীসম্পদ ও বনজ সম্পদ বিকাশের এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞমহল। ৭০ বছর পর এই বিরল ঘটনার সাক্ষি হতে পেরে আপ্লুত কুনো জাতীয় উদ্যানের বনবিভাগের কর্মীরা। তারা ইতিমধ্যেই চিতা দেখভালের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেছেন। চিতার আচার আচরণ সম্পর্কে অবহিত হওয়ার সাথে সাথে তারা চিতা বাঘের বিভিন্ন চরিত্রগত বৈশিষ্টগুলো নিয়েও রীতিমতো গবেষণা করেছেন।
আসুন জেনে নেওয়া যাক চিতা বাঘের সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য
চিতাবাঘ ৩ সেকেন্ডের মধ্যে ১০০ মিটার অতিক্রম করতে পারে। তাই পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুততম প্রাণীর তকমা পেয়েছে চিতাবাঘ। চিতাবাঘের এই দ্রুততাই তার চরিত্রের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট। কিন্তু এরা নিজেদের এই দ্রুততাকে ৩০ সেকেন্ডের বেশি ধরে রাখতে পারে না।
দিল্লির একজন ওয়াইল্ড লাইফ সাংবাদিক কবির সুজয় জানিয়েছেন , চিতা যখন তার দ্রুততম স্পীডে পৌঁছয় তখন সে চায় ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই তার সব কাজ করে ফেলতে। সেটা কাউকে আক্রমণ করা ফেলা হোক বা শিকার করা। যদি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে তার উদ্দিষ্ট লক্ষ্য সফল না হয় তাহলে সে হাল ছেড়ে দেয়। তবে চিতা তার টার্গেট মিস করেছে এরকম সচরাচর খুব একটা দেখতে পাওয়া যায় না।
তবে চিতা শিকার করলেও সেই শিকার করা মাংস খেয়ে নেয় বন্য কুকুর আর হায়না। কারণ চিতা শকুনকে খুব ভয় পায়। কোনো অঞ্চলের আকাশে শকুনকে ঘোরা ফেরা করতে দেখলে চিতা দ্রুত ত্যাগ করে সেই স্থান। কাজেই শিকারের পর শিকার করা মাংসের গন্ধে সেই জায়গায় যদি শকুন চলে আসে তাহলে চিতার ভাগ্যে আর জোটেনা খাবার। শকুন খেয়ে নেয় অর্ধেকটা আর পরে থাকা বাকি অংশটা জোটে বন্য কুকুর আর হায়নার কপালে।
চিতার শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলির চেয়ে তার হৃদয়টি একটু বেশিই বড়ো হয় যাতে তারা অতিরিক্ত অক্সিজেন ধারণ করতে পারে। দৌড়োনোর সময় চিতাবাঘের বিশেষভাবে তৈরী এই হৃদয়টি অক্সিজেন পাম্প করে দ্রুত সেই অক্সিজেন রক্তে সরবরাহ করে।
চিতার পায়ে থাকে একটি বিশেষ ধরণের প্যাড যা অন্যান্য বিড়ালগোত্রীয় প্রাণীদের পায়ের প্যাডের মতো পুরোপুরি গোলাকৃতি হয় না। এগুলি, চিতা যখন দ্রুত গতিতে দৌড়োয় তখন প্রবল ঘর্ষণের হাত থেকে তার পায়ের নিচের অংশগুলিকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। আর পা গুলো হয় অত্যন্ত সরু সরু যা তাকে এক লাফে অনেক দূর অতিক্রম করতে সাহায্য করে।
চিতাবাঘের মেরুদন্ডটি অত্যন্ত নমনীয় হয় । আর এদের লেজটি হয় রাবারের যেটি দৌড়োনোর সময় তাদের দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ছেলে চিতার জঙ্গলে তাদের ভাইদের সাথে একসাথে বাস করে। মাঝে মাঝে চিতারা তাদের ভাইদের সঙ্গে নিয়েই একসাথেই শিকারে বেরোয়। মেয়ে চিতার জঙ্গলে একা একাই থাকে। শুধু প্রজননের সময় বা বাচ্চা জন্ম নেওয়ার কিছু মাস পর পর্যন্ত পরিবারের সাথে কাটায়।
চিতাবাঘের প্রজনন চক্র ৯৩ দিনের হয়। এরা একসাথে ১০ থেকে ১২ টা বাচ্চা দেয়। তবে জন্মের প্রথম মাসের মধ্যেই এই বাচ্চা গুলোর বেশিরভাগই মারা যায়।
ভারতের বিভিন্ন বন্য সংরক্ষণ অঞ্চলে চিতা বাঘের বাচ্চা বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। কিন্তু তাতেও খুব একটা সুরাহা হয়নি। ভারতে চিতার সংখ্যা যেভাবে দিন দিন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। তাই ৭০ বছর পর ভারতের বুকে চিতা-র অস্তিত্ব তৈরি করা নিয়ে তৎপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।