বিষ্ণুর ছিল ১০টি অবতার, আর করোনার এখনও অবধি ১১টি
এমনটাই বলছেন গবেষকরা
আর এর এগারোতম রূপটিই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর
সেটিই এখন অন্যান্য প্রকরণ-এর জায়গা দখল করছে
বিষ্ণুর ছিল ১০টি অবতার, আর করোনার এখনও অবধি ১১টি। চিনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস মহামারির খবর পাওয়ার পর প্রায় সাড়ে চার মাস অতিক্রান্ত। এই সাড়ে চারমাসে, বিশ্বের একের পর এক দেশে ছড়ায়নি সার্স-কোভ-২ বা নতুন করোনাভাইরাস, সেই সঙ্গে ক্রমাগত লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য নিজের জিনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে গিয়েছে। মানব শরীরে দখলদারি কায়েমের পর থেকে মোট ১০ বার নিজেকে পাল্টেছে এই ভাইরাস, এমনটাইদাবি গবেষকদের। আর তার ফলে এখন বিশ্বে এই নতুন করোনভাইরাসটির ১১টি অবতার বা প্রকরণ ঘুরছে।
এই নিয়ে বিষদে গবেষণা করা হয়েছে কল্যাণীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োমেডিকাল জিনোমিক্স বা এনআইবিজি-তে। গবেষক নিধন বিশ্বাস ও পার্থ মজুমদার-এর যৌথ গবেষণায় জানা গিয়েছে বর্তমানে কোভিড-১৯ এর এ২এ অবতার গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এটিই ভাইরাসটির ১১তম তথা সবচেয়ে মারাত্মক অবতার। সার্স-কোভ ভাইরাস অর্থাৎ যে ভাইরাস এক দশক আগে সার্স মহামারির সৃষ্টি করেছিল, তার থেকেও এর সংক্রমণ ক্ষমতা ও মারণ ক্ষমতা অনেক বেশি। আর এই প্রকরণটিই সমস্ত বিশ্বে বাকি প্রকরণগুলিকে সরিয়ে নিজেরা জায়গা করে নিচ্ছে।
পার্থ মজুমদার জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস পরিবারের ভাইরাসগুলিকে ও, এ২, এ২এ, এ৩, বি, বি১-সহ বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে। চিনে এই নতুন ভাইরাসটির যে প্রকরণটির উদ্ভব ঘটেছিল তাকে বলা হচ্ছে 'ও' টাইপ, এটিই ভাইরাসটির আদিমতম অবতার এবং সবচেয়ে নিরিহ। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই জাতীয় অভিয়োজনশীল ভাইরাস সংক্রমণের মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে এবং কখনও কখনও সম্পূর্ণরূপে ভাইরাসটির মূল জিনগত গঠন পাল্টে যেতে পারে। সার্স-কোভ-২'ও ঠিক সেভাবেই নিজের বিস্তার ঘটাচ্ছে।
কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কার্যকর টিকা তৈরির ক্ষেত্রে এই গবেষণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভাইরাসটি যদি নিজের জিনগত গঠন পুরো পাল্টে ফেলে, তাহলে টিকা তৈরি হলেও, তাতে কাজ নাও দিতে পারে। তবে বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন টিকা বের করতে পারলে লড়াইটা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। তবে করোনাভাইরাস একেবারে নির্মূল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। প্রতিবছর মরসুমী ফ্লু জ্বর যেমন ফিরে ফিরে আসে, করোনাও ফিরে ফিরে আসবে। তবে সেই সময় তার দাপট ওই মরসুমী ফ্লু জ্বরের মতোই থাকবে বলে মনে করছেন তাঁরা। চিন ও ব্রিটেন দুই দেশের বিজ্ঞানীদের মুখেই একই কথার প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে।
খুব শিগগিরই নিধন বিশ্বাস ও পার্থ মজুমদার-এর এই গবেষণাটি প্রকাশিত হবে ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিকেল রিসার্চে।