উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে ভুটান সীমানার বিরাট অংশ জুড়ে চিনের দখলদারির ছবি।
ধীরে ধীরে সীমানা বরাবর অনিয়ন্ত্রিত দখলদারি বাড়িয়ে চলেছে শি জিনপিং-এর দেশ। ভুটানের জাকারলুং গ্রাম প্রায় পুরোপুরি কব্জা করে ফেলেছে চিন। বেমালুম তৈরি করে ফেলা হচ্ছে রাস্তা, বাড়িঘর, সেনা ছাউনি। ম্যাক্সারের নতুন স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গেছে, উত্তর ভুটানের জাকারলুং উপত্যকার বেশ কিছু অংশে গ্রাম-সহ সেনাছাউনি তৈরি করে ফেলেছে চিন। জাকারলুং বেয়ুল খেনপাজং-এর চারপাশের জমিও দখল করা শুরু হয়েছে। ওই এলাকায় অতিসক্রিয় চিনের লাল ফৌজ।
জাকারলুং উপত্যকার আশপাশের অঞ্চল ২০২১ সালেও ফাঁকা ছিল। কিন্তু এখন সেখানে নতুন করে চিনা সেনার সক্রিয়তা দেখা গেছে। জাকারলুং-সহ একাধিক বিতর্কিত এলাকার মর্যাদা প্রসঙ্গে ১৯৯৮ সালে চিন ও ভুটানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেখানে ভুটানের জমিতে হস্তক্ষেপ না করতে রাজি হয় বেজিং। কিন্তু সম্প্রতি সেই চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে বলেই অভিযোগ। তা ছাড়া, জাকারলুং বেয়ুল খেনপাজং অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সূত্রে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে ভুটানের মানুষদের কাছে। আশঙ্কা, চিনা আগ্রাসনের জেরে সেই গুরুত্ব ক্রমশ হারাতে পারে অঞ্চলটি। অন্য দিকে, ভারতের পক্ষেও বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের বটে। ভুটানের উপত্যকা থেকে অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তের দূরত্ব বেশি নয়।
ম্যাক্সার স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা গেছে, জাকারলুং গ্রামে অন্তত ১২৯ খানা বড় বিল্ডিং তৈরি করেছে চিন। পাশাপাশি আরও একটি জায়গায় প্রায় ৬০-৭০টা বাড়ি তৈরি হচ্ছে। ওই গ্রামে সেনা চৌকিও বানিয়েছে চিনের বাহিনী। তৈরি হচ্ছে চওড়া রাস্তা। সেই রাস্তা ভুটান ঘুরে অরুণাচল অবধি গেছে।
ডোকলাম সংঘর্ষের পরেও ভুটানের আমু চু নদী উপত্যকায় অন্তত তিনটি গ্রাম নির্মাণ করে ফেলেছে চিন। ওই অঞ্চলের দক্ষিণে চিনের বাড়তি কোনও আগ্রাসন উদ্বেগ বাড়াতে পারে দিল্লির, কেননা শিলিগুড়ি করিডর-এর উপরে নজরদারি চালানো সহজতর হবে চিনের পক্ষে। এই করিডরের মাধ্যমেই উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির সঙ্গে ভারতের বাকি অংশের যোগাযোগ থাকে। ডোকলামে চিনের সক্রিয়তা বাড়লে উত্তর পূর্বাঞ্চলে ভারতের ভূনিরাপত্তার উপরে নিঃশ্বাস ফেলবে বেজিং।
এমনিতেই ভারতের উত্তর-পশ্চিমের রাষ্ট্রগুলি চিনের আয়ত্তে। দক্ষিণে শ্রীলঙ্কা ও মলদ্বীপেও বেজিং-এর প্রভাব ক্রমবর্ধমান। এমতাবস্থায় উত্তর-পূর্বের রাষ্ট্রটিকেও চিন করায়ত্ত করলে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে তার বড় প্রভাব পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।