কোভিড মহামারির সময়ে 'নিউ নর্মাল', বা 'নতুন স্বাভাবিক' অবস্থার কথা শোনা যাচ্ছে
লাদাখ সীমান্ত বিরোধ মেটাতে এরকমই এক প্রস্তাব দিয়েছিল চিন
কিন্তু ভারত তা ফিরিয়ে দিয়েছে
এর পিছনে বেজিং-এর অন্য উদ্দেশ্য আছে বলে মনে করা হচ্ছে
'নিউ নর্মাল', বা বাংলায় বললে 'নতুন স্বাভাবিক অবস্থা'। বর্তমানে এই কথাটা সব জায়গাতেই বেশ আলোচিত হচ্ছে। করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপে ফেস মাস্ক ব্যবহার করা, বারবার করে হাত ধোওয়া বা হাত স্যানিটাইজ করা, শারীরিক দূরত্বের বিধি মেনে চলার মতো বিষয়গুলিকেই নতুন স্বাভাবিক অবস্থা বা নিউ নর্মাল বলা হচ্ছে। পূর্ব লাদাখে ভারত-চিন সীমান্তে চলমান উত্তেজনা হ্রাস করতেও নাকি ভারত-কে চিন এমনই এক নতুন স্বাভাবিক অবস্থা মেনে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল চিনা পিএলএ। স্বাভাবিকভাবেই ভারত তা ফিরিয়ে দিয়েছে।
এর আগে ভারত একাধিকবার চিনকে পরিষ্কার করে বলেছে, পূর্ব লাদাখের সংঘর্ষের এলাকাগুলিতে ২০ এপ্রিলের আগের স্বাভাবিক অবস্থা না ফেরালে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা হবে না। তার পরেও বেজিং হাল ছাড়েনি বলেই জানিয়েছে ভারতীয় সেনার একটি সূত্র। সেনার দাবি, সীমান্ত রক্ষার্থে নয়াদিল্লি কতটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তা তারা বুঝতেই পারছে না। ভারতের চোখে চোখ রেখে তারা অপেক্ষা করছে কখন ভারতের চোখের পাতা পড়ে।
সেনাবাহিনীর ওই সূত্র জানাচ্ছে চিন বিবৃতি দিয়ে বহির্বিশ্বে দাবি করছে যে সেনা প্রত্যাহারের কাজ সম্পন্ন। তবে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক সঙ্গে সঙ্গেই তা উড়িয়ে দিয়েছে। তবে বেজিং এই প্রচার করেই চলেছে। আর তলে তলে উভয় পক্ষের সামরিক কমান্ডারদের বৈঠকে, চিনা পিএলএ ভারতীয় সেনাবাহিনীকে একটি নতুন স্বাভাবিক অবস্থা মেনে নেওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে। কি সেই প্রস্তাব? সেনাবাহিনীর এক কমান্ডার জানিয়েছেন, পিএলএ চায় যে ভারত তার বরাবরের এলাকা, যেগুলি এপ্রিল-মে মাসে চিন সেনা গোপনে দখল করেছিল, সেই এলাকাগুলি থেকে সেনা সরিয়ে নিয়ে যাক।
একই সঙ্গে তারা গোগরা পয়েন্টের নিকটবর্তী কুগ্রাং নদীর পাশের প্রথম রিজ-লাইন বা প্যাংগং হ্রদের ফিঙ্গার ৪ এলাকা-র মতো তাদের দখল করা নতুন এলাকাগুলি ধরে রাখতে চাইছে, আবার অন্যদিকে ফিঙ্গার ৩ এলাকায় ধন সিংহ থাপার ঘাঁটির মতো বরাবরের ভারতীয় সেনা ঘাঁটিগুলি থেকে ভারতীয় সেনা পিছিয়ে যাক এমনটাই চাইছে তারা। কিন্তু, ভারতও সেই বান্দা নয়। জানা গিয়েছে পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ১,৫৯৭ কিলোমিটার বরাবর ভারতীয় সেনাবাহিনী ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। এক পা পিছু হঠেনি।
কূটনৈতিক ও সামরিক কৌশল বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলে চিন এইভাবে সময় চুরি করতে চাইছে। তারা চাইছে এইভাবে চলতে চলতে ভারত সরকার কখন দেশেই রাজনৈতিক চাপে পড়ে এই উত্তেজনা হ্রাসে এগিয়ে আসে। যেমন বৃহস্পতিবারই এইরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ওয়েবসাইট থেকে ভারত-চিন সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে তথ্য সরানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছিল রাজনৈতিক বিতর্ক। এই ধরণের দুর্বলতার সুযোগ খুঁজছে চিন।